jugantor
রংপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাতটি ছাত্রী নিবাসে হামলা
ব্যাপক ভাংচুর লুট : লাঞ্ছনা

  রংপুর ব্যুরো  

০৪ জুন ২০১৫, ০০:০০:০০  | 

কবরস্থানের জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে বুধবার ভোররাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অবাঙালি অধ্যুষিত সুলতাননগরে ব্যক্তি মালিকানাধীন নূরানী নামের ৭টি ছাত্রী নিবাসে দুই শতাধিক লোক হামলা চালিয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ১০ ছাত্রী আহত ও ৬ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছেন। হামলাকারীরা ছাত্রীদের বইপত্র ও শিক্ষাসামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে যারা পরীক্ষার্থী তারা বিপাকে পড়েছেন। আতংকিত ছাত্রীরা অনেকে নিরাপত্তার অভাবে ছাত্রী নিবাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বুধবার ভোর রাতে রংপুর নগরীর রেল স্টেশন সংলগ্ন কেডিসি রোডস্থ ব্যক্তি মালিকানাধীন নূরানী নামের ৭টি ছাত্রী নিবাসে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে নামাজ ও দোয়া মাহফিল শেষে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ভোর সাড়ে ৫টার সময় লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ঘটনার সময় ছাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। অতর্কিত হামলার ফলে তারা আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। হামলাকারীরা ছাত্রী নিবাসগুলোর দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে এবং ছাত্রীদের কক্ষে প্রবেশ করে। এমনটি যারা ভয়ে বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেগুলোর দরজাও ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় প্রায় ২০টি কক্ষ হামলাকারীরা তছনছ করে। তারা বাইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ তছনছ করে এবং আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ভোর রাতের ওই নারকীয় হামলাকালে অসহায় ছাত্রীদের আর্তচিৎকার সত্ত্বেও কেউ তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যেতে সাহস পায়নি। এ ঘটনায় ১০ জন ছাত্রী আহত ও ৬ জন লাঞ্ছিত হন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এ নিয়ে ছাত্রী নিবাসের মালিকপক্ষ ও ছাত্রীরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। ছাত্রী নিবাসগুলোর ২৫টি কক্ষ থেকে ছাত্রীদের জামা-কাপড় ও বইপত্রসহ অন্য মালামাল লুট হয়েছে বলে ছাত্রীরা জানান। ছাত্রী নিবাসের দায়িত্বে থাকা মালিকপক্ষের লোক আবদুল হাকিম বলেন, হামলার সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ছাত্রীদের কান্নাকাটি ও চিৎকারে ঘুম ভাঙলে দেখতে পাই দু’শতাধিক সশস্ত্র লোক যাদের অধিকাংশ অবাঙালি তারা আমাদের ৭ ভাইয়ের মালিকানাধীন ৭টি ছাত্রী নিবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। এ সময় তারা কয়েকটি ছাত্রী নিবাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছ্ন্নি করে দেয়।

ছাত্রী নিবাসের সুমাইয়া আমানত শর্মী, সুফিয়া আকতার ও সঙ্গীতা সাহা যুগান্তরকে জানান, ঘটনার সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন তাদের ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে একদল সশস্ত্র যুবক। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা। এ সময় তারা আর্তচিৎকার করতে থাকেন। ভয়ে সবাই করিডোরে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ওই নারকীয় তাণ্ডব চলে। তবে হামলাকারীরা তাদের প্রধান গেট ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তারা রক্ষা পান। ওই ৭টি ছাত্রী নিবাসের অপর মালিক নুরুল ইসলাম খোকা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। ছাত্রীদের কান্নাকাটি শুনে ছুটে এসে দেখতে পান সশস্ত্র অবাঙালি হামলাকারীরা তাদের মালিকানাধীন নূরানী হোটেলসহ ৭টি ছাত্রী নিবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তিনি বলেন, সুলতাননগর জামে মসজিদ কমিটির সঙ্গে কবরস্থানের জমি নিয়ে অনেক দিন থেকে তাদের বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনার জের ধরে ওই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা নামাজ শেষে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ওই হামলা চালায়।

সুলতাননগর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, অনেক দিন ধরে নূরানী ছাত্রী নিবাসের মালিকপক্ষকে অভিযোগ করা হয় যে তাদের ছাত্রী নিবাসের ‘ময়লা পানি’ কবরস্থানের ভেতরে আসে। সেখানে ওই পনি জমে থাকে। রেলওয়ের জায়গা নিয়ে ওই ছাত্রী নিবাস নির্মাণ করেছেন বলে তিনি জানান। মসজিদ ও কবরস্থানটি রেলওয়ের জায়গায় স্থাপিত। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে এলাকাবাসী ওই হামলা চালায়। ৫টি মহল্লার দুই শতাধিক বিক্ষুব্ধ লোক ওই হামলা চালায় বলে তিনি স্বীকার করেন। রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। মালিকপক্ষ মামলা করলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



সাবমিট

রংপুরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাতটি ছাত্রী নিবাসে হামলা

ব্যাপক ভাংচুর লুট : লাঞ্ছনা
 রংপুর ব্যুরো 
০৪ জুন ২০১৫, ১২:০০ এএম  | 
কবরস্থানের জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে বুধবার ভোররাতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অবাঙালি অধ্যুষিত সুলতাননগরে ব্যক্তি মালিকানাধীন নূরানী নামের ৭টি ছাত্রী নিবাসে দুই শতাধিক লোক হামলা চালিয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ১০ ছাত্রী আহত ও ৬ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছেন। হামলাকারীরা ছাত্রীদের বইপত্র ও শিক্ষাসামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে যারা পরীক্ষার্থী তারা বিপাকে পড়েছেন। আতংকিত ছাত্রীরা অনেকে নিরাপত্তার অভাবে ছাত্রী নিবাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বুধবার ভোর রাতে রংপুর নগরীর রেল স্টেশন সংলগ্ন কেডিসি রোডস্থ ব্যক্তি মালিকানাধীন নূরানী নামের ৭টি ছাত্রী নিবাসে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে নামাজ ও দোয়া মাহফিল শেষে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ভোর সাড়ে ৫টার সময় লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ঘটনার সময় ছাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। অতর্কিত হামলার ফলে তারা আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। হামলাকারীরা ছাত্রী নিবাসগুলোর দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে এবং ছাত্রীদের কক্ষে প্রবেশ করে। এমনটি যারা ভয়ে বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেগুলোর দরজাও ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় প্রায় ২০টি কক্ষ হামলাকারীরা তছনছ করে। তারা বাইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ তছনছ করে এবং আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ভোর রাতের ওই নারকীয় হামলাকালে অসহায় ছাত্রীদের আর্তচিৎকার সত্ত্বেও কেউ তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যেতে সাহস পায়নি। এ ঘটনায় ১০ জন ছাত্রী আহত ও ৬ জন লাঞ্ছিত হন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এ নিয়ে ছাত্রী নিবাসের মালিকপক্ষ ও ছাত্রীরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। ছাত্রী নিবাসগুলোর ২৫টি কক্ষ থেকে ছাত্রীদের জামা-কাপড় ও বইপত্রসহ অন্য মালামাল লুট হয়েছে বলে ছাত্রীরা জানান। ছাত্রী নিবাসের দায়িত্বে থাকা মালিকপক্ষের লোক আবদুল হাকিম বলেন, হামলার সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ছাত্রীদের কান্নাকাটি ও চিৎকারে ঘুম ভাঙলে দেখতে পাই দু’শতাধিক সশস্ত্র লোক যাদের অধিকাংশ অবাঙালি তারা আমাদের ৭ ভাইয়ের মালিকানাধীন ৭টি ছাত্রী নিবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। এ সময় তারা কয়েকটি ছাত্রী নিবাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছ্ন্নি করে দেয়।

ছাত্রী নিবাসের সুমাইয়া আমানত শর্মী, সুফিয়া আকতার ও সঙ্গীতা সাহা যুগান্তরকে জানান, ঘটনার সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন তাদের ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে একদল সশস্ত্র যুবক। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা। এ সময় তারা আর্তচিৎকার করতে থাকেন। ভয়ে সবাই করিডোরে গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ওই নারকীয় তাণ্ডব চলে। তবে হামলাকারীরা তাদের প্রধান গেট ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তারা রক্ষা পান। ওই ৭টি ছাত্রী নিবাসের অপর মালিক নুরুল ইসলাম খোকা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। ছাত্রীদের কান্নাকাটি শুনে ছুটে এসে দেখতে পান সশস্ত্র অবাঙালি হামলাকারীরা তাদের মালিকানাধীন নূরানী হোটেলসহ ৭টি ছাত্রী নিবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তিনি বলেন, সুলতাননগর জামে মসজিদ কমিটির সঙ্গে কবরস্থানের জমি নিয়ে অনেক দিন থেকে তাদের বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনার জের ধরে ওই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা নামাজ শেষে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ওই হামলা চালায়।

সুলতাননগর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, অনেক দিন ধরে নূরানী ছাত্রী নিবাসের মালিকপক্ষকে অভিযোগ করা হয় যে তাদের ছাত্রী নিবাসের ‘ময়লা পানি’ কবরস্থানের ভেতরে আসে। সেখানে ওই পনি জমে থাকে। রেলওয়ের জায়গা নিয়ে ওই ছাত্রী নিবাস নির্মাণ করেছেন বলে তিনি জানান। মসজিদ ও কবরস্থানটি রেলওয়ের জায়গায় স্থাপিত। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে এলাকাবাসী ওই হামলা চালায়। ৫টি মহল্লার দুই শতাধিক বিক্ষুব্ধ লোক ওই হামলা চালায় বলে তিনি স্বীকার করেন। রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। মালিকপক্ষ মামলা করলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র