দুশ্চিন্তামুক্ত হইলাম...
নশ্বরতাকে অতিক্রম করার অভিলাষ মানুষের শাশ্বত। এ বাসনাই তাকে তাড়িত করে নিজের মৃতদেহ মমি বানিয়ে সংরক্ষণ করতে, তাজমহল গড়তে কিংবা শ্বেতপাথরে নাম উৎকীর্ণ করতে।
যে ইংরেজ কবি তার ‘সুখী মানুষ’ কবিতায় বলেছিলেন, মৃত্যুর পর আমার কবর এমনভাবে ঘাসে ছেয়ে যাক; যাতে সেটিকে আর কবর বলে মনে না হয়। কবি সঠিক বলেননি। সঠিক কথা হচ্ছেÑআমরা চাই, সারাক্ষণ আমাদের নাম আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হোক; গাছের পাতায় পাতায় লেখা থাক। তবেই না আমার সুখ। তবেই না আমি সুখী মানুষ।
এ জাতীয় সুখে যারা সুখী হতে চায়, জগৎ সংসারে তাদের সংখ্যা প্রচুর। এদের মধ্যে আমাদের একজন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ও রয়েছেন। সকালবেলা দপ্তরে যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে নিজের নামে একটা ব্যানার টাঙানো দেখে তিনি সুখ অনুভব করলেন। তবে তার এ সুখ অধিক সময় স্থায়ী হলো না। তিনি বিষাদগ্রস্ত হলেন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীকে একজনের ফোনে সংযোগ স্থাপন করতে বললেন। সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পর মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে তিনি বললেনÑ
: হ্যালো বইদ্যা।
: বলেন লিডার।
: রাস্তা সংস্কার করলাম আমি; অভিনন্দন জানাইল এলাকাবাসী এবং বিষয়টারে সৌজন্য হিসাবে প্রকাশ করলা তুমি।
: জি লিডার। তবে এইখানে...
: এইখানে কী?
: অব দ্যা রেকর্ড লিডার। এলাকাবাসী অভিনন্দনের ধারে-কাছেও নেই। ‘অভিনন্দন : এলাকাবাসী’ এ শব্দ দুইটা আমি ব্যবহার করছি আপনের এলাকায় তুমুল জনপ্রিয় নেতা হিসাবে ফোকাস করার জন্য।
: ফোকাস আমি হইছি; না তুমি হইছ?
: বুঝলাম না।
: ব্যানারে আমার ছবির তুলনায় তোমার ছবি তিনগুণ বড়।
: এই কথা! লিডার, আমার তো ছবিই সম্বল। নাম দিয়া আমারে কয়জনে চিনে? কিন্তু আপনের তো এ সমস্যা নেই। আকাশ-বাতাস ছাপাইয়া সবাই আপনারে এক নামে চিনে।
: বুঝছি। রাখো, ফোন রাখো।
সংযোগ বন্ধ করে প্রতিমন্ত্রী মহোদয় মোবাইল ফোন ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে হস্তান্তর করলেন। বদির কথায় মারাÍক রকমের তেলের গন্ধ আছে, তারপরও আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে ‘এক নামে সবাই চিনে’ শব্দগুলো শোনার পর থেকে তিনি যথার্থই সুখ অনুভব করছেন। দু’চোখ বন্ধ করে সুখের পারদটাকে যখন তিনি দুই আঙুলের চিপায় ধরার চেষ্টা করছিলেন, তখন ব্যক্তিগত সহকারী বললÑ
: স্যার, ব্যানারটা ঠিক জায়গায় টাঙানো হয় নাই।
: মানে?
: স্যার, যে জায়গায় ব্যানার টাঙানো হইছে, ঠিক তার নিচেই রাস্তার মাঝখানে একটা গর্ত সৃষ্টি হইছে।
: তাই নাকি? চোখে পড়ল না তো!
: স্যার, কেমনে চোখে পড়ব? আপনার দৃষ্টি তো ছিল ওপরের দিকে।
: ওপরের দিকে? হুম। ঠিকই বলছ। আমাদের লেবেলে পৌঁছার পর মানুষ আসলে মানুষ থাকে না। চাতক পাখি হইয়া যায়। সবসময় চোখ থাকে ওপরের দিকে। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারতেছি না।
: কী বিষয় স্যার?
: কেমন খাওয়া খাইছে, দুই মাসেই রাস্তার মাঝখানে গর্ত হইয়া গেল?
: খাইছে স্যার ফুলপেট। তবে এ দেশে গলা পর্যন্ত খাওয়ার নজিরও আছে।
: তাই নাকি?
: জি স্যার।
: কী রকম?
: এই রাস্তা তো তবুও দুই মাস লাস্টিং করছে। অনেক স্থাপনা, বিশেষ কইরা ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, আগের দিন উদ্বোধন, পরের দিন ভাঙন।
: উদাহরণ তাইলে আছে? যাক, দুঃশ্চিন্তামুক্ত হইলাম।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রম্যগল্প
দুশ্চিন্তামুক্ত হইলাম...
নশ্বরতাকে অতিক্রম করার অভিলাষ মানুষের শাশ্বত। এ বাসনাই তাকে তাড়িত করে নিজের মৃতদেহ মমি বানিয়ে সংরক্ষণ করতে, তাজমহল গড়তে কিংবা শ্বেতপাথরে নাম উৎকীর্ণ করতে।
যে ইংরেজ কবি তার ‘সুখী মানুষ’ কবিতায় বলেছিলেন, মৃত্যুর পর আমার কবর এমনভাবে ঘাসে ছেয়ে যাক; যাতে সেটিকে আর কবর বলে মনে না হয়। কবি সঠিক বলেননি। সঠিক কথা হচ্ছেÑআমরা চাই, সারাক্ষণ আমাদের নাম আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হোক; গাছের পাতায় পাতায় লেখা থাক। তবেই না আমার সুখ। তবেই না আমি সুখী মানুষ।
এ জাতীয় সুখে যারা সুখী হতে চায়, জগৎ সংসারে তাদের সংখ্যা প্রচুর। এদের মধ্যে আমাদের একজন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ও রয়েছেন। সকালবেলা দপ্তরে যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে নিজের নামে একটা ব্যানার টাঙানো দেখে তিনি সুখ অনুভব করলেন। তবে তার এ সুখ অধিক সময় স্থায়ী হলো না। তিনি বিষাদগ্রস্ত হলেন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারীকে একজনের ফোনে সংযোগ স্থাপন করতে বললেন। সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পর মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে তিনি বললেনÑ
: হ্যালো বইদ্যা।
: বলেন লিডার।
: রাস্তা সংস্কার করলাম আমি; অভিনন্দন জানাইল এলাকাবাসী এবং বিষয়টারে সৌজন্য হিসাবে প্রকাশ করলা তুমি।
: জি লিডার। তবে এইখানে...
: এইখানে কী?
: অব দ্যা রেকর্ড লিডার। এলাকাবাসী অভিনন্দনের ধারে-কাছেও নেই। ‘অভিনন্দন : এলাকাবাসী’ এ শব্দ দুইটা আমি ব্যবহার করছি আপনের এলাকায় তুমুল জনপ্রিয় নেতা হিসাবে ফোকাস করার জন্য।
: ফোকাস আমি হইছি; না তুমি হইছ?
: বুঝলাম না।
: ব্যানারে আমার ছবির তুলনায় তোমার ছবি তিনগুণ বড়।
: এই কথা! লিডার, আমার তো ছবিই সম্বল। নাম দিয়া আমারে কয়জনে চিনে? কিন্তু আপনের তো এ সমস্যা নেই। আকাশ-বাতাস ছাপাইয়া সবাই আপনারে এক নামে চিনে।
: বুঝছি। রাখো, ফোন রাখো।
সংযোগ বন্ধ করে প্রতিমন্ত্রী মহোদয় মোবাইল ফোন ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে হস্তান্তর করলেন। বদির কথায় মারাÍক রকমের তেলের গন্ধ আছে, তারপরও আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে ‘এক নামে সবাই চিনে’ শব্দগুলো শোনার পর থেকে তিনি যথার্থই সুখ অনুভব করছেন। দু’চোখ বন্ধ করে সুখের পারদটাকে যখন তিনি দুই আঙুলের চিপায় ধরার চেষ্টা করছিলেন, তখন ব্যক্তিগত সহকারী বললÑ
: স্যার, ব্যানারটা ঠিক জায়গায় টাঙানো হয় নাই।
: মানে?
: স্যার, যে জায়গায় ব্যানার টাঙানো হইছে, ঠিক তার নিচেই রাস্তার মাঝখানে একটা গর্ত সৃষ্টি হইছে।
: তাই নাকি? চোখে পড়ল না তো!
: স্যার, কেমনে চোখে পড়ব? আপনার দৃষ্টি তো ছিল ওপরের দিকে।
: ওপরের দিকে? হুম। ঠিকই বলছ। আমাদের লেবেলে পৌঁছার পর মানুষ আসলে মানুষ থাকে না। চাতক পাখি হইয়া যায়। সবসময় চোখ থাকে ওপরের দিকে। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারতেছি না।
: কী বিষয় স্যার?
: কেমন খাওয়া খাইছে, দুই মাসেই রাস্তার মাঝখানে গর্ত হইয়া গেল?
: খাইছে স্যার ফুলপেট। তবে এ দেশে গলা পর্যন্ত খাওয়ার নজিরও আছে।
: তাই নাকি?
: জি স্যার।
: কী রকম?
: এই রাস্তা তো তবুও দুই মাস লাস্টিং করছে। অনেক স্থাপনা, বিশেষ কইরা ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, আগের দিন উদ্বোধন, পরের দিন ভাঙন।
: উদাহরণ তাইলে আছে? যাক, দুঃশ্চিন্তামুক্ত হইলাম।