পাঠক রস
দাঁত নিয়ে কাত
শরীফ নানা আমার মায়ের আপন চাচা হন। পেশায় হাতুড়ে ডাক্তার। মফস্বলের কোনো এক বাজারের পাশে ডিসপেনসারি খুলে ভালোই ইনকাম করেন শুনেছি। হাতুড়ে হলেও অনেক পুরোনো ডাক্তার। রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। অনেকদিন থেকে আমার দাঁতের মাড়িতে একটু একটু যন্ত্রণা করছিল। ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মা বললেন, ‘তোর নানার কাছে একবার যা। দাঁত দেখে দেবেন।’
বলতে বলতে দেখি মা গর্বের চোখে আসমানের দিকে তাকাচ্ছেন। তার ডাক্তার চাচার ব্যাপারে ধারণা অনেক উঁচু মনে হলো। মায়ের বংশের কেউ দাঁতের ডাক্তার হয়েছে শুনিনি কখনো। মায়ের চাচাকে হাতুড়ে ডাক্তার বলেই জানি। ডাক্তার নানাকে নিয়ে আমার মায়ের গর্বের সীমা নেই। অন্তত মাকে খুশি রাখতেই গেলাম নানার চেম্বারে।
প্রতিদিনের মতো রোগীর ভিড় লেগে আছে। রোগীদের সঙ্গে একটি কাঠের টুলে বসে পড়লাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, আমি এসেছি খবর পেয়েই কর্মচারী দিয়ে পাশের ঘরে ডেকে পাঠালেন। ঘরে ঢুকে দেখি তুলকালাম কাণ্ড। একজন বয়স্ক লোক বিছানায় শোয়া, আর তার দাঁত ওঠানো নিয়ে ধস্তাধস্তি করছেন নানা।
এ অবস্থা দেখে ভীষণ বিচলিত হলাম। সেই মুহূর্তে আমার ‘সফদার ডাক্তার’ কবিতাটি মনে পড়ে গেল। মুখের ভেতর টর্চের আলো ধরে রাখার জন্য একজন সহকারী দরকার, এজন্য নানা আমাকে ডেকেছেন। আমি টর্চের আলো ফেলে নানাকে সাহায্য করলাম। অনেক ধস্তাধস্তির পর দাঁত তো তুললেন, কিন্তু রোগীর অবস্থা কেরোসিন!
আধা ঘণ্টা পর রোগী হুঁশ ফিরে পেয়ে বলল, ‘আমার খারাপ দাঁতটি তো রয়েই গেছে। ভালো দাঁতটি টেনে তুলল কে? আমি মামলা করব!’
রোগীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে নানা অত্যন্ত বিরক্তির সুরে বললেন, ‘তোকে কতবার বললাম আমার সঙ্গে কিছুদিন থেকে ডাক্তারিটা শিখে নে। দেখি তোর কোন দাঁতে ব্যথা?’
এতক্ষণ নিজের দাঁতের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। নানা জিজ্ঞেস করতেই ব্যথাটা নাড়া দিয়ে উঠল। অমনি বেরিয়ে যাবার দরজার দিকে ঘোড়ার গতিতে দৌড় লাগালাম। পেছন থেকে নানা আগের চেয়ে আরও বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘কী ছেলে রে তুই? বিনা পয়সায় দাঁতের চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছিস!’
নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
দাঁত নিয়ে কাত
পাঠক রস
জুয়েল আশরাফ
০৬ নভেম্বর ২০২২, ২২:২৭:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ
শরীফ নানা আমার মায়ের আপন চাচা হন। পেশায় হাতুড়ে ডাক্তার। মফস্বলের কোনো এক বাজারের পাশে ডিসপেনসারি খুলে ভালোই ইনকাম করেন শুনেছি। হাতুড়ে হলেও অনেক পুরোনো ডাক্তার। রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। অনেকদিন থেকে আমার দাঁতের মাড়িতে একটু একটু যন্ত্রণা করছিল। ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মা বললেন, ‘তোর নানার কাছে একবার যা। দাঁত দেখে দেবেন।’
বলতে বলতে দেখি মা গর্বের চোখে আসমানের দিকে তাকাচ্ছেন। তার ডাক্তার চাচার ব্যাপারে ধারণা অনেক উঁচু মনে হলো। মায়ের বংশের কেউ দাঁতের ডাক্তার হয়েছে শুনিনি কখনো। মায়ের চাচাকে হাতুড়ে ডাক্তার বলেই জানি। ডাক্তার নানাকে নিয়ে আমার মায়ের গর্বের সীমা নেই। অন্তত মাকে খুশি রাখতেই গেলাম নানার চেম্বারে।
প্রতিদিনের মতো রোগীর ভিড় লেগে আছে। রোগীদের সঙ্গে একটি কাঠের টুলে বসে পড়লাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, আমি এসেছি খবর পেয়েই কর্মচারী দিয়ে পাশের ঘরে ডেকে পাঠালেন। ঘরে ঢুকে দেখি তুলকালাম কাণ্ড। একজন বয়স্ক লোক বিছানায় শোয়া, আর তার দাঁত ওঠানো নিয়ে ধস্তাধস্তি করছেন নানা।
এ অবস্থা দেখে ভীষণ বিচলিত হলাম। সেই মুহূর্তে আমার ‘সফদার ডাক্তার’ কবিতাটি মনে পড়ে গেল। মুখের ভেতর টর্চের আলো ধরে রাখার জন্য একজন সহকারী দরকার, এজন্য নানা আমাকে ডেকেছেন। আমি টর্চের আলো ফেলে নানাকে সাহায্য করলাম। অনেক ধস্তাধস্তির পর দাঁত তো তুললেন, কিন্তু রোগীর অবস্থা কেরোসিন!
আধা ঘণ্টা পর রোগী হুঁশ ফিরে পেয়ে বলল, ‘আমার খারাপ দাঁতটি তো রয়েই গেছে। ভালো দাঁতটি টেনে তুলল কে? আমি মামলা করব!’
রোগীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে নানা অত্যন্ত বিরক্তির সুরে বললেন, ‘তোকে কতবার বললাম আমার সঙ্গে কিছুদিন থেকে ডাক্তারিটা শিখে নে। দেখি তোর কোন দাঁতে ব্যথা?’
এতক্ষণ নিজের দাঁতের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। নানা জিজ্ঞেস করতেই ব্যথাটা নাড়া দিয়ে উঠল। অমনি বেরিয়ে যাবার দরজার দিকে ঘোড়ার গতিতে দৌড় লাগালাম। পেছন থেকে নানা আগের চেয়ে আরও বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ‘কী ছেলে রে তুই? বিনা পয়সায় দাঁতের চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছিস!’
নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023