সুমন ভাইয়ের বউ
সুমন ভাই আমার নিকট আত্মীয়। যখন খেতে বসেন প্লেটে কাজ হয় না, গামলার দরকার হয়। গ্লাস দিয়ে পানি খেতে পারেন না, পুরো জগ ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দেন। তার বিয়ের বয়স হয়েছে। আমরা মেয়ে দেখতে গেলাম। মেয়ে পক্ষ আমার পূর্ব পরিচিত।
এর আগে কমপক্ষে বিশ জায়গায় মেয়ে পছন্দ হয়েছিল আমাদের, কিন্তু সুমন ভাইয়ের সাইজ দেখে মেয়ে পক্ষ না করে দিয়েছে। এত খেলে সাইজ তো বাড়বেই। অনেকে তো সামনেই আসে নাই। তিনি যখন গপগপ করে দশ জনের খাবার একাই সাবাড় করেন, লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে। আমরা ভাইকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেছি অথচ সে বাড়িতে খাবার শর্ট পড়ে নাই, এমন কখনো হয়নি।
এক পাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে বলল, ‘প্রয়োজনে বিষ খাবো তবু এ মুটকোকে বিয়ে করব না। ভাই, এ পাহাড় নিয়ে চলাফেরা করেন কেমনে?’
তো সেই মেয়ের বাড়িতে বিভিন্ন খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে। আমি কানে কানে বললাম, ‘ভাই, আপনি যে বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করেন, সেই বাড়ির বিয়ে ভেঙে যায়। দয়া করে এ বাড়িতে কিছু খাবেন না।’
সুমন ভাই শুকনো মুখে বললেন, ‘আচ্ছা।’
আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে বসে আছি, পাত্রীর দেখা নাই। মেয়েপক্ষ বারবার বলছে, আপনারা অপেক্ষা করেন, মেয়ে আসছে।
এদিকে সুমন ভাই খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘ভাই, মেয়ে এসে আপনাকে পছন্দ করলেই খাবার পাবেন।’
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেয়ে এলো। সুমন ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই মুখ বাঁকিয়ে ফেলল। বুঝলাম, কাজ হবে না। সুমন ভাই ঠিকই পছন্দ করে ফেললেন। ফাঁক দিয়ে পাত্রীকে দেওয়ার জন্য আমার হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দিলেন।
আমি মেয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলতে গেলাম। তার মতামত জানা দরকার। সে বলল, ‘ভাই, এ চিজ কোন জায়গা থেকে আমদানি করলেন! এর ওজন তো হাতির চেয়েও বেশি! একে তো একতলা থেকে দোতলায় উঠাতেই ক্রেন লাগবে!’
আমি বললাম, ‘তাহলে দেখা দিলেন কেন?’
‘ভাই, আমার কিছু টাকা দরকার। আগামীকাল আমার বয়ফ্রেন্ডের বার্থ ডে। আপনাদের সামনে যাওয়ার কারণে কিছু টাকা বখশিশ পেলাম। নইলে কখন ঝাঁটা মেরে বিদায় করে দিতাম!’
এরপর আর কথা চলে না। কান ধরে শপথ করলাম, জীবনে আর তার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো না। অনেক শিক্ষা হয়েছে। এরপর যে কদিন ওরা মেয়ে দেখতে গেল, আমি পালিয়ে রইলাম।
একদিন হুট করে খবর এলো, সুমন ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। মেয়ে দেখতে গিয়ে পাকা কথা সেরে এসেছে। শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
বিয়ের দিন মেয়ে দেখে আমার টাশকি খাবার জোগাড়! মেয়ে বেশ সুন্দরী। মনে হলো সেজেগুজে পরী বসে আছে!
বিয়ের কিছুদিন পর রাস্তায় সুমন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। সে জোর করে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল। ড্রয়িংরুমে বসে আছি, কৃষ্ণ বর্ণের এক মেয়ে সালাম দিয়ে বলল, ‘ভাইজান ভালো আছেন? আপনার কথা অনেক শুনেছি।’
মনে মনে ভাবি কে এই মেয়ে? খাওয়া-দাওয়া সারলাম, মেয়েটা খাবার পরিবেশন করল। এটা-ওটা এগিয়ে দিল। মনে করলাম সুমন ভাই হয়তো নতুন কাজের মেয়ে রেখেছেন। রান্না হয়েছে মাশাল্লাহ। আমি পেটপুরে খেয়ে দেয়ে বললাম, ‘ভাই, রেঁধেছে কে?’
ভাই হাসতে হাসতে বললেন, ‘কে আবার? তোর ভাবি।’
ফিরে আসার সময় জানতে চাইলাম, ‘সুমন ভাই, ভাবি কি বাসায় নাই?’
ভাই অবাক হয়ে বললেন, ‘এটাই তো তোর ভাবি!’
শুনে আমার ভিমড়ি খাবার জোগাড়। বলে কী! এ মেয়ে সুমন ভাইয়ের বউ? তাহলে বিয়ের দিন আমি কাকে দেখলাম! মেয়েটা চলে গেল। আমি লজ্জা পেয়ে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘যখন মেয়ে দেখতে গেছি, তখন মেয়ে বিউটি পার্লার থেকে মেকাপ করে এসেছিল, এক দেখায় পছন্দ করে ফেলেছি। এই বিউটি পার্লার আমারে ঠকাইছে রে!’
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে করুণ গলায় বললেন, ‘বাসর রাতে মেকাপ তোলার পর বউ দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। আচ্ছা বল তো, দেশে বিউটি পার্লার না থাকলে কী হয়? ওগুলো হলো একটা চিটিংবাজির জায়গা। সরকারের উচিত এগুলো বন্ধ করে দেওয়া।’
আমি উঠতে উঠতে মনে মনে বললাম, ‘সুমন ভাই, আপনি যেমন পছন্দ করে বিয়ে করতে চান, মেয়েরাও কিন্তু তাই চায়। আপনার পছন্দ আছে, ওদের পছন্দ করার অধিকার নাই?’
আমি দরজায় দাঁড়িয়ে সরাসরি তার চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘মনে মনে শুকরিয়া আদায় করেন, ভাবি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হইছে। আর হ্যাঁ, ভাবি কিন্তু গুণবতী, রান্নার হাত অসাধারণ।
খাবার সময় আপনি একা সব সাবাড় করে দিয়েন না। ভাবির জন্যও কিছু রাখবেন।’ শুনে সুমন ভাই কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সুমন ভাইয়ের বউ
হানিফ ওয়াহিদ
০৭ মে ২০২৩, ১৩:০৫:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
সুমন ভাই আমার নিকট আত্মীয়। যখন খেতে বসেন প্লেটে কাজ হয় না, গামলার দরকার হয়। গ্লাস দিয়ে পানি খেতে পারেন না, পুরো জগ ঢকঢক করে গলায় ঢেলে দেন। তার বিয়ের বয়স হয়েছে। আমরা মেয়ে দেখতে গেলাম। মেয়ে পক্ষ আমার পূর্ব পরিচিত।
এর আগে কমপক্ষে বিশ জায়গায় মেয়ে পছন্দ হয়েছিল আমাদের, কিন্তু সুমন ভাইয়ের সাইজ দেখে মেয়ে পক্ষ না করে দিয়েছে। এত খেলে সাইজ তো বাড়বেই। অনেকে তো সামনেই আসে নাই। তিনি যখন গপগপ করে দশ জনের খাবার একাই সাবাড় করেন, লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে। আমরা ভাইকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেছি অথচ সে বাড়িতে খাবার শর্ট পড়ে নাই, এমন কখনো হয়নি।
এক পাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে বলল, ‘প্রয়োজনে বিষ খাবো তবু এ মুটকোকে বিয়ে করব না। ভাই, এ পাহাড় নিয়ে চলাফেরা করেন কেমনে?’
তো সেই মেয়ের বাড়িতে বিভিন্ন খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে। আমি কানে কানে বললাম, ‘ভাই, আপনি যে বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করেন, সেই বাড়ির বিয়ে ভেঙে যায়। দয়া করে এ বাড়িতে কিছু খাবেন না।’
সুমন ভাই শুকনো মুখে বললেন, ‘আচ্ছা।’
আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে বসে আছি, পাত্রীর দেখা নাই। মেয়েপক্ষ বারবার বলছে, আপনারা অপেক্ষা করেন, মেয়ে আসছে।
এদিকে সুমন ভাই খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘ভাই, মেয়ে এসে আপনাকে পছন্দ করলেই খাবার পাবেন।’
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মেয়ে এলো। সুমন ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই মুখ বাঁকিয়ে ফেলল। বুঝলাম, কাজ হবে না। সুমন ভাই ঠিকই পছন্দ করে ফেললেন। ফাঁক দিয়ে পাত্রীকে দেওয়ার জন্য আমার হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দিলেন।
আমি মেয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলতে গেলাম। তার মতামত জানা দরকার। সে বলল, ‘ভাই, এ চিজ কোন জায়গা থেকে আমদানি করলেন! এর ওজন তো হাতির চেয়েও বেশি! একে তো একতলা থেকে দোতলায় উঠাতেই ক্রেন লাগবে!’
আমি বললাম, ‘তাহলে দেখা দিলেন কেন?’
‘ভাই, আমার কিছু টাকা দরকার। আগামীকাল আমার বয়ফ্রেন্ডের বার্থ ডে। আপনাদের সামনে যাওয়ার কারণে কিছু টাকা বখশিশ পেলাম। নইলে কখন ঝাঁটা মেরে বিদায় করে দিতাম!’
এরপর আর কথা চলে না। কান ধরে শপথ করলাম, জীবনে আর তার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো না। অনেক শিক্ষা হয়েছে। এরপর যে কদিন ওরা মেয়ে দেখতে গেল, আমি পালিয়ে রইলাম।
একদিন হুট করে খবর এলো, সুমন ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। মেয়ে দেখতে গিয়ে পাকা কথা সেরে এসেছে। শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
বিয়ের দিন মেয়ে দেখে আমার টাশকি খাবার জোগাড়! মেয়ে বেশ সুন্দরী। মনে হলো সেজেগুজে পরী বসে আছে!
বিয়ের কিছুদিন পর রাস্তায় সুমন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। সে জোর করে আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল। ড্রয়িংরুমে বসে আছি, কৃষ্ণ বর্ণের এক মেয়ে সালাম দিয়ে বলল, ‘ভাইজান ভালো আছেন? আপনার কথা অনেক শুনেছি।’
মনে মনে ভাবি কে এই মেয়ে? খাওয়া-দাওয়া সারলাম, মেয়েটা খাবার পরিবেশন করল। এটা-ওটা এগিয়ে দিল। মনে করলাম সুমন ভাই হয়তো নতুন কাজের মেয়ে রেখেছেন। রান্না হয়েছে মাশাল্লাহ। আমি পেটপুরে খেয়ে দেয়ে বললাম, ‘ভাই, রেঁধেছে কে?’
ভাই হাসতে হাসতে বললেন, ‘কে আবার? তোর ভাবি।’
ফিরে আসার সময় জানতে চাইলাম, ‘সুমন ভাই, ভাবি কি বাসায় নাই?’
ভাই অবাক হয়ে বললেন, ‘এটাই তো তোর ভাবি!’
শুনে আমার ভিমড়ি খাবার জোগাড়। বলে কী! এ মেয়ে সুমন ভাইয়ের বউ? তাহলে বিয়ের দিন আমি কাকে দেখলাম! মেয়েটা চলে গেল। আমি লজ্জা পেয়ে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম। ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘যখন মেয়ে দেখতে গেছি, তখন মেয়ে বিউটি পার্লার থেকে মেকাপ করে এসেছিল, এক দেখায় পছন্দ করে ফেলেছি। এই বিউটি পার্লার আমারে ঠকাইছে রে!’
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে করুণ গলায় বললেন, ‘বাসর রাতে মেকাপ তোলার পর বউ দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। আচ্ছা বল তো, দেশে বিউটি পার্লার না থাকলে কী হয়? ওগুলো হলো একটা চিটিংবাজির জায়গা। সরকারের উচিত এগুলো বন্ধ করে দেওয়া।’
আমি উঠতে উঠতে মনে মনে বললাম, ‘সুমন ভাই, আপনি যেমন পছন্দ করে বিয়ে করতে চান, মেয়েরাও কিন্তু তাই চায়। আপনার পছন্দ আছে, ওদের পছন্দ করার অধিকার নাই?’
আমি দরজায় দাঁড়িয়ে সরাসরি তার চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘মনে মনে শুকরিয়া আদায় করেন, ভাবি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হইছে। আর হ্যাঁ, ভাবি কিন্তু গুণবতী, রান্নার হাত অসাধারণ।
খাবার সময় আপনি একা সব সাবাড় করে দিয়েন না। ভাবির জন্যও কিছু রাখবেন।’ শুনে সুমন ভাই কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023