ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধর: প্রলয় চক্রের ২ জন আটক
ঢাবি প্রতিনিধি
২৭ মার্চ ২০২৩, ২৩:০৭:০৪ | অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। যারা ‘প্রলয়' নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে জোবায়ের ওপর হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হলের সামনে স্যার এফ রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ‘প্রলয়’ নামে চক্রের বিরুদ্ধে মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে।
তাদের বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসা কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় তাদের একটি ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আর মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে একটি মামলা করেন। সেখানে জোবায়েরকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার দুইজন হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিব।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বিভাগের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করছিলেন জোবায়ের। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার বেপরোয়াভাবে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় তাদের গায়ে কাদার ছিটা লাগে। এ সময় গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল।
সাদিয়া আফরোজ খান অভিযোগে লিখেছেন- আমার ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। এরপর আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা একাডেমি পার হওয়ার পর তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে।
চালককে জিজ্ঞেস করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। পরে গাড়ি থেকে পাঁচজন ছেলে বের হয়। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা দেখে যে তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র। পরে তাদের একজন কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে বলে।
ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কিনা, প্রশ্ন করলে অভিযুক্তরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
জোবায়েরের মা বলেন, কথা কাটাকাটির পর আমার ছেলে কবি জসীমউদ্দীন হলের দিকে চলে যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে আমার ছেলে তার অবস্থান জানায়।
কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্তরা জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয়। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।
মারধরের সময় জোবায়েরের বন্ধুরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও এলোপাতাড়ি পেটানোর কথা বলা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জোবায়ের ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়। মারধরে জোবায়ের চেতনা হারিয়ে ফেললে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে জোবায়েরকে তার বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
মামলায় যাদের নাম আছে তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া, সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ; সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব; মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান; কবি জসীমউদ্দীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন; জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ; জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে জোবায়েরের ওপর হামলায় জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি ‘গ্যাং’ মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জোবায়েরের সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সংঘবদ্ধভাবে একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা খুবই ভয়ানক বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।
এর আগে এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর আস্থা রাখি।
আশা করছি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আগামীতে এ ধরনের গ্যাং কালচার থেকে মুক্ত থাকবে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত ইশা বলেন, আমাদের দাবি একটি, সেটি হল জোবায়েরের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে যেন প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, পুলিশ প্রশাসন দু'জনকে আটক করেছে। আমরা প্রশাসনের ওপর আস্থা রেখে বলছি, পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জোবায়েরর ওপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শাস্তির আনবে।
জোবায়েরের সহপাঠী জামিল শামস বলেন, জোবায়েরের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। আমরা চাই না এই ক্যাম্পাসে আর কোন অপরাধী চক্র গড়ে না উঠুক, কোন গ্যাং তৈরি না হোক।
আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে; প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী যাতে ন্যায়বিচার পায়; ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারে। রাতের বেলাও একজন শিক্ষার্থী চলাফেরা করে যেন এটা মনে না করে যে এই ক্যাম্পাস অনিরাপদ।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধর: প্রলয় চক্রের ২ জন আটক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। যারা ‘প্রলয়' নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে জোবায়ের ওপর হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হলের সামনে স্যার এফ রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ‘প্রলয়’ নামে চক্রের বিরুদ্ধে মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে।
তাদের বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা ক্যাম্পাসে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসা কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় তাদের একটি ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আর মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান রোববার রাতে একটি মামলা করেন। সেখানে জোবায়েরকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার দুইজন হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিব।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বিভাগের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করছিলেন জোবায়ের। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার বেপরোয়াভাবে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় তাদের গায়ে কাদার ছিটা লাগে। এ সময় গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল।
সাদিয়া আফরোজ খান অভিযোগে লিখেছেন- আমার ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। এরপর আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা একাডেমি পার হওয়ার পর তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে।
চালককে জিজ্ঞেস করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। পরে গাড়ি থেকে পাঁচজন ছেলে বের হয়। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা দেখে যে তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র। পরে তাদের একজন কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে বলে।
ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কিনা, প্রশ্ন করলে অভিযুক্তরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।
জোবায়েরের মা বলেন, কথা কাটাকাটির পর আমার ছেলে কবি জসীমউদ্দীন হলের দিকে চলে যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে আমার ছেলে তার অবস্থান জানায়।
কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্তরা জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয়। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।
মারধরের সময় জোবায়েরের বন্ধুরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও এলোপাতাড়ি পেটানোর কথা বলা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জোবায়ের ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়। মারধরে জোবায়ের চেতনা হারিয়ে ফেললে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে জোবায়েরকে তার বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
মামলায় যাদের নাম আছে তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া, সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ; সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব; মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান; কবি জসীমউদ্দীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন; জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ; জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে জোবায়েরের ওপর হামলায় জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি ‘গ্যাং’ মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জোবায়েরের সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সংঘবদ্ধভাবে একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা খুবই ভয়ানক বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।
এর আগে এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর আস্থা রাখি।
আশা করছি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আগামীতে এ ধরনের গ্যাং কালচার থেকে মুক্ত থাকবে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাত ইশা বলেন, আমাদের দাবি একটি, সেটি হল জোবায়েরের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে যেন প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, পুলিশ প্রশাসন দু'জনকে আটক করেছে। আমরা প্রশাসনের ওপর আস্থা রেখে বলছি, পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জোবায়েরর ওপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলাকারীদের শাস্তির আনবে।
জোবায়েরের সহপাঠী জামিল শামস বলেন, জোবায়েরের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। আমরা চাই না এই ক্যাম্পাসে আর কোন অপরাধী চক্র গড়ে না উঠুক, কোন গ্যাং তৈরি না হোক।
আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে; প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী যাতে ন্যায়বিচার পায়; ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারে। রাতের বেলাও একজন শিক্ষার্থী চলাফেরা করে যেন এটা মনে না করে যে এই ক্যাম্পাস অনিরাপদ।