ইবিতে হলে আন্দোলনকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিজ্ঞপ্তি, সমালোচনা

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শহিদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিকতার আবেদনে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেখ এবিএম জাকির হোসেন নিজে এ নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নোটিশের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হল প্রভোস্টকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, শহিদ জিয়াউর রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আবাসিকতার আবেদন আহবান করা হয়েছে। ফরম বাবদ দুইশ টাকা হলের ৬১৪নং অ্যাকাউন্ট নম্বরে জমা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ করে হল অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে ওই নোটিশে বোল্ড অক্ষরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হল প্রভোস্ট স্বাক্ষরিত এই নোটিশের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তাকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে পোস্ট দিয়েছেন। তারা বলছেন- যে বৈষম্য দূর করার জন্য এত আন্দোলন সেই বৈষম্য যদি আবারও গেড়ে বসে তাহলে নতুন স্বাধীনতার মানে কী?
শাহরিয়ার জামান বিয়াদ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, কোটা থাকবে না বলে আন্দোলন হলো, আর এখন এই নোটিশের মানে কী? অনতিবিলম্বে এই নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে। এই বৈষম্যমূলক নোটিশ প্রত্যাহার করে স্বচ্ছভাবে আবাসিকতা প্রদান করতে হবে। নাহলে এর বিরুদ্ধে আমরা আবারও আন্দোলন করতে বাধ্য হব।
হৃদয় হাসান লিখেছেন, এ রকম কিছু না হলেও পারত। আমরা বৈষম্য দূর করতে গিয়ে আবার বৈষম্য ফিরিয়ে আনলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এ রকম কোনো বৈষম্যমূলক দাবি আমরা কখনই করতে পারি না। প্রভোস্ট স্বপ্রণোদিত হয়েই এটা করেছেন। আমরা তাকে বিষয়টি অবগত করেছি এবং আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।
এ বিষয়ে শহিদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেখ এবিএম জাকির হোসেন বলেন, প্রভোস্ট কাউন্সিল থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও এমন কোনো সুবিধা চাওয়া হয়নি। পূর্বের নোটিশ থেকে কপি পেস্ট করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। সংশোধিত নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সমালোচিত নোটিশটির ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’ লাইনটির ওপর আলাদা কাগজ দিয়ে ফটোকপি করে সেটাকে জোড়াতালি দিয়ে ‘সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি’ হিসেবে সাঁটানো হয়েছে। এমনকি সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে পুরোনো বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তির একই তারিখ উল্লেখ রয়েছে।
প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের প্রভোস্ট কাউন্সিল থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি ভুল করে এটা করেছেন। অতিদ্রুত সংশোধিত নোটিশ দিয়ে দেবে। হলের সিট বণ্টন হবে মেধার ভিত্তিতে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ইতোপূর্বে ওই প্রভোস্ট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন কাজ করেছেন। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাদের সুপারিশে তিনি দ্বিতীয় দফায় হল প্রভোস্ট হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।