Logo
Logo
×

রাজধানী

গেন্ডারিয়ায় দুই মাসের খোঁড়াখুঁড়ি, দুর্ভোগে অচল জনজীবন

মো. জহিরুল ইসলাম

মো. জহিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

গেন্ডারিয়ায় দুই মাসের খোঁড়াখুঁড়ি, দুর্ভোগে অচল জনজীবন

ছবি: যুগান্তর

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানাধীন কাঠেরপুলের ডিস্টিলারি রোড থেকে দীননাথ সেন রোড পর্যন্ত প্রায় দুই মাস ধরে চলমান খোঁড়াখুঁড়ি ও ড্রেনেজ সংস্কারকাজে এলাকাবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ড্রেনেজ উন্নয়নের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রতা জনজীবন অচল করে দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রাস্তার পাশে নেই কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন বা নিরাপত্তাব্যবস্থা। এতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই। ঢিলে-ঢালা ও ধীর গতির কাজের কারণে শুধু গেন্ডারিয়া নয়, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল ও নারিন্দা এলাকার সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। পুরো এলাকাজুড়ে সড়ক চলাচল কার্যত অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বেশ কয়েকদিনের সরেজমিনে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার মূল সড়কজুড়ে গভীর খোঁড়াখুঁড়ি। চারপাশে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে ইট, বালু, ভাঙা কংক্রিট, ড্রেনের অংশ ও বিভিন্ন তার। রাস্তার মাঝ বরাবর বড় আকারের ড্রেনেজ পাইপ বসানোর কাজ চলছে। গভীর খাদে শ্রমিকরা কোনো সুরক্ষা ছাউনি বা নিরাপত্তা জাল ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। বাঁশের সরু কাঠামো ভর দিয়ে নিচে নামার ব্যবস্থা করা হলেও তা অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। সড়কের দুই পাশে বহুতল ভবন ও দোকানপাট—সেখানে বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে সরু অংশ ধরে চলাচল করছেন। পুরো খননকাজজুড়ে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড, ব্যারিকেড বা লালফিতা। ফলে মোটরসাইকেল, রিকশা বা পথচারীরা যে কোনো মুহূর্তে গভীর খাদে পড়ে গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, সামনের রাস্তা এমনভাবে খোঁড়া যে গ্রাহক আসতে পারছে না, দোকানে পচা পানি ও কাদা জমার আশঙ্কা প্রবল। শিশু, বৃদ্ধ, স্কুল–মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই অবস্থা ‘দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছে। অনেক বাড়ির গ্যারেজে গাড়ি ঢোকানো–বের করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রাতের বেলা নেই কোনো লাইট বা সাইনবোর্ড—ফলে বড় দুর্ঘটনার ভয় সবসময় মাথায় রাখতে হচ্ছে।

সামাজিক সংগঠন ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’র আহ্বায়ক মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘দুই মাস ধরে রাস্তার কাজ চলছে। মানুষের ভোগান্তি চরমে। অপরিকল্পিতভাবে পাইপ বসিয়ে পানি উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত, অবহেলা, ব্যর্থতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে পুরান ঢাকার সমস্যাগুলো দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। তার ভাষায়, গেন্ডারিয়ার লোহারপুল থেকে পোস্তগোলা সেনানিবাসের গেট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ ‘দুর্বল ও ফাঁকিবাজি’ যার মান এতটাই নিম্ন যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এলাকাবাসী এসব নিম্নমানের কাজের তদন্ত দাবি করেছেন।

তিনি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানিয়ে বলেন,‘গেন্ডারিয়া এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য দ্রুত কাজ শেষ করে রাস্তা খুলে দিন।’

গেন্ডারিয়ার ডিউটি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কসমোপলিটন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেক্রেটারি মো. আব্দুল মান্নান বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস ধরে একই অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তা।

তিনি জানান, ‘এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। পাশেই স্কুল–মাদ্রাসা। কিন্তু রাস্তার কোথাও কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন নেই। বয়োজ্যেষ্ঠ, শিশু–স্কুলগামীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি। রাতের বেলা লাইট বা জাল কিছুই নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, বাড়ির মালিকেরা গাড়ি গ্যারেজে ঢুকাতে পারছেন না। ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতার কথাও উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ঠিকাদারের সাথে এলাকাবাসীর কথা হলে তিনি বলেছেন, আরও ৮–১০ মাস সময় লাগবে কাজ শেষ হতে।’

তারপর তিনি জানান, ‘আমার রেস্টুরেন্টের সামনে রাস্তা খুঁড়ে রেখে গেছে, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। স্কুলের শিশুরা আসতে ভয় পাচ্ছে। একটাও লাইট নেই, নেই কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন।’

তিনি সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, সারা বছরই এলাকায় কোথাও না কোথাও খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। তাদের দাবি, সিটি কর্পোরেশন যাতে পরিকল্পনামাফিক একটি রাস্তা ভাঙলে বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা রাখে এবং দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বেশি শ্রমিক নিয়োগ করে।

বিষয়টি জানতে চাইলে ডিএসসিসির জোন–৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী লুৎফর ফকির যুগান্তরকে বলেন, ‘অতি বৃষ্টিতে পানি না জমে এজন্য ১২ ফুট বাই ১৪ ফুট আকারের বড় ড্রেনেজ পাইপ বসানো হচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও একই ধরনের কাজ চলছে। তাই সাময়িকভাবে ভোগান্তি বাড়ছে।’

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি জানান,‘লালফিতা, জাল, লাইট–সাইনবোর্ড আগেই বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। আমরা ঠিকাদারকে নতুন করে বসানোর নির্দেশ দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাঠেরপুল থেকে দীননাথ সেন রোড পর্যন্ত সংস্কারকাজ নির্বাচনের আগেই—অর্থাৎ ডিসেম্বর–জানুয়ারির মধ্যেই শেষ হবে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম