যুগান্তর রিপোর্ট ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫০ | অনলাইন সংস্করণ
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক কোমলমতি মাদ্রাসাছাত্রের।
বর্তমানে ঢাকার ফার্মগেটের খামারবাড়ি রোডের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ওই ছাত্রের চিকিৎসা চলছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্র সাত বছর বয়সী ওই মাদ্রাসাছাত্রের দুই চোখের ওপর এতটাই আঘাত লেগেছে যে, চোখ দুটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
নির্যাতিত ওই মাদ্রাসাছাত্রের নাম মোজাম্মেল হোসেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জে। সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের হাতির থান হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।
মোজাম্মেল হোসেনকে নির্যাতনকারী পাষণ্ড মাদ্রাসাশিক্ষকের নাম হাফেজ নাঈম।
ওই মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থী জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর মোজাম্মেলকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বেত্রাঘাত করেন হাফেজ নাঈম।
মোজাম্মেলের অপরাধ লুডু খেলার সময় নাঈমকে বিরক্ত করেছিল সে।
ইতিমধ্যে মোজাম্মেলের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে নিযার্তনকারী শিক্ষক হাফেজ নাঈম আহমেদ ও তার বাবা এবং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম আলফুকে আসামি করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, সম্প্রতি মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রের সঙ্গে একটি বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে সেখান থেকে ২০ টাকা উপহার পায় শিশু মোজাম্মেল। মাদ্রাসায় ফিরে শিক্ষক হাফেজ নাঈম, মোজাম্মেলের কাছ থেকে সেই ২০ টাকা কেড়ে নিয়ে লুডু কিনতে চান নাঈম। মোজাম্মেল টাকাটি না দিতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক নাঈম ছেলেটির চোখে গামছা বেঁধে আধাঘণ্টা ধরে বেধড়ক পিটুনি দেয়।
এই অমানসিক নির্যাতনের পর মোজাম্মেলের চোখে রক্তক্ষরণ হয় ও ফুলে যায়।
ঘটনার বিবৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মোজাম্মেলের মা রেহানা খাতুন কান্নারত কণ্ঠে গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন, প্রথমে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে আমার ছেলে যেভাবে খুশি অসংখ্য বেত্রাঘাত করে নাঈম। পরে অন্যান্য ছাত্রকে দিয়ে মোজাম্মেলের হাত-পা ধরিয়ে রেখে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালায় ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের জানালে মোজাম্মেলকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন শিক্ষক নাঈম।
এদিকে ঢাকায় মোজাম্মেলের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করতে ও থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন তার বাবা বিল্লাল মিয়া। ইতিমধ্যে ছেলের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন গরুর পাইকার। কোনো জমা টাকা নেই আমার। ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে এতদিনে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার নিয়ে ঋণী হয়ে গেছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলের চোখ দুটো মোটামুটি সুস্থ করে তুলতে কমপক্ষে এক মাস ধরে এখানে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। আর আমি এখনই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
হতাশার সুরে তিনি আরও বলেন, শুধু চোখই নয়, ওই অমানুষ শিক্ষক আমার ছেলের সারা শরীরজুড়ে আঘাত করেছে। চক্ষু হাসপাতালের বাইরে গিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়েও ছেলেকে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এসব করতে গিয়ে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি।
নির্যাতনকারী শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহত মোজাম্মেলের বাবা-মা ও এলাকাবাসী।
নির্যাতনকারী শিক্ষকের বাবা তাজুল ইসলাম আলফু জানান, আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। বিষয়টি আমিও মেনে নিতে পারছি না।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, নির্যাতনকারী শিক্ষক ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন মোজাম্মেলের বাবা। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০০০-২০১৯