সদরঘাটে নৌ শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
জবি প্রতিনিধি
২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৭:১৬:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবি আদায়ে ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান নদীবন্দর রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করা যাত্রীরা।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ঢাকার সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
রোববার সকাল থেকে সদরঘাট নদীবন্দরে ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। অন্যদিনের তুলনায় ঘাট এলাকা অনেকটাই ফাঁকা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌযান ধর্মঘটের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। ফলে অনেক যাত্রীকে ঘাটে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
সাত বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদপুরগামী লঞ্চে উঠতে সকালে সদরঘাটে এসেছেন কুলসুম বেগম। তিনি ধর্মঘটের ব্যাপারে জানতেন না। কুলসুম বেগম বলেন, ‘সকাল আটটার দিকে টার্মিনালে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো লঞ্চ পেলাম না। লঞ্চের লোকজনও বলছেন না কখন লঞ্চ ছাড়বে। এখন বাসেই চাঁদপুর চলে যেতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌপরিবহণ শ্রমিকদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হওয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে তারা যখন আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু এর দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের ১০ দফা দাবির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।
এ ধর্মঘটের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, আমদের ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়ায় আমরা ধর্মঘটে গিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য ঘোষিত মজুরি কাঠামোর মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু তার এক বছর পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট চলছে। তবে তিনটা দাবির প্রতি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনটা দাবি হলো- নৌপরিবহণ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব হয়রানি বন্ধ এবং দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন কিন্তু এখন আমাদের করার কিছু নেই। শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। শ্রমিক-মালিক সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নৌ শ্রমিকদের দাবির বিষয়টা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। সদরঘাটে শান্তিপূর্ণভাবেই ধর্মঘট করছেন শ্রমিকরা।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সদরঘাটে নৌ শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবি আদায়ে ডাকা ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের প্রধান নদীবন্দর রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করা যাত্রীরা।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে ঢাকার সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
রোববার সকাল থেকে সদরঘাট নদীবন্দরে ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। অন্যদিনের তুলনায় ঘাট এলাকা অনেকটাই ফাঁকা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌযান ধর্মঘটের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। ফলে অনেক যাত্রীকে ঘাটে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
সাত বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চাঁদপুরগামী লঞ্চে উঠতে সকালে সদরঘাটে এসেছেন কুলসুম বেগম। তিনি ধর্মঘটের ব্যাপারে জানতেন না। কুলসুম বেগম বলেন, ‘সকাল আটটার দিকে টার্মিনালে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো লঞ্চ পেলাম না। লঞ্চের লোকজনও বলছেন না কখন লঞ্চ ছাড়বে। এখন বাসেই চাঁদপুর চলে যেতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌপরিবহণ শ্রমিকদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হওয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে তারা যখন আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু এর দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের ১০ দফা দাবির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।
এ ধর্মঘটের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, আমদের ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়ায় আমরা ধর্মঘটে গিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য ঘোষিত মজুরি কাঠামোর মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু তার এক বছর পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট চলছে। তবে তিনটা দাবির প্রতি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনটা দাবি হলো- নৌপরিবহণ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব হয়রানি বন্ধ এবং দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন কিন্তু এখন আমাদের করার কিছু নেই। শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। শ্রমিক-মালিক সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘নৌ শ্রমিকদের দাবির বিষয়টা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। সদরঘাটে শান্তিপূর্ণভাবেই ধর্মঘট করছেন শ্রমিকরা।’