মিরপুর মডেল থানার এসআইয়ের কাণ্ড!

 মিরপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

রাজধানীর মিরপুরে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআই-এর বিরুদ্ধে। ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার মিরপুর ২ নম্বর রাইন খোলার ৪ নম্বর সড়কের একটি বাসা থেকে সাইফুল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী ও সন্তানকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বামী ও স্ত্রীকে পিটিয়ে বিকাশ, নগদ ও এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন এসআই সাইফুল ইসলাম নয়ন। তিনি মিরপুর মডেল থানায় কর্মরত। 

এ ঘটনায় সাইফুলের মা কল্পনা বেগম ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, মিরপুর ২ নম্বর রাইনখোলায় আমাদের নিজস্ব বাড়ির চতুর্থ তলায় ফ্ল্যাটে আমার বড় ছেলে সাইফুল সপরিবারে বসবাস করে। আমি ওই বাড়ির সপ্তম তলায় থাকি। ১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিরপুর মডেল থানার এসআই সাইফুলসহ ৫/৬ জন পুলিশ আমার বাসায় এসে চতুর্থ তলায় সাইফুলের ফ্ল্যাটে যায়। এরপর আমার ছেলেকে আটক করে মারতে থাকে। চিৎকার শুনে আমি ও আমার স্বামী চারতলায় যাই। গিয়ে দেখি পুলিশ সাইফুলের বুক ও গলার ওপর পাড়া দিয়ে রয়েছে। বাধা দিলে তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পুলিশের এক সদস্য আমার স্বামীকে থাপ্পড় দেয়। আমার ছেলেকে মারতে মারতে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে ওঠায়। ছেলেকে গাড়িতে উঠিয়ে  ১০ মিনিট পরে আবার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে যায় কয়েকজন। এরপর ছেলের বউ ও পাঁচ বছরের নাতি নুর মোহাম্মদকে ধরে নিয়ে অন্য একটি গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সাইফুলের মোটরসাইকেলসহ বাসা থেকে মানিব্যাগ ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় পুলিশ। 

থানায় নেওয়ার পর আমার ছেলেকে পিটিয়ে তার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এটিএম কার্ড মানিব্যাগ থেকে নিয়ে পিন নম্বরের জন্য মারতে থাকে। মার খেয়ে সে পিন নম্বর দিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এই কার্ড দিয়ে সোর্স শাওনের মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩৯ হাজার টাকা তুলে নেয়। এটিএম কার্ডটি ভেঙে ছেলের বউয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর মাদকের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও পিটিয়ে ছেলের বিকাশ ও নগদ নম্বর থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে নেয়। পুলিশ আরও টাকা চাইলে ছেলের বউ এক প্রতিবেশীর কাছে স্বর্ণালংকার বন্ধক দিয়ে ৬৪ হাজার টাকা নিয়ে থানায় যায়। 

কল্পনা বেগম বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল দেখে পুলিশ তাকে ধরতে এসেছে। কিন্তু ছেলের বউ ও নাতির তো কোনো অপরাধ নেই। কেন এত রাতে তাদের থানায় নেওয়া হলো। তারা তো আসামি না। থানায় ছেলে ও ছেলের বউকে পিটিয়ে ৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আদায় করে পুলিশ। 

তিনি বলেন, সকালে ছেলের বউ থানা থেকে বাসায় এলে তার গালে নীল এবং লাল বর্ণের জখম দেখতে পাই। ছেলের বউ থানায় মারধর ও টাকা আদায়ের ঘটনা খুলে বলে।  সাইফুল দারোগা ছেলের বউকে হুমকি দিয়ে বলেছে টাকাপয়সার কথা কাউকে জানালে তাকে মাদক মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হবে। আর আমার ছেলেকে গুম করে ফেলবে। 

সাইফুলের বাবা কাওছার মোস্তফা বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে অনেক আগের কয়েকটি মাদক ও নারী নির্যাতন মামলা রয়েছে। নারী নির্যাতন মামলায় ওয়ারেন্টের আসামি সে। ওইদিন তাকে সেই মামলায় ধরে নিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে। অনেক আগের মাদক মামলা থাকায় পুলিশ সে সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। ছেলে আর ছেলের বউকে থানায় নিয়ে পিটিয়ে টাকা নিয়েছে সাইফুল দারোগা। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। 

অভিযোগের বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার এসআই সাইফুল বলেন, ‘আসামির নামে ওয়ারেন্ট ছিল। ওই রাতে আসামিকে গ্রেফতারের সময় মিরপুর মডেল থানার একাধিক টিম ঘটনাস্থলে ছিল। আসামিকে ধরার সময় তার স্ত্রী বাধা দিয়েছে। আর অপরিচিত ২ জন লোকও ওই বাসায় ছিল। সবাইকে থানায় আনা হয়েছে। ওসি স্যার, ডিসি স্যার বিষয়টি অবগত।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামিকে নারী নির্যাতন মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কোনো টাকাপয়সা নেয়নি। আপনি ভালো করে খোঁজখবর নেন। ওই পরিবারটি মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। আপনার অফিস কোথায়। কোথায় বসেন। আমি একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরেছি। এজন্য বাহবা পাওয়ার কথা। এ নিয়ে আপনারা একটি ভালো রিপোর্ট করতে পারেন। উলটো সাংবাদিকরা আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছে।’

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন