হোটেল জাকারিয়ায় হামলাকারী মনিরের সহযোগী গ্রেফতার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

ফলো করুন |
|
---|---|
রাজধানীর হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে বনানী থানা পুলিশ। তার নাম মো. সালাউদ্দিন ওরফে মনির ওরফে স্যার মনির। তিনি হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মনির হোসেনের সহযোগী।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বনানী থানা পুলিশের একটি দল। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মনির হোটেল জাকারিয়ায় হামলায় সরাসরি অংশ নেয়।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিচয় শনাক্তের পর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনির হামলার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদ যুগান্তরকে বলেন, অভিযুক্ত প্রধান আসামী মনির হোসেনসহ হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এরইমধ্যে সালাউদ্দিন ওরফে মনিরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাকে কাল (রোববার) আদালতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে বনানী থানাধীন মহাখালীর হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে বনানী থানা জাতীয়তাবাদী যুবদলের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। পরের দিন বুধবার হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও দুই নারীর ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে এই হামলার ঘটনার পর বুধবার হোটেল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে। এতে যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মনির (৪২) ও তার সহযোগী লিটন (৩০), হাসান (৩৫), সামু (৩২) ও জহিরকে (৩০) আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে মনির হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে যুবদল।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৩০ জুন রাত ৮টার দিকে মহাখালীর জাকারিয়া বারে আসেন মনির হোসেন। তিনি সেখানে একটি ভিআইপি কক্ষ চান। কিন্তু সেখানে ভিআইপি কক্ষ খালি না থাকায় সেটি দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। কক্ষ না পেয়ে মনির হোসেন বারের টেবিলে বসে খাবার ও মদ অর্ডার করেন।
খাবার শেষে মনির হোসেন স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে বিলে ছাড় চাইলে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ টাকা কমিয়ে দেয়। তবে যাওয়ার সময় ভিআইপি রুম না দেওয়ায় তার মনক্ষুণ্ণ ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরে কর্তৃপক্ষকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এর পরদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে ২০-২৫ জন ওই বার ও রেস্তোঁরায় জোর করে ঢুকে পড়ে।
ঢোকার পর মনিরের সহযোগী লিটন বারের একটি গ্লাস হাতে নিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে মেরে বলে, ‘মনির ভাই তোদের হোটেলে আসছিল, তোরা মনির ভাইকে ভিআইপি কেবিন না দিয়ে অসম্মান করেছিস, আমরা মনির ভাইয়ের লোক, তোরা মনির ভাইকে চিনে রাখবি’। এইসব বলে মনিরের লোকজন হোটেলে ভাঙচুর চালায়। তারা হোটেলের অফিস রুম ও ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার মদ ও বিয়ার কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। তখন বারের কর্মীরা তাদের বাধা দিতে গেলে তাদেরও মারধর করে হামলাকারীরা।
পুলিশ বলছে, হামলার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ফুটেজ ও হোটেলে কর্মরতদের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ১২ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে এজাহারে উল্লেখ করা মনিরের ৪ সহযোগীও রয়েছে। তাদের হামলায় সরাসরি অংশগ্রহনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে মনির মঙ্গলবার ঘটনাস্থালে ছিলেন এমন কোন প্রমাণ এখনও মেলেনি। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি মনিরের নেতৃত্বেই অন্তত ৩০ জন দলবেধে হামলা করতে আসেন। অন্যদের পরিচয় জানার চেষ্টয় রয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়াও হামলার শিকার দুই নারীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।