Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

দুধ নাকি ওট মিল্ক–স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো?

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম

দুধ নাকি ওট মিল্ক–স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো?

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ওট মিল্ক দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স’ যাদের আছে এমন মানুষরাই নন, অনেকেই এখন সকালের কফিতে বা সিরিয়ালে গরুর দুধের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন ওট মিল্ক। 

প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ, বাদামি ঘ্রাণ ও ক্রিইমি টেক্সচার, এসব কিছু মিলিয়ে ওট মিল্ক যেন দুধের সবচেয়ে চমৎকার বিকল্প। কিন্তু এ ওট মিল্ক কি আদৌ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

ওট মিল্কের গুণাগুণ কী কী?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ অ্যাশলি কফ বলেন, ওট মিল্ক শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, এটি পরিবেশের জন্যও তুলনামূলকভাবে ভালো।’ আমন্ড বা কাঠবাদামের দুধ বা গরুর দুধ উৎপাদনের তুলনায় ওট মিল্ক তৈরিতে অনেক কম পানি লাগে এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমনও অনেক কম হয়।

বিশেষ করে যারা পরিবেশ নিয়ে সচেতন, তাদের জন্য এটি একটি উত্তম বিকল্প।

কফির জন্য উপযুক্ত বিকল্প

অনেক ভেজাল-মুক্ত দুধ বিকল্প কফিতে ভালোভাবে ফেনা তৈরি করতে পারে না। তবে ওট মিল্ক দিয়ে তৈরি করা ‘লাতে’ বা ‘ক্যাপিচিনো’ স্বাদে এবং দেখতে বেশ আকর্ষণীয় হয়। এটি দুধের মতন ঘন ও ক্রিইমি হওয়াতে কফি প্রেমীদের কাছে এখন এটি ‘বারিস্তা ফেভারিট’ (যারা কফি তৈরি করেন)।

পুষ্টিগুণে ভরপুর

যুক্তরাষ্ট্রে পুষ্টিবিদ ডন মেনিং মত দেন, সাধারণত বাজারজাত ওট মিল্কগুলোতে ভিটামিন এ, ডি, বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত করা থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যারা দুধ থেকে ভিটামিন পেতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

আঁশের ভালো উৎস

ওটস মানেই আঁশ। সেই সূত্রেই ওট মিল্কেও থাকে দ্রবণীয় আঁশ, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। মেনিং বলেন, ওট মিল্কের দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হজমে সাহায্য করে।

গরুর দুধ বনাম ওট মিল্ক

গরুর দুধের তুলনায় ওট মিল্কে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ কম থাকে এবং ‘আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ বা ভালো বেশি থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।

গরুর দুধে যেখানে প্রতি কাপ ২৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, ওট মিল্কে তা একেবারেই থাকে না।

ভিটামিনের দিক থেকে দুটি দুধ প্রায় সমান। দুটাতেই ভিটামিন এ এবং ডি থাকে। তবে পার্থক্য দেখা যায় প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেইটে বা শর্করায়।

গরুর দুধে প্রোটিন থাকে ৮ গ্রাম, ওট মিল্কে মাত্র ২ গ্রাম।

অন্যদিকে ওট মিল্কে কার্বোহাইড্রেইট থাকে ১৫-২০ গ্রাম, গরুর দুধে ১২ গ্রাম।

ওট মিল্কে আঁশ থাকে দুই থেকে চার গ্রাম, গরুর দুধে একদমই থাকে না।

এই কারণে যারা ওট মিল্ক পান করেন তাদের পরামর্শ দেওয়া হয় এটি যেন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। যেমন- সিরিয়ালের সঙ্গে বাদাম বা চিয়া-হেম্প সিড। অথবা ওট মিল্ক লাতের সঙ্গে একটা সিদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে।

কখন ওট মিল্ক বেছে নেবেন?

যাদের দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি আছে বা ল্যাকটোজ হজমে সমস্যা হয়, তাদের জন্য ওট মিল্ক একটি অসাধারণ বিকল্প। এটি দুধের মতন ঘন ও ক্রিইমি হওয়াতে দুধের অভাবও বোধ হয় না। এছাড়া যারা ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ কম খেতে চান বা স্বাস্থ্যকর চর্বি বাড়াতে চান, তারাও এটি বেছে নিতে পারেন।

সতর্কতা

ওট মিল্ক কেনার আগে যেসব বিষয়ে নজর দিতে হবে,

চিনি : অনেক ‘এক্সট্রা ক্রিইমি’ বা ‘ভ্যানিলা ফ্লেইভার্ড’ ওট মিল্কে অতিরিক্ত চিনি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৬ চামচ বা ২৪ গ্রাম চিনি গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক চামচ চিনি মানে ৪ গ্রাম, অর্থাৎ যদি কোনো ওট মিল্কে ১৬ গ্রাম চিনি থাকে, সেটি এড়িয়ে চলা উচিত।

 তেল ও স্ট্যাবিলাইজার : কিছু ওট মিল্কে থাকে ‘রেপসিড অয়েল’, ‘পাম অয়েল’ বা ‘সানফ্লাওয়ার অয়েল’। আবার অনেক ক্ষেত্রে গাম বা স্ট্যাবিলাইজারও মেশানো হয়। স্ট্যাবিলাইজার বা স্থিতিশীলকারী পদার্থ— অর্থাৎ এমন একটি উপাদান যা কোনো দ্রব্য বা মিশ্রণের গঠন, ঘনত্ব বা রূপ বজায় রাখতে সাহায্য করে। যাতে দুধটি ঘন ও মসৃণ থাকে। তবে এসব উপাদান সকলের জন্য ভালো না-ও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হজম সমস্যা আছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম