Logo
Logo
×

সারাদেশ

আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, নোয়াখালীতে ১০ দিনে বিএনপি কর্মীসহ ৭ খুন

Icon

নোয়াখালী (উত্তর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, নোয়াখালীতে ১০ দিনে বিএনপি কর্মীসহ ৭ খুন

নোয়াখালীতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। দিন দিন সমাজে অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে। মাদককারবারি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জেলাবাসী।

সন্ধ্যার পরেই শহর, গ্রামাঞ্চলের পথঘাট চলে যায় অপরাধীদের দখলে। মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন সাধারণ মানুষ। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে জেলার সচেতন মহল।

জেলায় গত ১০ দিন খুনের শিকার হয়েছে ৭ জন, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ২ জনের। এর বাইরে জেলায় একাধিক চুরি, ডাকাতি, হামলা ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অনেক অবৈধ অস্ত্রও।

এমতাবস্থায় জেলায় শান্তি ফেরাতে ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা ও সাধারণ মানুষ।

সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর বিয়ের মাত্র ১৭ দিনের মাথায় জেলার হাতিয়া উপজেলার চর বগুড়া গ্রামে পপি বেগম ওরফে রাশেদা (১৮) স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী মোহাম্মদ রুবেল, শ্বশুর-শাশুড়িসহ নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

একই দিন হাতিয়াতে চুরির অপবাদ দিয়ে মোহাম্মদ জাফর (১৮) নামে এক কিশোর দিনমজুরকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। নিহত জাফর উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের প্রকল্প বাজার এলাকার মোহাম্মদ জাকের হোসেনের ছেলে।

একই দিন সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের গাংচিল এলাকা আব্দুল মালেক (৮০) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মালেক উপজেলার গাংচিল এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে।

গত ৩ অক্টোবর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের নতুন ব্রিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরমান হোসেন বিজয় (১৮) নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। নিহত বিজয় উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১ নাম্বার ওয়ার্ডের হাজীপুর গ্রামের আশরাফ আলী হাজী বাড়ির শাহীন চৌধুরীর ছেলে।

একই দিন বেগমগঞ্জে আবদুর রহমান শুক্কুর (৩৫) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার  দুর্গাপুর ইউনিয়নে রাজারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শুক্কুর একই ইউনিয়নের ছেরু ছেরাং বাড়ির মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।

নিহত শুক্কুরের স্ত্রী ঝর্না আক্তার জানান, শুক্কুর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। মোবাইল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় হোসেন মাহমুদ সুফল, অভিসহ  কয়েকজন পিটিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গভীর রাতে স্বামীর সাথে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে নাসিমা বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তিনি মোহম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের চর নোমান গ্রামের জামালের বাড়ির মাইন উদ্দিনের স্ত্রী।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে জেলা শহর মাইজদীর উত্তর ফকিরপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধূ সাদিয়া ইসলাত মীমের (২১) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মীম হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাশ গ্রামের মো. সাব্বির হোসেন হোসেনের মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই তার স্বামী লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর মসনা এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ পলাতক রয়েছেন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ফাহিমা সুলতানা ওরফে মারিয়ার (২৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাইজদীর রশিদ কলোনির একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম ব্যাচের ফলিত গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ফাহিমার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে।

একইদিন নোয়াখালীর মাইজদী শহরের বিবি কনভেনশন হল সেন্টারের বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে আতিকুল ইসলাম তিতাস (২৫) নামে এক কলেজছাত্রকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।  পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

নিহত তিতাস চৌমুহনী পৌরসভার হাজীপুর এলাকার শহীদ চেয়ারম্যান বাড়ির আব্দুল গনির ছেলে। কে বা কারা তিতাসকে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে তা এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক জানান, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সব সময় কাজ করছি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের বিশেষ অভিযানও অব্যাহত আছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম