পুলিশি হেফাজত থেকে কৃষি কর্মকর্তাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় মব সৃষ্টির অভিযোগ
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নোয়াখালীর হাতিয়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা এক কৃষি কর্মকর্তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় কৃষি কর্মকর্তাকে তাদের হাতে তুলে না দেওয়ায় তারা পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং থানা এলাকায় মব সৃষ্টি করেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার হাতিয়ার ৩নং সুখচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিনের ভাই কামাল উদ্দিনের মেয়ে নিগার সুলতানা তানিয়ার সঙ্গে ভোলা জেলার দৌলতখার জয়নগর এলাকার আনোয়ার হোসেন ঝন্টু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মাইনুদ্দিনের বিয়ে হয়। কনের নিকটাত্মীয় রাম চরণবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সামছুল হক বিয়ে পড়ান। নিজেদের সমাজের ইমাম মাওলানা জাহিদকে দিয়ে বিয়ে না পড়ানোয় তাৎক্ষণিক স্থানীয় হেলাল মাঝি নামে একজন আপত্তি জানান। একপর্যায়ে স্থানীয় আরও কয়েকজন আপত্তি জানিয়ে কনের পরিবারের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
তার সূত্র ধরে রোববার আবারও কথা কাটাকাটি এবং কনের বসতঘরে স্থানীয় রিয়াজ, ইমতিয়াজ, ফরিদ, ফারুক, জাহেদ, ওলি, মেশকাত, নয়নসহ কয়েকজন মিলে হামলা চালায়। এ সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুমসহ ১০ জন আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ও আরেকটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ সেখান থেকে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃতদের হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর থানায় আনা হলে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুমন তালুকদার, পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব খন্দকার সোহেলসহ যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০-১২ জন নেতা হাতিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন। পুলিশ এতে অপারগতা প্রকাশ করলে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার সাথে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয় এবং ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাহাব উদ্দিন নামে একজনকে পুলিশ থানায় নিয়ে এলে তাকে থানায় না রেখে যেন যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাদের হাতে তুলে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। তাদের হাতে তুলে না দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। যুবদলের সোহেল ও স্বপনের নেতৃত্ব এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন জানান, আমরা থানায় কোনো মব সৃষ্টি করিনি। বরং সেখানে মব থেকে বাঁচাতে গিয়ে দোষী হয়েছি।
জানতে চাইলে যুবদলের নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান বলেন, অপরাধী যেই হোক তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন যেন কোনো দল বা মতের বিষয় চিন্তা না করে। যদি যুবদলের কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
