ভূঞাপুর-গোপালপুর আসনে নির্বাচনি হালচাল
আসাদুল ইসলাম বাবুল, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ ভূঞাপুর-গোপালপুর আসনে নির্বাচনি প্রচারণা ও জনসংযোগে বিএনপি-জামায়াত এগিয়ে রয়েছে। অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এখনও প্রচারণা ও জনসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ পোস্টার লিফলেট সাঁটালেও ব্যক্তিগতভাবে মাঠে বিচরণ করছেন না।
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হবেন ৯ জন। বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু (ধানের শীষ) এবং জামায়াতে ইসলামের মাওলানা হুমায়ন কবির (দাঁড়িপল্লা), জাতীয় পার্টি টাঙ্গাইল জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গোপালপুর উপজেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান আনোয়ার অথবা হুমায়ুন কবির তালুকদার (লাঙ্গল)।
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অবর্তমানে দুই প্রার্থীর মধ্যে হতে পারে তুমুল প্রতিযোগিতা। তবে বিএনপি বড় দল এবং সালাম পিন্টুর ‘ব্যক্তি ইমেজকে’ প্রাধান্য দিয়েছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে তারা ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। এমতাবস্থায় নির্বাচনি মাঠে বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু (ধানের শীষ)। তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৭ বছর কারাভোগ করেন। জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হুমায়ন কবির (দাঁড়িপাল্লা), জাতীয় পার্টি টাঙ্গাইল জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গোপালপুর উপজেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান আনোয়ার অথবা মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার (লাঙ্গল), জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল), এনসিপি, গণফ্রটের গোলাম ছরোয়ার (মাছ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল করিম (ডাব) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম (আম), গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, উচ্চতর পরিষদের সদস্য, গোপালপুর উপজেলার হেমনগর গ্রামের কৃতীসন্তান শাকিলুজ্জামান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় নির্বাহী সদস্য, কৃষক নেতা হাতেম আলী খানের নাতি গোপালপুর উপজেলার বেলুয়া গ্রামের জাহিদ খান নির্বাচনি মাঠে থাকবেন বলে জানা যায়। সেক্ষেত্রে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু ও মাওলানা ডা. হুমায়ন কবির উল্লেখযোগ্য প্রার্থী।
সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কোনো প্রার্থী আপাতত মাঠে নেই। ফলে ভোটারদের মতে, ভোটের মাঠে যুদ্ধ হবে দ্বিমুখী।
সদ্য নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের উঁচু স্তরের সব নেতা পলাতক ও জেলে রয়েছে। ফলে মাঠ গোছানোর মতো কেউ নেই। তবে কর্মীরা মনেপ্রাণে এখনো নৌকাকে ধারণ করছে। তারা মুখে দলীয় কথা বা ‘জয় বাংলা’ বলতে না পারলেও মনেপ্রাণে নৌকাকেই বিশ্বাস করেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুক্তমাঠে বিচরণ বা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই।
এ আসনে একাদশ ও দ্বাদশের নির্বাচনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছোট মনির (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (আওয়ামী লীগের সম্মানিত সদস্য) গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু (ঈগল) প্রতীকে লড়াই করে ছোট মনির (নৌকা) জয়লাভ করেন।
এ আসনটিতে ১৯৭৩, ১৯৯৬ (১২ জুন) ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ এবং ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়লাভ করে। এছাড়া ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি ও ১৯৮৮ সালে জাসদ (সিরাজ) জয়লাভ করেন। মূলত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় সমান সমান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ পাতানো নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক তালুকদার (ছানু) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় এ আসনটিতে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী ছিল না।
জাতীয় পার্টির মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার (লাঙ্গল), গণফ্রন্টের গোলাম ছরোয়ার (মাছ) বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল করিম (ডাব) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম (আম) এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তারা নতুন মুখ হওয়ায় ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারেননি। ফলে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে লড়াই হয়েছিল নৌকা ও ঈগল দ্বিমুখী।
বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, বিগত সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তখন মানুষ শান্তিতে ছিল। কোনো অর্থপাচার বা আয়না ঘর তৈরি করে নাই। কোনো প্রকার গুম, হত্যা, দুর্নীতি করে নাই। যে কারণে মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। সবার দোয়া ও আশীর্বাদে বিএনপি আবার সরকার গঠন করবে। বিএনপি সন্ত্রাসের রাজনীতি এবং রাতের ভোটে বিশ্বাস করে না।
জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হুমায়ন কবির বলেন, আমরা গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বের হতে চাই। আদর্শিক কথা তুলে ধরতে চাই এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশে নৈরাজ্য, খুন ধর্ষণ, হত্যা গুম, অর্থ পাচার, ঘুস দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য ইসলামী শাসনের কোনো বিকল্প নাই। রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে যে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে, তা থাকবে না বা জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা অপচয় হবে না। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। দলীয় প্রতি হিংসার বদলে আমরা সব দলের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, জাতি ৫৪ বছর ধরে বিভিন্ন সরকার ও তাদের কর্মকাণ্ড দেখে এসেছে। একটি বার আমাদের সুযোগ দিন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারীরা নিজেদের উপলব্ধি থেকেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। নারীদের স্বাধীনতা একবারেই যে চেঞ্জ হবে এমনটি নয়। পর্দা প্রথা মেনে চললে নারী নিজেই নিরাপদ থাকবে। অমুসলিম নারীদের সধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে এবং তারা নিজ অবস্থানেই থাকতে পারবে। আমাদের শাসন ক্ষমতায় দিলে আল্লাহর রহমতে মানুষ শান্তিতে থাকবে এবং স্বাধীনভাবেই চলতে পারবে।। এছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত হবে।
জাতীয় পার্টি টাঙ্গাইল জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গোপালপুর উপজেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান আনোয়ার বলেন, আমার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রী করে অর্থাৎ উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা চালু করে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন জনমানুষের নেতা। তার আদর্শকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা জনগণের রায় পাব বলে আশা রাখি। আমরা ক্ষমতায় গেলে আমলাতন্ত্র নয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশকে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করব।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন, যখন কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার সাহস করত না, তখন আমরা তরুণরাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল, জুলুম, গুমের শিকার হয়েছি তবুও রাজপথ ছাড়ি নাই। গণঅধিকার পরিষদ তারুণ্যের দল। আমরা তরুণরাই নেতৃত্ব দিয়ে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আগামী নির্বাচনে জনগণ গণঅধিকার পরিষদেই ভরসা করবে।
