পরকীয়ার বলি ব্যবসায়ী, স্ত্রী-খালাতো ভাই রিমান্ডে
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ায় বেকারি পণ্যের ডিলার জহুরুল ইসলাম (৪৫) হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। তিনি স্ত্রী ও খালাতো ভাইয়ের পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছেন। ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করার পর মাথায় লাঠির আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
গ্রেফতার স্ত্রী শামিমা আক্তার (৩০) ও খালাতো ভাই বিপুল হোসেন (৩৭) পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
বুধবার বিকালে তাদের দুজনকে আদালতে পাঠানো হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তাদের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ, মামলা সূত্র ও স্বজনরা জানান, নিহত জহুরুল ইসলাম বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের মোকলেসার রহমানের ছেলে। বাবা ও মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হওয়ায় তিনি ছোটবেলা থেকে বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদীঘি তালুকদারপাড়ায় মামা শাহীনুর রহমান তালুকদারের বাড়িতে থাকতেন। পরবর্তীতে শাহীনুর রহমান তার মেয়ে শামিমা আক্তারকে জহুরুলের সঙ্গে বিয়ে দেন। বাড়ির পাশে তাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেন। তিনি (জহুরুল) আকবরিয়া ও শ্যামলী বেকারির ডিলার ছিলেন।
৪ নভেম্বর সকালে বাড়ির কাছে একটি ধানখেতের আইলে তার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা সুরতহাল শেষে মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ভাগ্নে ও জামাই জহুরুল ইসলাম খুন হওয়ায় শাহীনুর রহমান তালুকদার সদর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ভিকটিমের স্ত্রী শামিমা আক্তারের সঙ্গে তার আপন ফুফাতো ভাই একই ইউনিয়নের অন্তাহার গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে বিপুল হোসেনের কয়েকবার কথোপকথনের তথ্য পাওয়া যায়।
এ নিয়ে ব্যাপকভাবে তদন্তকালে জানা যায়, ভিকটিম জহুরুল ইসলাম ও আসামি বিপুল হোসেন আপন খালাতো ভাই। বিপুল ছোটবেলা থেকে মামাতো বোন শামিমা আক্তারকে পছন্দ করতেন। এক সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে; কিন্তু ২০১৪ সালে ফুফাতো ভাই জহুরুলের সঙ্গে শামিমার বিয়ে দেওয়া হলে খালাতো ভাই বিপুল ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া শামিমার সঙ্গে বিপুলের প্রেমের সম্পর্ক অটুট থাকে। একপর্যায়ে বিপুল তার প্রেমিকা ও খালাতো বোন শামিমাকে একটি বাটন মোবাইল ফোন উপহার দেন। ওই ফোন দিয়েই দুজনের মধ্যে গোপনে কথা ও অনৈতিক কার্যক্রম চলতে থাকে।
কিছুদিন আগে ভিকটিম জহুরুল ইসলাম তার স্ত্রী শামিমাকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যান। বিপুলের সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে শামিমা ক্ষিপ্ত হয়ে পথের কাঁটা জহুরুলকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি (শামিমা) এ ব্যাপারে প্রেমিক বিপুলের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন।
এর ধারাবাহিকতায় বিপুল ১৫টি ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়া করে প্রেমিকা শামিমাকে সরবরাহ করেন। তিনি (শামিমা) গত ৩ নভেম্বর রাতে গরম দুধের সঙ্গে ট্যাবলেট মিশিয়ে ভিকটিম জহুরুলকে পান করান। এতে জহরুল গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এরপর শামিমা ফোনে তার প্রেমিক বিপুলকে বাড়িতে আসতে বলেন। গেট খুলে দিলে বিপুল বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঘুমন্ত অবস্থায় জহরুলকে গেঞ্জি পরিয়ে দেন স্ত্রী শামিমা। পরে বিপুল তাকে কাঁধে তুলে বাড়ির বাহিরে ধানখেতে নিয়ে যান। সেখানে তারা দুজন মাথায় লাঠি বা ভারি কোনো বস্তু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতে জহুরুলকে হত্যা করেন।
বুধবার বিকালে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর জানান, শাহীনুর রহমান তালুকদার তার জামাইকে হত্যার ঘটনায় সদর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্তের সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে নিহতের স্ত্রী শামিমা আক্তার ও প্রেমিক বিপুল হোসেনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ উল্লেখ করে জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে দুজনকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়; কিন্তু আদালতের ব্যস্ততা থাকায় দুই আসামিকে রিমান্ড মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিকালে কোর্ট ইন্সপেক্টর শহীদুল ইসলাম জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি শেষে গ্রেফতার দুই আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
