হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকরের দাবি হাসনাতের এলাকার ১১ শহীদ পরিবারের
মো. আক্তার হোসেন, দেবিদ্বার (কুমিল্লা)
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১১ শহীদদের পরিবার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর শহীদদের স্বজনরা দৈনিক যুগান্তর দেবিদ্বার উপজেলার প্রতিনিধির কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের দরজা খুলেছে। তবে এ রায় দ্রুত কার্যকর হলে বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে। এর ফলে নতুন করে আর কোনো স্বৈরশাসক উত্থান হওয়ার সাহস পাবে না।
এছাড়া কুমিল্লার আদালত থেকে রুবেল ও সাব্বির হত্যা মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে দেশ-বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহীদদের স্বজনরা।
গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর সদরে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেল। তিনি উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মরহুম রফিকুল ইসলামের ছেলে।
শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত জুলাই শহীদ পরিবারের কেউ খুশি হতে পারছেন না। হাসিনা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, তাকে দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করতে হবে। এছাড়া কুমিল্লার আদালত থেকে একের পর এক রুবেল ও সাব্বির হত্যা মামলার আসামিরা জামিন নিয়ে দেশে-বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলার সূর্যপুর গ্রামের শহীদ সোহাগ মিয়া ঢাকার গোপীবাগে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গত বছরের ২০ জুলাই নিহত হন।
তার মা নাছিমা বেগম বলেন, হাসিনার রায়ে আমরা খুশি, তবে রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে সোহাগ সংসারের হাল ধরে কিন্তু হাসিনার পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মারল। হাসিনার রায় কার্যকর হলে আমার সন্তানের আত্মা শান্তি পাবে।
১৯ জুলাই আবদুল্লাহপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের সফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে ফয়সাল সরকারে মাথার খুলি উড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেলেও লাশ খুঁজে পায়নি স্বজনরা।
শহীদ ফয়সালের বৃদ্ধ বাবা সফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, হাসিনা আমার সন্তানকে শুধু হত্যা করেনি, তার লাশটিও গুম করেছে। কোথায় দাফন হয়েছে আজও আমরা জানতে পারিনি। হাসিনার ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাচ্ছি না।
১০ বছরের শহীদ হোসাইন মিয়ার বাবা মানিক মিয়া বলেন, হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাত থেকে শিশুরাও নিরাপদ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলে হোসাইনকে তারা বাঁচতে দিল না।
উপজেলার রসুলপুর গ্রামের শহীদ মো. নাজমুল হাসান, বড়শালঘর গ্রামের শহীদ মো. সাগর মিয়া, ইউছুফপুর ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামের শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেল, সুবিল ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর গ্রামের শহীদ মো. রবিন মিয়া, জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের খয়রাবাদ গ্রামের শহীদ মো. রায়হান রাব্বি, এলাহাবাদ গ্রামের শহীদ মো. সাইফুল ইসলাম তন্ময় ও পৌর এলাকার ভিংলাবাড়ি গ্রামের শহীদ মো. সাব্বিরের স্বজনরাও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে খুশি। তবে তারা পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
