Logo
Logo
×

সারাদেশ

সাংবাদিককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করলেন পুলিশ সদস্য

Icon

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম

সাংবাদিককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করলেন পুলিশ সদস্য

বরিশাল নগরে একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে ঢুকে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন এক পুলিশ সদস্য।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে বরিশাল নগরের গোড়াচাঁদ দাশ রোডের আল জামিয়া মাদ্রাসা ভবনের দ্বিতীয়তলায় ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এশিয়ান টেলিভিশন বরিশালের ব্যুরোপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ একাধিক সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

অপরদিকে হামলাকারী পুলিশ সদস্য নাভিদ আনজুমকে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

নাভিদ আনজুম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আমানতগঞ্জ ফাঁড়িতে কর্মরত।

আহত ফিরোজ মোস্তাফা জানান, খেলোয়াড় পরিচয়ে নাভিদ আনজুম দীর্ঘদিন আগে তার সঙ্গে সখ্য গড়েন। এর সুবাদে সে প্রায়ই তার অফিসে আসত। পরবর্তীতে সে মাদক সেবন ও অনলাইন ক্যাসিনো চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এরপর হঠাৎ করে ই-মেইল আইডি হ্যাক হওয়ার অভিযোগ তুলে নাভিদ ফিরোজ মোস্তফার ওপর দায় চাপান; যা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানানভাবে ঝামেলা করে আসছিলেন নাভিদ।

তিনি বলেন, সর্বশেষ আমার পারিবারিক কিছু ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। তবে এতে সুবিধা করতে না পেরে গত ২৫ অক্টোবর রাতে নাভিদ লোকজন নিয়ে ফ্ল্যাটে এসে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে। ওই দিন থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নাভিদ ভয় দেখিয়ে আমাকে আটকে রাখে এবং উলঙ্গ করে নির্যাতনের পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে গত ২ নভেম্বর লোকলজ্জা ভেঙে ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাই। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, উদ্ধারের পর থানায় গেলেও পুলিশ সদস্য হওয়ায় নাভিদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি থানার তৎকালীন ওসি মিজানুর রহমান। এ কারণে ৩ নভেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেই। গত ১৩ নভেম্বর অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ডাকেন উপকমিশনার (ডিবি) আবুল কালাম আজাদ; কিন্তু সেখানে বসে পুনরায় হুমকি দেন কনস্টেবল নাভিদ। যার ভিডিও আমার সহকর্মীদের কাছে রয়েছে।

ফিরোজ অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ মামলা না নিলেও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাঈদ নাভিদের পক্ষ নেয় এবং আমার ল্যাপটপ নিয়ে যায়। পরে ওসি মিজানুর রহমান বিষয়টি মীমাংসা করে দিবেন বলে ঘোরাতে থাকেন। তবে পরে কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে ওসি মিজানুর রহমান, এএসআই সাঈদ ও নাভিদ আনজুম আরও ক্ষুব্ধ হন।

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে কনস্টেবল নাভিদ গোড়াচাঁদ দাশ রোডের বাসায় ঢুকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায় ফিরোজকে রুমের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় কনস্টেবল নাভিদ। নিজেকে বাঁচাতে ফিরোজ ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চান। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আমি এখানে নতুন এসেছি। তাদের মধ্যে পূর্বে কোনো বিরোধ ছিল কিনা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তিনি বলেন, অভিযোগ না দেওয়ায় পুলিশ সদস্যকে আমানতগঞ্জ ফাঁড়ি ইনচার্জের জিম্মায় দেওয়া হচ্ছে।

তবে সুস্থ হয়ে হামলার ঘটনায় মামলা করার কথা জানিয়েছেন আহত সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা।

এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সাংবাদিককে হাতুড়িপেটা করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম