ভাসান জালের ফাঁদে বিপন্ন দেশি মাছ ও জলজ প্রাণী
কামরুল হাসান, রাঙ্গাবালী
৩১ জুলাই ২০১৯, ০১:২৫:৪০ | অনলাইন সংস্করণ
খালের এপার-ওপার দু’প্রান্তেই খুঁটিতে বাঁধা জালের প্রাচীর। মাটির নিচ থেকে পানির ওপরও ১-২ ফুট উঁচু করে রাখা।
এর মাঝখানে মাছ ধরা-ফাঁদ। সেই ফাঁদে পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। রক্ষা পায় না জলজ প্রাণীও।
স্থানীয় ভাষায় জালটির নাম ‘ভাসান জাল’ বা ‘ভেসান জাল’। এটি এক ধরণের ছোট ফাঁসের জাল।
অথচ ছোট ফাঁসের জাল সরকার নিষিদ্ধ করলেও উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে ভাসান জালে নির্বিচারে পোনা নিধন হচ্ছে।
তবুও সংশ্লিষ্টদের তদারকি ও আইনি পদক্ষপ না থাকায় অবাধে এ জাল ব্যবহার করছে অসাধু জেলেরা।
স্থানীয়রা জানায়, এই জালের ফাঁদ থেকে কোনো ধরনের মাছই রেহাই পায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থায়ীভাবে খালে এ ধরনের জাল পেতে রাখায় ৩০ সেন্টিমিটারের চাইতে ছোট মাছ প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছো জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরমন্ডল বাজার থেকে বাইলাবুনিয়া বাজার পর্যন্ত, চরবেষ্টিন বাজার থেকে দারভাঙা স্লুইস পর্যন্ত, চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার থেকে চরমোন্তাজ পুরান বাজার পর্যন্ত ও চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার থেকে বাইলাবুনিয়া বাজার পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৩০ কিলোমিটার খালের বিভিন স্থানে এ জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব খালে প্রায় ১০০টি ভাসান জাল রয়েছে। প্রতি বছরের জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাস এ জাল স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট খালে পেতে রাখা হয়।
এতে প্রতিদিন চিংড়ি, পুঁটি, পাঙ্গাশ, কই, সিং, কাতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশি মাছ ধরা পড়ছে। এর সঙ্গে এসব মাছের লাখ লাখ পোনাও মারা পড়ছে। এছাড়া ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রাণী।
চরমোন্তাজের একাধিক জেলে জানান, জেলেরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মাছ সংগ্রহ করলেও জালে ধরা পড়া বিভিন্ন দেশি মাছের মরা পোনাগুলো খাল কিংবা খালের তীরে ফেলে দেয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার এবং পোনা ধ্বংস করলে এক সপ্তাহের ভেতরে আমরা অভিযান চালাব। এ ধরনের ছোট ফাঁসের জাল একেবারেই নিষিদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাটকা এবং পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের নিচের সাইজের মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৫০ সালের মৎস্য সুরক্ষা সংরক্ষণ আইনে এর শাস্তি ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড। এছাড়া ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।’
এ ব্যাপারে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ভাসান জাল বর্তমান সময় নদী বা খালের মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার অন্যতম একটি অবৈধ জাল। বহমান নদী বা খাল স্থায়ীভাবে রাখা যেকোনো জালই অবৈধ। এটি ব্যবহার করলে আমাদের নদীর দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, টেংরা, শোল, গজার, খলিশা, কই, গুলশা, বাতাসি, কাজুলি ইত্যাদি মাছ একেবারেই হারিয়ে যাবে।’
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ভাসান জালের ফাঁদে বিপন্ন দেশি মাছ ও জলজ প্রাণী
খালের এপার-ওপার দু’প্রান্তেই খুঁটিতে বাঁধা জালের প্রাচীর। মাটির নিচ থেকে পানির ওপরও ১-২ ফুট উঁচু করে রাখা।
এর মাঝখানে মাছ ধরা-ফাঁদ। সেই ফাঁদে পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। রক্ষা পায় না জলজ প্রাণীও।
স্থানীয় ভাষায় জালটির নাম ‘ভাসান জাল’ বা ‘ভেসান জাল’। এটি এক ধরণের ছোট ফাঁসের জাল।
অথচ ছোট ফাঁসের জাল সরকার নিষিদ্ধ করলেও উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে ভাসান জালে নির্বিচারে পোনা নিধন হচ্ছে।
তবুও সংশ্লিষ্টদের তদারকি ও আইনি পদক্ষপ না থাকায় অবাধে এ জাল ব্যবহার করছে অসাধু জেলেরা।
স্থানীয়রা জানায়, এই জালের ফাঁদ থেকে কোনো ধরনের মাছই রেহাই পায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থায়ীভাবে খালে এ ধরনের জাল পেতে রাখায় ৩০ সেন্টিমিটারের চাইতে ছোট মাছ প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছো জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরমন্ডল বাজার থেকে বাইলাবুনিয়া বাজার পর্যন্ত, চরবেষ্টিন বাজার থেকে দারভাঙা স্লুইস পর্যন্ত, চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার থেকে চরমোন্তাজ পুরান বাজার পর্যন্ত ও চরমোন্তাজ স্লুইস বাজার থেকে বাইলাবুনিয়া বাজার পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৩০ কিলোমিটার খালের বিভিন স্থানে এ জাল ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব খালে প্রায় ১০০টি ভাসান জাল রয়েছে। প্রতি বছরের জুলাই ও আগস্ট এই দুই মাস এ জাল স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট খালে পেতে রাখা হয়।
এতে প্রতিদিন চিংড়ি, পুঁটি, পাঙ্গাশ, কই, সিং, কাতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশি মাছ ধরা পড়ছে। এর সঙ্গে এসব মাছের লাখ লাখ পোনাও মারা পড়ছে। এছাড়া ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রাণী।
চরমোন্তাজের একাধিক জেলে জানান, জেলেরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মাছ সংগ্রহ করলেও জালে ধরা পড়া বিভিন্ন দেশি মাছের মরা পোনাগুলো খাল কিংবা খালের তীরে ফেলে দেয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার এবং পোনা ধ্বংস করলে এক সপ্তাহের ভেতরে আমরা অভিযান চালাব। এ ধরনের ছোট ফাঁসের জাল একেবারেই নিষিদ্ধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাটকা এবং পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের নিচের সাইজের মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৫০ সালের মৎস্য সুরক্ষা সংরক্ষণ আইনে এর শাস্তি ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড। এছাড়া ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।’
এ ব্যাপারে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড একোয়াকালচার অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ভাসান জাল বর্তমান সময় নদী বা খালের মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার অন্যতম একটি অবৈধ জাল। বহমান নদী বা খাল স্থায়ীভাবে রাখা যেকোনো জালই অবৈধ। এটি ব্যবহার করলে আমাদের নদীর দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, টেংরা, শোল, গজার, খলিশা, কই, গুলশা, বাতাসি, কাজুলি ইত্যাদি মাছ একেবারেই হারিয়ে যাবে।’