গৌরীপুরে রেললাইনের পাশে শিশুর লাশ রেখে পালায় বাবা-মা!
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
২৯ মার্চ ২০২০, ২৩:৫০:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা শিশুটির লাশের পরিচয় মিলেছে। শিশুটির নাম জান্নাতুল আক্তার জান্নাত। বয়স প্রায় ২ বছর ৬ মাস।
গৌরীপুর-চট্টগ্রাম রেলপথের ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের ২নং রেলক্রসিংয়ের সন্নিকটে বাড়িওয়ালাপাড়া থেকে এ শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার ১০ দিন পর রোববার শিশুর পরিচয় খোঁজে পেলেন যুগান্তর প্রতিনিধি।
১৯ মার্চ সকালে এ শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুর লাশ গৌরীপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই মো. উজ্জ্বল মিয়া।
তিনি জানান, এ ঘটনায় গৌরীপুর থানার একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কোনাপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী ফিরুজা খাতুন জানান, তার ভাই মো. বাবুল মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের সন্তান হল জান্নাতুল আক্তার জান্নাত। শিশুটির ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত করেন এটি জান্নাতের লাশের ছবি।
তিনি জানান, তার ভাই কতগুলো বিয়ে করেছে তার হিসাব তিনি নিজেও জানেন না। রেজিয়া খাতুনকেও বিয়ে করেছে ৬-৭ মাস হয়। পরকীয়া প্রেমের টানেই এ সন্তানকে নিয়ে বাবুলের ঘরে এসেছে রেজিয়া।
তিনি আরও বলেন, তার ভাই বাবুল মিয়া অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির, তাই তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তার বাবা-মাকেও নির্যাতন করেছে একাধিকবার।
অপর বোন রোকসানা খাতুন ভাই বাবুল মিয়া প্রসঙ্গে কিছু বলতেই নারাজ। কত বিয়ে করেছে তার হিসাব তিনিও জানেন না।
এ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, বাবুল মিয়া কোনাপাড়া গ্রামের মো. আলী বক্স একমাত্র পুত্র সন্তান। তার মেয়েলি দোষ আছে। একাধিকবার সামাজিকভাবে শালিসও হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী জানান, মাত্র ৩-৪ মাস পূর্বে ফুটফুটে এ শিশুটিকে নিয়ে কোনাপাড়া গ্রামে আসে জান্নাতের মা রেজিয়া খাতুন। উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার তিনি সপ্তম স্ত্রী। এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে। মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহে হলেও থাকত ঢাকায়। তবে তিনিও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা বলতে পারেননি।
প্রতিবেশীরা জানান, ১৮ মার্চ দিনেও রেজিয়া খাতুন ও বাবুল মিয়াকে তারা দেখেছেন। বাবুলের মা জরিনা খাতুনও বাড়িতে ছিলেন। শিশুর লাশ পাওয়ার পর থেকে দুজন পালিয়েছে। বিড়ম্বনার ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে জরিনা খাতুনও।
এ দিকে কোনাপাড়ায় বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো ঘরে তালা ঝুলছে। বৃহস্পতিবার থেকেই তারা নিখোঁজ।
এলাকাবাসীর ধারণা, রেজিয়া খাতুনের আগের স্বামীর সন্তান জান্নাতন এ পরিবারের জন্য সমস্যা। এ জন্য শিশুটিকে হত্যা করে তারা দুজন পালিয়েছে।
গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত বলা যাবে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে। এই মুহূর্তে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড কী না, তা নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, রেললাইন থেকে প্রায় ১৪ ফুট দূরত্বে পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়া থেকে এ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গৌরীপুরে রেললাইনের পাশে শিশুর লাশ রেখে পালায় বাবা-মা!
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা শিশুটির লাশের পরিচয় মিলেছে। শিশুটির নাম জান্নাতুল আক্তার জান্নাত। বয়স প্রায় ২ বছর ৬ মাস।
গৌরীপুর-চট্টগ্রাম রেলপথের ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের ২নং রেলক্রসিংয়ের সন্নিকটে বাড়িওয়ালাপাড়া থেকে এ শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার ১০ দিন পর রোববার শিশুর পরিচয় খোঁজে পেলেন যুগান্তর প্রতিনিধি।
১৯ মার্চ সকালে এ শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুর লাশ গৌরীপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মামলা তদন্তকারী অফিসার এসআই মো. উজ্জ্বল মিয়া।
তিনি জানান, এ ঘটনায় গৌরীপুর থানার একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কোনাপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী ফিরুজা খাতুন জানান, তার ভাই মো. বাবুল মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের সন্তান হল জান্নাতুল আক্তার জান্নাত। শিশুটির ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত করেন এটি জান্নাতের লাশের ছবি।
তিনি জানান, তার ভাই কতগুলো বিয়ে করেছে তার হিসাব তিনি নিজেও জানেন না। রেজিয়া খাতুনকেও বিয়ে করেছে ৬-৭ মাস হয়। পরকীয়া প্রেমের টানেই এ সন্তানকে নিয়ে বাবুলের ঘরে এসেছে রেজিয়া।
তিনি আরও বলেন, তার ভাই বাবুল মিয়া অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির, তাই তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তার বাবা-মাকেও নির্যাতন করেছে একাধিকবার।
অপর বোন রোকসানা খাতুন ভাই বাবুল মিয়া প্রসঙ্গে কিছু বলতেই নারাজ। কত বিয়ে করেছে তার হিসাব তিনিও জানেন না।
এ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, বাবুল মিয়া কোনাপাড়া গ্রামের মো. আলী বক্স একমাত্র পুত্র সন্তান। তার মেয়েলি দোষ আছে। একাধিকবার সামাজিকভাবে শালিসও হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী জানান, মাত্র ৩-৪ মাস পূর্বে ফুটফুটে এ শিশুটিকে নিয়ে কোনাপাড়া গ্রামে আসে জান্নাতের মা রেজিয়া খাতুন। উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার তিনি সপ্তম স্ত্রী। এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে। মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহে হলেও থাকত ঢাকায়। তবে তিনিও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা বলতে পারেননি।
প্রতিবেশীরা জানান, ১৮ মার্চ দিনেও রেজিয়া খাতুন ও বাবুল মিয়াকে তারা দেখেছেন। বাবুলের মা জরিনা খাতুনও বাড়িতে ছিলেন। শিশুর লাশ পাওয়ার পর থেকে দুজন পালিয়েছে। বিড়ম্বনার ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে জরিনা খাতুনও।
এ দিকে কোনাপাড়ায় বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো ঘরে তালা ঝুলছে। বৃহস্পতিবার থেকেই তারা নিখোঁজ।
এলাকাবাসীর ধারণা, রেজিয়া খাতুনের আগের স্বামীর সন্তান জান্নাতন এ পরিবারের জন্য সমস্যা। এ জন্য শিশুটিকে হত্যা করে তারা দুজন পালিয়েছে।
গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত বলা যাবে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে। এই মুহূর্তে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড কী না, তা নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, রেললাইন থেকে প্রায় ১৪ ফুট দূরত্বে পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়া থেকে এ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না।