কুড়িগ্রামে ধরলার ভয়াবহ ভাঙন 

ভিটামাটি সব হারিয়ে রাস্তায় অনেক পরিবার
 কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 
০৪ জুলাই ২০২০, ০৪:১৭ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

‘এই জীবনে ৭-৮ বার বাড়ি ভাঙছে নদী। কিন্তু এদোন ভাঙন দেখি নাই। চোখের পলকে হামার গাছপালা, ঘর সউগ ভাসি গেইল।’ 

বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন ধরলার ভয়াবহ ভাঙনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন এভাবে। 

ভিটামাটি সব হারিয়ে তিনি উঠেছেন বাঁধের রাস্তায়। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমর কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের মতো অনেকেই এখন ধরলার রুদ্ররোষে নি:স্ব। 


মাত্র দুই সপ্তাহেই যেন বদলে গেছে চিরচেনা গ্রাম। প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে চলছে ভাঙনের ধরলার ভাঙন তাণ্ডব। ভাঙনের তীব্রতা এতো বেশি যে, ঘরবাড়ি সরানোর ফুরসত মিলছে না। পাশাপাশি গাছপালা, বাঁশঝাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। তাও সব রক্ষা করা যাচ্ছেনা। 


গত সপ্তাহে একদিনেই জয়নাল, আমিনুর, আবু মিয়া, জিয়াউল, বাদশা, দুলাল. ইসলাম মিয়া ও নুরুন্নবীর বাড়ি ভিটা গিলে খেয়েছে ধরলা। 

গ্রামে অর্ধশত যুবক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজ না করলে সবার বাড়ি ভেসে যেতো বানের পানিতে। খড়ের গাদা, টিউবয়েল বাঁশঝাড় সব ভেসে গেছে ধরলার গর্ভে।


স্বেচ্ছাসবক আল আমিন শাওন বলেন, ‘আমরা স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। হঠাৎ কান্না আর চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখি পারের বড় বড় খণ্ড ধবসে পড়ছে। আমরা অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি। ঘর-বাড়ি ও মালপত্র সরাতে সাহায্য করি। এখনো প্রতিদিন এই কাজ করে যাচ্ছি।’ 

একই কথা বলেন, নাজমুল ইসলাম, বিপুল মিয়া, নাহিদ আলমসহ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। 


এই গ্রামের দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরো অর্ধশত পরিবার ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো গ্রাম। শুধু তাই নয় যেভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ভেঙে যেতে পারে এ বছরই। 


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, জয়কুমর কামারপাড়া এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ এলাকার তালিকায় ছিলো না। হঠাৎ করে চলতি বছর এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ব্যপারে ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগগির ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন