গৌরীপুরে শালীহর গণহত্যা দিবস পালিত
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
২১ আগস্ট ২০২০, ২২:৩৮:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে যুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা স্বজন সমাবেশের সভাপতি মো. এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা স্বজনের সাহিত্য সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুরে যুগান্তর প্রতিনিধি মো. রইছ উদ্দিন, কবি অনামিকা সরকার, উপজেলা স্বজন সমাবেশের শিক্ষা সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপা দাস, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক চায়না রানী সরকার প্রমুখ।
১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ হন মোহিনী কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র, নবর আলী, কিরদা সুন্দুরী, শচীন্দ্র চন্দ্র দাস, তারিনী মোহন দাস, খৈলাশ চন্দ্র দাস, শক্রোগ্ন দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র দাস, কর মোহন সরকার, দেবেন্দ্রে চন্দ্র দাস, কামিনী মোহন দাস।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে ডা. বাদল চন্দ্র কর সেখান থেকে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে ছিলেন।
পরবর্তীতে ডা. বাদল চন্দ্র কর তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ডা. বাদল চন্দ্র কর ২০১৪ সালে মারা যান। তার ছেলে অমল কান্তি কর বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭১ সালের সালের এই দিনে ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ট্রেন শালীহর গ্রামে এসে থেমে যায়। পাকবাহিনীর দুটি প্লাটুন একটি দক্ষিণমুখী আরেকটি উত্তরমুখী যাত্রা করে। উত্তরে এসেই প্রথমে ছাবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধরে নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায় বাড়িতে পাকবাহিনী প্রথম অগ্নিসংযোগ করে। এরপর শালীহর গ্রামের ৪০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বিসকা ঠাকুরবাড়ির রেন্ট্রি গাছতলায় কোমড়ে দরি বেঁধে ৩শ' মানুষকে আটক করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সেখানে যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এমন ১৩ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। শালীহর বধ্যভূমিতে গ্রামবাসীকে ডেকে এনে বন্ধুকের বাট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে চালানো হয় নির্যাতন। পাকবাহিনীর আক্রমণে পুরোগ্রামটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। শহীদদের স্মরণে প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। নির্মাণকালীন অনিয়ম পরবর্তীতে অযত্ন অবহেলা ও সংস্কার না করায় স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে।
এছাড়াও বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টঘর গ্রামে থানা আ'লীগের সভাপতি মৃত জমসেদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মৃত আব্দুস ছালাম ফকির, হামিদ ভূইয়া, হেকিম ভূইয়াসহ শতাধিক ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। বেতান্দর গ্রামের মুসলেম উদ্দিন, আবু ছিদ্দিক, আবুল কালাম, জহর আলী, আ. জব্বার, সুলতান মিয়া ও ভাদেরা গ্রামের মফিজ উদ্দিন, আ. জলিল, আব্দুল হামিদ, আব্দুল আজিজসহ পুরোগ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সহনাটী ইউনিয়নের বাঙ্গুরহাটী গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ তালুকদারের বাড়িসহ হতিয়র পালপাড়া শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। মাওহা ইউনিয়নের ধেরুয়া কড়েহা গ্রামের ছৈয়দ আলীর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী রাজাকাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজাকার ও পুলিশের ৮ জন সদস্য নিহত হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গৌরীপুরে শালীহর গণহত্যা দিবস পালিত

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে যুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা স্বজন সমাবেশের সভাপতি মো. এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা স্বজনের সাহিত্য সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুরে যুগান্তর প্রতিনিধি মো. রইছ উদ্দিন, কবি অনামিকা সরকার, উপজেলা স্বজন সমাবেশের শিক্ষা সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপা দাস, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক চায়না রানী সরকার প্রমুখ।
১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ হন মোহিনী কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র, নবর আলী, কিরদা সুন্দুরী, শচীন্দ্র চন্দ্র দাস, তারিনী মোহন দাস, খৈলাশ চন্দ্র দাস, শক্রোগ্ন দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র দাস, কর মোহন সরকার, দেবেন্দ্রে চন্দ্র দাস, কামিনী মোহন দাস।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে ডা. বাদল চন্দ্র কর সেখান থেকে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে ছিলেন।
পরবর্তীতে ডা. বাদল চন্দ্র কর তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ডা. বাদল চন্দ্র কর ২০১৪ সালে মারা যান। তার ছেলে অমল কান্তি কর বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭১ সালের সালের এই দিনে ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ট্রেন শালীহর গ্রামে এসে থেমে যায়। পাকবাহিনীর দুটি প্লাটুন একটি দক্ষিণমুখী আরেকটি উত্তরমুখী যাত্রা করে। উত্তরে এসেই প্রথমে ছাবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধরে নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায় বাড়িতে পাকবাহিনী প্রথম অগ্নিসংযোগ করে। এরপর শালীহর গ্রামের ৪০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বিসকা ঠাকুরবাড়ির রেন্ট্রি গাছতলায় কোমড়ে দরি বেঁধে ৩শ' মানুষকে আটক করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সেখানে যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এমন ১৩ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। শালীহর বধ্যভূমিতে গ্রামবাসীকে ডেকে এনে বন্ধুকের বাট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে চালানো হয় নির্যাতন। পাকবাহিনীর আক্রমণে পুরোগ্রামটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। শহীদদের স্মরণে প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। নির্মাণকালীন অনিয়ম পরবর্তীতে অযত্ন অবহেলা ও সংস্কার না করায় স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে।
এছাড়াও বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টঘর গ্রামে থানা আ'লীগের সভাপতি মৃত জমসেদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মৃত আব্দুস ছালাম ফকির, হামিদ ভূইয়া, হেকিম ভূইয়াসহ শতাধিক ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। বেতান্দর গ্রামের মুসলেম উদ্দিন, আবু ছিদ্দিক, আবুল কালাম, জহর আলী, আ. জব্বার, সুলতান মিয়া ও ভাদেরা গ্রামের মফিজ উদ্দিন, আ. জলিল, আব্দুল হামিদ, আব্দুল আজিজসহ পুরোগ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সহনাটী ইউনিয়নের বাঙ্গুরহাটী গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ তালুকদারের বাড়িসহ হতিয়র পালপাড়া শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। মাওহা ইউনিয়নের ধেরুয়া কড়েহা গ্রামের ছৈয়দ আলীর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী রাজাকাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজাকার ও পুলিশের ৮ জন সদস্য নিহত হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।