মসজিদে বিস্ফোরণে ইমাম মুয়াজ্জিনের মৃত্যুতে কুমিল্লায় শোকের মাতম
আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:৫৮:০১ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত কুমিল্লার তিন ইমাম মুয়াজ্জিনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
ওই মসজিদের নিহত ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী জেলার মুরাদনগর উপজেলার পুটিয়াজুড়ি গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে, মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বদরপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। এ বিস্ফোরণে মুয়াজ্জিনের বড় ছেলে জোনায়েদও মারা গেছেন।
রোববার রাতে নিহতদের লাশ নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হলেও স্বজনসহ এলাকাবাসীর মাঝে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় অত্যন্ত ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ইমাম নেছারী এবং মুয়াজ্জিন দেলোয়ার এবং তার ছেলে। এমন স্বজন এবং প্রতিবেশীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ গোটা এলাকা।
এর আগে মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন শুক্রবার রাত আড়াইটায় ও তার ছেলে জোনায়েদ শনিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। আর শনিবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে মারা যান ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারি।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার রাতে মাওলানা আবদুল মালেক নেছারীর জানাজায় বিপুলসংখ্যক লোকজন ভিড় করেন। তার লাশ গ্রামের বাড়ি আসছে এমন খবরে আশপাশের কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক লোক তাকে একনজর দেখার জন্য জড়ো হন।
মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা মাদ্রাসা থেকে দাখিল, বাখরনগর মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল এবং সোনাকান্দা মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। মৃত্যুকালে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অনেক স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
পুটিয়াজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন, মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী সপরিবারে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল আত্মিক সম্পর্ক। তিনি সব ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন ভদ্র ও বিনয়ী গুণের অধিকারী। আকস্মিক দুর্ঘটনায় তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহতের বৃদ্ধ মা কমলা খাতুন (৮২) বলেন, দীর্ঘ ২২-২৩ বছর যাবত আমার ছেলে ওই মসজিদে ইমামতি করতেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে আমার প্রাণপ্রিয় ছেলের এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখতে হবে কল্পনাও করি নাই। মনে হচ্ছে আমার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় এক বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মসজিদে বিস্ফোরণে ইমাম মুয়াজ্জিনের মৃত্যুতে কুমিল্লায় শোকের মাতম
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত কুমিল্লার তিন ইমাম মুয়াজ্জিনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তাদের মৃত্যুতে এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
ওই মসজিদের নিহত ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী জেলার মুরাদনগর উপজেলার পুটিয়াজুড়ি গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে, মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বদরপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। এ বিস্ফোরণে মুয়াজ্জিনের বড় ছেলে জোনায়েদও মারা গেছেন।
রোববার রাতে নিহতদের লাশ নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হলেও স্বজনসহ এলাকাবাসীর মাঝে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় অত্যন্ত ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ইমাম নেছারী এবং মুয়াজ্জিন দেলোয়ার এবং তার ছেলে। এমন স্বজন এবং প্রতিবেশীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ গোটা এলাকা।
এর আগে মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন শুক্রবার রাত আড়াইটায় ও তার ছেলে জোনায়েদ শনিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। আর শনিবার রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে মারা যান ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেক নেছারি।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার রাতে মাওলানা আবদুল মালেক নেছারীর জানাজায় বিপুলসংখ্যক লোকজন ভিড় করেন। তার লাশ গ্রামের বাড়ি আসছে এমন খবরে আশপাশের কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক লোক তাকে একনজর দেখার জন্য জড়ো হন।
মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা মাদ্রাসা থেকে দাখিল, বাখরনগর মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল এবং সোনাকান্দা মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। মৃত্যুকালে তিনি বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অনেক স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
পুটিয়াজুরি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন, মাওলানা আবদুল মালেক নেছারী সপরিবারে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল আত্মিক সম্পর্ক। তিনি সব ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছিলেন ভদ্র ও বিনয়ী গুণের অধিকারী। আকস্মিক দুর্ঘটনায় তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহতের বৃদ্ধ মা কমলা খাতুন (৮২) বলেন, দীর্ঘ ২২-২৩ বছর যাবত আমার ছেলে ওই মসজিদে ইমামতি করতেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে আমার প্রাণপ্রিয় ছেলের এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখতে হবে কল্পনাও করি নাই। মনে হচ্ছে আমার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় এক বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।