বেতন দিতে পারেনি, পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হল শিশুছাত্রীকে
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৩ নভেম্বর ২০২০, ২০:২৪:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
শিশু মাবিয়া আক্তার (৮); বন্দরের ঢাকেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সোমবার মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে কিন্তু পরীক্ষা দেয়া হয়নি মাবিয়ার।
বেতন দিতে পারেনি বলে পরীক্ষা দিতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই মন খারাপ করে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছে শিশু মাবিয়া।
মাবিয়ার মা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাড়ি বন্দরের তালতলা এলাকায়। স্বামী একজন রিকশাচালক। তাদের পরিবারে রয়েছে আর্থিক দৈন্যতা। তবু খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে পড়াচ্ছেন স্কুলে। সোমবার মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু স্কুলে অ্যাকাউন্ট শাখা তাদের হাতে এক বছরের বকেয়া বেতনের এক হাজার ৫৪০ টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন।
তিনি জানান, এ টাকা পরিশোধ না করলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে না বলে স্কুল থেকে জানিয়েছে।
আয়েশা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এতগুলো টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মেয়েকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করিয়েই বাড়ি ফিরে আসি।
এ ব্যাপারে ঢাকেশ্বরী মিলস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি (আয়েশা আক্তার) হয়তো অ্যাকাউন্ট সেকশনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের কাছে আসেননি। বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর আংশিক বা পুরোপুরি বেতন মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাবিয়ার কাছে বেশি টাকা চাওয়ার তথ্য সঠিক নয়।
বেতন কমানোর দাবিতে ঢাকেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে বেতন মওকুফ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. ইউসুফ মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার কিছু ছাত্র ও অভিভাবক বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে যারা টাকা দিতে সমর্থ নয় তাদের মওকুফ করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেতন কর্তন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ বলেন, এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। যারা বেতন দিতে অক্ষম তারা আবেদন করলে তিন সদস্যের কমিটি তাদের বেতন মওকুফের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক নন-এমপিওভুক্ত। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা থেকে তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়। শিক্ষার্থীরা বেতন না দিলে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, বিদ্যালয়ে বেতন নিতে পারবেন, তবে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হলে বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বেতন দিতে পারেনি, পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হল শিশুছাত্রীকে
শিশু মাবিয়া আক্তার (৮); বন্দরের ঢাকেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সোমবার মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে কিন্তু পরীক্ষা দেয়া হয়নি মাবিয়ার।
বেতন দিতে পারেনি বলে পরীক্ষা দিতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই মন খারাপ করে মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছে শিশু মাবিয়া।
মাবিয়ার মা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাড়ি বন্দরের তালতলা এলাকায়। স্বামী একজন রিকশাচালক। তাদের পরিবারে রয়েছে আর্থিক দৈন্যতা। তবু খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে পড়াচ্ছেন স্কুলে। সোমবার মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু স্কুলে অ্যাকাউন্ট শাখা তাদের হাতে এক বছরের বকেয়া বেতনের এক হাজার ৫৪০ টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন।
তিনি জানান, এ টাকা পরিশোধ না করলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে না বলে স্কুল থেকে জানিয়েছে।
আয়েশা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এতগুলো টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মেয়েকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করিয়েই বাড়ি ফিরে আসি।
এ ব্যাপারে ঢাকেশ্বরী মিলস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি (আয়েশা আক্তার) হয়তো অ্যাকাউন্ট সেকশনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের কাছে আসেননি। বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর আংশিক বা পুরোপুরি বেতন মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাবিয়ার কাছে বেশি টাকা চাওয়ার তথ্য সঠিক নয়।
বেতন কমানোর দাবিতে ঢাকেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে বেতন মওকুফ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. ইউসুফ মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার কিছু ছাত্র ও অভিভাবক বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে যারা টাকা দিতে সমর্থ নয় তাদের মওকুফ করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেতন কর্তন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ বলেন, এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। যারা বেতন দিতে অক্ষম তারা আবেদন করলে তিন সদস্যের কমিটি তাদের বেতন মওকুফের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক নন-এমপিওভুক্ত। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা থেকে তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়। শিক্ষার্থীরা বেতন না দিলে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, বিদ্যালয়ে বেতন নিতে পারবেন, তবে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হলে বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।