কারাগারে হাজতির মৃত্যু, প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার
০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪১:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ
হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ড আদেশ পাওয়া আসামি মোস্তফার কক্সবাজার জেলা কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আবু তাহের, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ফখরুল ইসলাম ও কারারক্ষী বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোস্তফার ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মো. হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে এ ঘটনায় আগামী ৩ কর্মদিবসে ‘লিখিত কৈফিয়ত’ চাওয়া হয়েছে। কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে কারারক্ষী ইকবাল হোসেনকেও। কক্সবাজার কারা সুপার নেছার আলম বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য জানান।
জেল সুপার বলেন, কারাগারে বন্দির আত্মহত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। হাজতি-কয়েদিরা আমাদের আমানত। তাদের দেখভালের জন্য ২৪ ঘণ্টা কারারক্ষী রয়েছেন। এত তদারকির মাঝে কীভাবে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যা করলেন তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
তাই ওই সময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। যিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং যারা দায়িত্বে এড়াতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
একই দিন বিকালে বিধি অনুসারে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাগারে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যার ঘটনার পরপরই দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
একটিতে ডেপুটি জেলার সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট খন্দকার আজাদুর রহমানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেল সুপার। একই ঘটনায় কারা হাসপাতালের ডা. মো. শামীম রাসেলকে প্রধান ও ডা. শামীম রেজাকে সদস্য করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
কারা কর্তৃপক্ষের কমিটি ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক তদন্ত কমিটি করে তদন্ত চালাচ্ছেন। কক্সবাজার এসেছেন ডিআইজি প্রিজন। তিনিও আলাদাভাবে তদন্তকাজ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার নেছার আলম।
কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান আজাদকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাজতি মোস্তফা রহস্যজনকভাবে জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার সন্ধ্যায় মোস্তফা ফাঁসিতে আত্মহত্যায় মারা গেছেন বলে দাবি করে কারা কর্তৃপক্ষ।
তবে কারাগারে ফাঁসি দেয়ার মতো কোনো অবস্থা বন্দিদের পক্ষে থাকে না বলে দাবি করেছেন কারাভোগ করে বের হওয়া অনেক বন্দি। এ কারণে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দেয়। হাজতি মোস্তফা (২৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার বশির আহমেদের ছেলে।
মারামারি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৮ নভেম্বর মোস্তফা কারাগারে আসেন। তার মামলায় ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি ছিল। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন। আদালত থেকে তাকে কারাগারে আনার পর তার কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পেয়ে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাজতি মোস্তফাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন- সোমবার রাত ৮টার দিকে মোস্তফা নামের এক বন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
কারাগারে হাজতির মৃত্যু, প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ড আদেশ পাওয়া আসামি মোস্তফার কক্সবাজার জেলা কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আবু তাহের, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ফখরুল ইসলাম ও কারারক্ষী বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোস্তফার ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া কারাগারের প্রধান কারারক্ষী মো. হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে এ ঘটনায় আগামী ৩ কর্মদিবসে ‘লিখিত কৈফিয়ত’ চাওয়া হয়েছে। কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে কারারক্ষী ইকবাল হোসেনকেও। কক্সবাজার কারা সুপার নেছার আলম বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য জানান।
জেল সুপার বলেন, কারাগারে বন্দির আত্মহত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। হাজতি-কয়েদিরা আমাদের আমানত। তাদের দেখভালের জন্য ২৪ ঘণ্টা কারারক্ষী রয়েছেন। এত তদারকির মাঝে কীভাবে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যা করলেন তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
তাই ওই সময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। যিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং যারা দায়িত্বে এড়াতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
একই দিন বিকালে বিধি অনুসারে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাগারে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যার ঘটনার পরপরই দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
একটিতে ডেপুটি জেলার সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট খন্দকার আজাদুর রহমানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেল সুপার। একই ঘটনায় কারা হাসপাতালের ডা. মো. শামীম রাসেলকে প্রধান ও ডা. শামীম রেজাকে সদস্য করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
কারা কর্তৃপক্ষের কমিটি ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক তদন্ত কমিটি করে তদন্ত চালাচ্ছেন। কক্সবাজার এসেছেন ডিআইজি প্রিজন। তিনিও আলাদাভাবে তদন্তকাজ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার নেছার আলম।
কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান আজাদকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাজতি মোস্তফা রহস্যজনকভাবে জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার সন্ধ্যায় মোস্তফা ফাঁসিতে আত্মহত্যায় মারা গেছেন বলে দাবি করে কারা কর্তৃপক্ষ।
তবে কারাগারে ফাঁসি দেয়ার মতো কোনো অবস্থা বন্দিদের পক্ষে থাকে না বলে দাবি করেছেন কারাভোগ করে বের হওয়া অনেক বন্দি। এ কারণে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দেয়। হাজতি মোস্তফা (২৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার বশির আহমেদের ছেলে।
মারামারি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৮ নভেম্বর মোস্তফা কারাগারে আসেন। তার মামলায় ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি ছিল। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন। আদালত থেকে তাকে কারাগারে আনার পর তার কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পেয়ে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাজতি মোস্তফাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন- সোমবার রাত ৮টার দিকে মোস্তফা নামের এক বন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।