প্রতিবন্ধী ছেলের কাঁধে লাঙল দিয়ে চাষ, কৃষক পেলেন পাওয়ার টিলার
নওগাঁ প্রতিনিধি
০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৫৩:১৪ | অনলাইন সংস্করণ
গরুর বদলে প্রতিবন্ধী ছেলের কাঁধে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করা সেই কৃষক পেলেন পাওয়ার টিলার। ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে একটি পাওয়ার টিলার দেয়া হয়েছে।
ওই অসহায় কৃষকের নাম মনির উদ্দিন। তিনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের পার-নূরুল্যাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নূরুল্যাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ মাঠে পাওয়ার টিলারটি প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
জানা গেছে, দরিদ্র কৃষক মনির উদ্দিনের সংসারে কোনো অভাব ছিল না। ছিল ফসলি জমি ও হালের বলদ। তা দিয়ে সুখেই কেটে যেত তার সংসার; কিন্তু বছর বছর নদীভাঙনের ফলে সামান্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন বসতবাড়ি ও ফসলিসহ তার মোট জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে আবাদি জমি ১৫ শতাংশ। এই সামান্য পরিমাণ জমিতে তিনি সারা বছরই আবাদ করতেন। এছাড়া সরকারি প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত ছিলেন তিনি।
নদীভাঙন ও ঋণে জর্জরিত হয়ে প্রায় এক যুগ আগে হালের বলদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক মনির উদ্দিন। এরপর বলদের দায়িত্ব পড়ে প্রতিবন্ধী ছেলে মোখলেছুর রহমানের ঘাড়ে। অভাবের তাড়নায় বাহির থেকে বেশি দাম দিয়ে হালচাষ করার মতো তাদের সমর্থ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ছেলে মোখলেছুর রহমান লাঙলের মাথায় ও কাঁধে দড়ি বেঁধে টানতেন, আর বৃদ্ধ বাবা মনির উদ্দিন হালের মুঠো ধরে থাকতেন।
গরুর বদলে নিজেরাই কষ্ট করে সামান্য এ জমিতে চাষাবাদ করতেন। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় এক যুগ। তাদের এ কষ্টের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এছাড়াও দরিদ্র কৃষক মনির উদ্দিনের প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
আবেগাপ্লুত কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, আমার খুব ভালো লাগতেছে। আজ থেকে প্রায় এক যুগের কষ্ট আমার দূর হল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যেন সব সময় সুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাকে যেন দীর্ঘজীবী করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, নদীভাঙন ও ঋণে জর্জরিত হয়ে হালের গরু বিক্রি করে প্রতিবন্ধী ছেলেকে দিয়ে জোয়াল টানাতে বাধ্য হওয়া অসহায় কৃষকের একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম আছে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ সৌনিকদের জন্য ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’। এর পক্ষ থেকে অসহায় কৃষক ভাইকে শেখ হাসিনার ভালোবাসার উপহার হিসেবে একটি উন্নতমানের পাওয়ার টিলার প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হালের বলদ না দিয়ে পাওয়ার টিলার দেয়া হয়েছে। এতে তিনি নিজের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি আশপাশের জমি চাষ করে আয় করতে পারবেন। ওই এলাকায় আরও অনেক অসহায় কৃষক আছেন তাদেরও তিনি (কৃষক) সহযোগিতা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের টিমের যাত্রা প্রায় দেড় মাস। এই সামান্য সময়ে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ। আমরা সবাই মিলে যার যা অবস্থান থেকে সহযোগিতা করে যাব। ইতোমধ্যে এ টিমের বিষয়ে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড পরিচালক রাকিবুর ইসলাম রনি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান, এসিআই মটরস লিমিটেড রাজশাহী বিভাগীয় জোনাল ম্যানেজার মেহেদী হাসান, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার কৃষিবিদ সুজন রহমান, রিকোভারি অফিসার এরশাদ হোসেন, সার্ভিস টিমের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার কংকর চন্দ্র মোদকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রতিবন্ধী ছেলের কাঁধে লাঙল দিয়ে চাষ, কৃষক পেলেন পাওয়ার টিলার
গরুর বদলে প্রতিবন্ধী ছেলের কাঁধে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করা সেই কৃষক পেলেন পাওয়ার টিলার। ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে একটি পাওয়ার টিলার দেয়া হয়েছে।
ওই অসহায় কৃষকের নাম মনির উদ্দিন। তিনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার নূরুল্যাবাদ ইউনিয়নের পার-নূরুল্যাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নূরুল্যাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ মাঠে পাওয়ার টিলারটি প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
জানা গেছে, দরিদ্র কৃষক মনির উদ্দিনের সংসারে কোনো অভাব ছিল না। ছিল ফসলি জমি ও হালের বলদ। তা দিয়ে সুখেই কেটে যেত তার সংসার; কিন্তু বছর বছর নদীভাঙনের ফলে সামান্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন বসতবাড়ি ও ফসলিসহ তার মোট জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে আবাদি জমি ১৫ শতাংশ। এই সামান্য পরিমাণ জমিতে তিনি সারা বছরই আবাদ করতেন। এছাড়া সরকারি প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত ছিলেন তিনি।
নদীভাঙন ও ঋণে জর্জরিত হয়ে প্রায় এক যুগ আগে হালের বলদ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক মনির উদ্দিন। এরপর বলদের দায়িত্ব পড়ে প্রতিবন্ধী ছেলে মোখলেছুর রহমানের ঘাড়ে। অভাবের তাড়নায় বাহির থেকে বেশি দাম দিয়ে হালচাষ করার মতো তাদের সমর্থ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে ছেলে মোখলেছুর রহমান লাঙলের মাথায় ও কাঁধে দড়ি বেঁধে টানতেন, আর বৃদ্ধ বাবা মনির উদ্দিন হালের মুঠো ধরে থাকতেন।
গরুর বদলে নিজেরাই কষ্ট করে সামান্য এ জমিতে চাষাবাদ করতেন। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় এক যুগ। তাদের এ কষ্টের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এছাড়াও দরিদ্র কৃষক মনির উদ্দিনের প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
আবেগাপ্লুত কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, আমার খুব ভালো লাগতেছে। আজ থেকে প্রায় এক যুগের কষ্ট আমার দূর হল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যেন সব সময় সুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাকে যেন দীর্ঘজীবী করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, নদীভাঙন ও ঋণে জর্জরিত হয়ে হালের গরু বিক্রি করে প্রতিবন্ধী ছেলেকে দিয়ে জোয়াল টানাতে বাধ্য হওয়া অসহায় কৃষকের একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম আছে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ সৌনিকদের জন্য ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’। এর পক্ষ থেকে অসহায় কৃষক ভাইকে শেখ হাসিনার ভালোবাসার উপহার হিসেবে একটি উন্নতমানের পাওয়ার টিলার প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হালের বলদ না দিয়ে পাওয়ার টিলার দেয়া হয়েছে। এতে তিনি নিজের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি আশপাশের জমি চাষ করে আয় করতে পারবেন। ওই এলাকায় আরও অনেক অসহায় কৃষক আছেন তাদেরও তিনি (কৃষক) সহযোগিতা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের টিমের যাত্রা প্রায় দেড় মাস। এই সামান্য সময়ে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ। আমরা সবাই মিলে যার যা অবস্থান থেকে সহযোগিতা করে যাব। ইতোমধ্যে এ টিমের বিষয়ে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নর্থ বেঙ্গল সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড পরিচালক রাকিবুর ইসলাম রনি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মেহেদী হাসান, এসিআই মটরস লিমিটেড রাজশাহী বিভাগীয় জোনাল ম্যানেজার মেহেদী হাসান, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার কৃষিবিদ সুজন রহমান, রিকোভারি অফিসার এরশাদ হোসেন, সার্ভিস টিমের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার কংকর চন্দ্র মোদকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।