মহালছড়িতে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে সাবাড়
সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:০২:০১ | অনলাইন সংস্করণ
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় থামছেই না পাহাড়-কর্তন। পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই পাহাড় কাটছেন প্রভাবশালীরা। উন্নয়নকাজের দোহাই দিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে পাহাড়কাটা।
জেলার মহালছড়িতে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন শীত। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী পাহাড়কাটা অবৈধ হলেও তা তোয়াক্কা করছেন না এই জনপ্রতিনিধি। তিনি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল পাহাড় কাটছেন যুগান্তরের কাছে এমন তথ্য আসে। সরেজমিন পরিদর্শনের পর এর সত্যতা পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা গেছে, মহালছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় ১৮০০ মিটার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ ব্যয় তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা। ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় সিকদার এন্টারপ্রাইজ ও কবি রঞ্জন ত্রিপুরা।
তবে উপঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল। আর এই রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি।
মহালছড়ি-চোংড়াছড়ি সড়কের শান্তিনগর এলাকায় খাড়া পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন তিনি। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে পাহাড় কাটলেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। প্রতিদিনই মাটিবাহী ট্রাক্টর পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় শত ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের একটি বড় অংশ কেটে নিয়েছেন তিনি। পাহাড়কাটা এখনও অব্যাহত রয়েছে। খাড়াভাবে পাহাড় কাটায় আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ের বাকি অংশ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়ের মালিক মো. আব্দুর রহিম জানান, নির্মাণাধীন রাস্তা সমান করার জন্য পাহাড়ের মাটি কাটছেন রতন চেয়ারম্যান। বেশ কয়েক দিন ধরে কাটার পর পাহাড়ের একটি বড় অংশ কাটা শেষ হয়েছে।
এ সময় তিনিও বলেন, এতে বর্ষায় পাহাড় ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড়কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এমনটি চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটা সম্পর্কে বাধা-নিষেধ রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন ও/বা মোচন করা যাবে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন শীল বলেন, আমি রাস্তার কাজ করছি। রাস্তা সমান করার জন্য পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে তিনি পাহাড়কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন এবং পাহাড়কাটা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দত্ত জানান, পাহাড়কাটার বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মহালছড়িতে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে সাবাড়
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় থামছেই না পাহাড়-কর্তন। পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই পাহাড় কাটছেন প্রভাবশালীরা। উন্নয়নকাজের দোহাই দিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে পাহাড়কাটা।
জেলার মহালছড়িতে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন শীত। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী পাহাড়কাটা অবৈধ হলেও তা তোয়াক্কা করছেন না এই জনপ্রতিনিধি। তিনি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল পাহাড় কাটছেন যুগান্তরের কাছে এমন তথ্য আসে। সরেজমিন পরিদর্শনের পর এর সত্যতা পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা গেছে, মহালছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় ১৮০০ মিটার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ ব্যয় তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা। ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় সিকদার এন্টারপ্রাইজ ও কবি রঞ্জন ত্রিপুরা।
তবে উপঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল। আর এই রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি।
মহালছড়ি-চোংড়াছড়ি সড়কের শান্তিনগর এলাকায় খাড়া পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন তিনি। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে পাহাড় কাটলেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। প্রতিদিনই মাটিবাহী ট্রাক্টর পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় শত ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের একটি বড় অংশ কেটে নিয়েছেন তিনি। পাহাড়কাটা এখনও অব্যাহত রয়েছে। খাড়াভাবে পাহাড় কাটায় আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ের বাকি অংশ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়ের মালিক মো. আব্দুর রহিম জানান, নির্মাণাধীন রাস্তা সমান করার জন্য পাহাড়ের মাটি কাটছেন রতন চেয়ারম্যান। বেশ কয়েক দিন ধরে কাটার পর পাহাড়ের একটি বড় অংশ কাটা শেষ হয়েছে।
এ সময় তিনিও বলেন, এতে বর্ষায় পাহাড় ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড়কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এমনটি চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড় কাটা সম্পর্কে বাধা-নিষেধ রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন ও/বা মোচন করা যাবে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন শীল বলেন, আমি রাস্তার কাজ করছি। রাস্তা সমান করার জন্য পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে তিনি পাহাড়কাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন এবং পাহাড়কাটা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানান।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দত্ত জানান, পাহাড়কাটার বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।