বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার ট্রাক
কামাল হোসেন, বেনাপোল (যশোর)
০২ মার্চ ২০২১, ২১:৪৮:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানিপণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজার ট্রাক। ফলে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ ধরনের জটিলতা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বন্দর দিয়ে প্রতি বছর ভারতের সঙ্গে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে তাকে। বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস।
দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭-৮শ' ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩-৪শ' ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আড্য ডাকু কালিতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্ক তৈরি করে সেখানে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
প্রতি ট্রাক থেকে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি ট্রাক বাংলাদেশে আমদানি হতে ১৫-২০ দিন করে সময় লাগছে। যার পুরো চাঁদার অর্থ বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে মোটা অংকের লোকসানের কথা ভেবে অনেকেই বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে আসে এ বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।
গত ২ মার্চ সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যজট লেগে রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরের ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে। পেট্রাপোলের কালিতলা পার্কিং থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে এখন প্রায় ১৫ দিন লেগে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে পণ্য আমদানি করতে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এ বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিংয়ে বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে আছে। আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে ও ট্রাকসংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার ট্রাক
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানিপণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজার ট্রাক। ফলে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ ধরনের জটিলতা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বন্দর দিয়ে প্রতি বছর ভারতের সঙ্গে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে তাকে। বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস।
দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭-৮শ' ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩-৪শ' ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর আড্য ডাকু কালিতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্ক তৈরি করে সেখানে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
প্রতি ট্রাক থেকে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি ট্রাক বাংলাদেশে আমদানি হতে ১৫-২০ দিন করে সময় লাগছে। যার পুরো চাঁদার অর্থ বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে মোটা অংকের লোকসানের কথা ভেবে অনেকেই বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে আসে এ বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।
গত ২ মার্চ সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যজট লেগে রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরের ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে। পেট্রাপোলের কালিতলা পার্কিং থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে এখন প্রায় ১৫ দিন লেগে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়।
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে পণ্য আমদানি করতে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এ বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিংয়ে বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে আছে। আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে ও ট্রাকসংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি।