প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনালাপ, ঘর পেলেন শ্রেষ্ঠ শ্রোতা প্রতিবন্ধী নুরী
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:১২:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
স্বাভাবিক শিশু হয়ে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও ৩-৪ বছর বয়সে জটিল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টি হারায় আয়েশা আক্তার নুরী। আর্থিক সংকটে সঠিক চিকিৎসার অভাবে শারীরিকভাবেও দিন দিন প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সংসার টেকেনি।
তারপর থেকে সামান্য সুপারি ব্যবসায়ী বাবার পরিবারে ঠিকানা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় আর বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান শোনে কাটে নুরীর সময়। ২০১৬ সালের বিশ্ব বেতার দিবস ও শ্রোতা ক্লাব সম্মেলনে আগের বছরের শ্রেষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে পুরস্কার জিতেন নুরী।
সিনেরং কুইজ প্রতিযোগিতার দশম পর্বেও জিতেন পুরস্কার। সেই সুবাদে নুরী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত রান্নাঘর, টয়লেট, থাকার দুইটি কক্ষ ও বারান্দাসহ একটি পাকা হাফবিল্ডিং পেয়েছেন। ঘরের সঙ্গে ওই জমিটুকুও এখন থেকে তার হয়ে গেছে।
নিজ নামে জমি আর নিশ্চিত ঠিকানা পেয়ে নুরী খুব খুশি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে ধন্য নুরী ও নুরীর পরিবার।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বেরিবাইদ ইউনিয়নের চুনিয়া মৌজার নিভৃত এলাকা ময়ূরমারার দরিদ্র আরশেদ আলীর মেয়ে আয়েশা আক্তার নুরীর প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার প্রাপ্তির পেছনে আছে একটি ছোট্ট ফোনালাপ অনুষ্ঠানের ভূমিকা। নুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে একটি বেতার ফোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করার সময় মোবাইলে যুক্ত হয়ে প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেনের কাছে তুলে ধরে নিজের অবস্থার কথা।
পিডি মাহবুব হোসেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত মধুপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রকৃত চিত্র জানাতে নির্দেশ দেন। ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে নুরীর জন্য বরাদ্দ হয় ঘর।
নির্মাণসহ সব প্রক্রিয়া শেষে সেই ঘর ও জমির দলিল খাজনা খারিজের দাখিলা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুরীর বাড়ি যাওয়া হয়। ইউএনও আরিফা জহুরার নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমএ করিম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব আল রানাসহ গণমাধ্যম কর্মীদের একটি টিম মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নুরীর বাড়িতে গিয়ে ঘর ও ঘরের মালিকানা স্বত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান জুলহাস উদ্দিনসহ স্থানীয় অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কথা হয় নুরীর মা অজুফা বেগমের সঙ্গে। তিনি বললেন, শিশু নুরী অসুখে পড়ার পর অনেক চেষ্টা করেছি। ভালো করতে পারিনি। ছানি পড়ে চোখ অন্ধ হয়ে গেল। চলতে ফিরতে অনেক ব্যথা পায়। আল্লাহর দয়ায় শেখ হাসিনার মাধ্যমে ওর এমন একটা নিরাপদ গতি হওয়ায় আমরা খুশি।
প্রতিবেশী খলিলুর রহমান মনে করেন- নুরীর কষ্ট লাঘব মানেই পুরো পরিবারের কষ্ট লাঘব হওয়া। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার সত্যি যথোপযুক্ত হয়েছে।
বাবা আরশেদ আলী স্থানীয় মোটের বাজারের সামান্য সুপারি ব্যবসায়ী। মেয়ের নানা দাবি পূরণে সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করেন তিনি। কোনো চাওয়া অপূরণ রাখেন না। তিন ছেলে আর এই মেয়েটাকে নিয়েই তার সংসার।
আরশেদ আলী জানান, নুরীর খুশি বা ভালো দিকটার প্রতি আমাদের সবার নজর। ওর খুশিতে আমাদের খুশি। ঘর পেয়ে ওর অনেক আনন্দ। আমরাও আনন্দিত।
ইউএনও আরিফা জহুরা জানান, পিডি স্যারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এ ঘরটি আয়েশা আক্তার ওরফে নুরীর মতো সমাজের পিছিয়ে পড়া অথচ মেধাবীর হাতে তুলে দিতে পেরে আমরাও তৃপ্ত।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ফোনালাপ, ঘর পেলেন শ্রেষ্ঠ শ্রোতা প্রতিবন্ধী নুরী
স্বাভাবিক শিশু হয়ে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও ৩-৪ বছর বয়সে জটিল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টি হারায় আয়েশা আক্তার নুরী। আর্থিক সংকটে সঠিক চিকিৎসার অভাবে শারীরিকভাবেও দিন দিন প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সংসার টেকেনি।
তারপর থেকে সামান্য সুপারি ব্যবসায়ী বাবার পরিবারে ঠিকানা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় আর বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান শোনে কাটে নুরীর সময়। ২০১৬ সালের বিশ্ব বেতার দিবস ও শ্রোতা ক্লাব সম্মেলনে আগের বছরের শ্রেষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে পুরস্কার জিতেন নুরী।
সিনেরং কুইজ প্রতিযোগিতার দশম পর্বেও জিতেন পুরস্কার। সেই সুবাদে নুরী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত রান্নাঘর, টয়লেট, থাকার দুইটি কক্ষ ও বারান্দাসহ একটি পাকা হাফবিল্ডিং পেয়েছেন। ঘরের সঙ্গে ওই জমিটুকুও এখন থেকে তার হয়ে গেছে।
নিজ নামে জমি আর নিশ্চিত ঠিকানা পেয়ে নুরী খুব খুশি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে ধন্য নুরী ও নুরীর পরিবার।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বেরিবাইদ ইউনিয়নের চুনিয়া মৌজার নিভৃত এলাকা ময়ূরমারার দরিদ্র আরশেদ আলীর মেয়ে আয়েশা আক্তার নুরীর প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার প্রাপ্তির পেছনে আছে একটি ছোট্ট ফোনালাপ অনুষ্ঠানের ভূমিকা। নুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে একটি বেতার ফোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করার সময় মোবাইলে যুক্ত হয়ে প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেনের কাছে তুলে ধরে নিজের অবস্থার কথা।
পিডি মাহবুব হোসেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত মধুপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রকৃত চিত্র জানাতে নির্দেশ দেন। ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে নুরীর জন্য বরাদ্দ হয় ঘর।
নির্মাণসহ সব প্রক্রিয়া শেষে সেই ঘর ও জমির দলিল খাজনা খারিজের দাখিলা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুরীর বাড়ি যাওয়া হয়। ইউএনও আরিফা জহুরার নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমএ করিম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব আল রানাসহ গণমাধ্যম কর্মীদের একটি টিম মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নুরীর বাড়িতে গিয়ে ঘর ও ঘরের মালিকানা স্বত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান জুলহাস উদ্দিনসহ স্থানীয় অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কথা হয় নুরীর মা অজুফা বেগমের সঙ্গে। তিনি বললেন, শিশু নুরী অসুখে পড়ার পর অনেক চেষ্টা করেছি। ভালো করতে পারিনি। ছানি পড়ে চোখ অন্ধ হয়ে গেল। চলতে ফিরতে অনেক ব্যথা পায়। আল্লাহর দয়ায় শেখ হাসিনার মাধ্যমে ওর এমন একটা নিরাপদ গতি হওয়ায় আমরা খুশি।
প্রতিবেশী খলিলুর রহমান মনে করেন- নুরীর কষ্ট লাঘব মানেই পুরো পরিবারের কষ্ট লাঘব হওয়া। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার সত্যি যথোপযুক্ত হয়েছে।
বাবা আরশেদ আলী স্থানীয় মোটের বাজারের সামান্য সুপারি ব্যবসায়ী। মেয়ের নানা দাবি পূরণে সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করেন তিনি। কোনো চাওয়া অপূরণ রাখেন না। তিন ছেলে আর এই মেয়েটাকে নিয়েই তার সংসার।
আরশেদ আলী জানান, নুরীর খুশি বা ভালো দিকটার প্রতি আমাদের সবার নজর। ওর খুশিতে আমাদের খুশি। ঘর পেয়ে ওর অনেক আনন্দ। আমরাও আনন্দিত।
ইউএনও আরিফা জহুরা জানান, পিডি স্যারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এ ঘরটি আয়েশা আক্তার ওরফে নুরীর মতো সমাজের পিছিয়ে পড়া অথচ মেধাবীর হাতে তুলে দিতে পেরে আমরাও তৃপ্ত।