গায়ের চাদর দিয়েই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় অধ্যাপক সাঈদাকে
গাজীপুর প্রতিনিধি
১৮ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০০:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসন প্রকল্পের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ঝোপঝাড়।
সেখানে নির্মাণাধীন বাড়ির প্লট থেকে পাঁচটি গাছ বিক্রি করেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাঈদা গাফফার। গাছ কাটার চুক্তি নিয়েছিল ঘাতক আনারুল ইসলাম (২৫)।
হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় গাছকাটা শেষ হলে নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পানিশাইলের ভাড়া বাসায় ফেরার পথে অধ্যাপক সাঈদা পথে ব্যাগ থেকে আনারুলকে কিছু টাকা দেন।
এ সময় ঘাতক আনারুল ব্যাগে একটি টাকার বান্ডেল দেখতে পায়। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তার ব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আনারুল। টাকা নিতে বাধা দিলে অধ্যাপক সাঈদার গায়ে থাকা শীতের চাদর দিয়েই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আনারুল।
মৃত্যু নিশ্চিত করে অধ্যাপক সাঈদার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা, একটি বাটন ও একটি এন্ড্রয়েট মোবাইল ফোন এবং বাসার চাবি নিয়ে লাশটি একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয় আনারুল।
পরে এন্ড্রয়েড মোবাইলটি ঘটনাস্থলেই মাটির নিচে পুঁতে রাখে। সেখান থেকে অধ্যাপক সাঈদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকা-পয়সার খোঁজ করে ঘাতক আনারুল। কোনো টাকা-পয়সা না পেয়ে পালিয়ে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যায়।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিয়াজ মাখদুমের আদালতে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত আনারুল এভাবেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এর আগে গত শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক মেহিদী পাভেল তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আনারুলের। পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী সাউদ বিন ইফতেখার জহির জানান, তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হিসেবে ২০১৬ সালে অবসর নেন। বাবা জহিরুল হকও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারা তিন বোন এক ভাই। দুই বোন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। এক বোন ও তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি পুরান ঢাকায়।
তিনি আরও জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে’ তাদের পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এলাকাটিতে এখনো বসতি গড়ে ওঠেনি। তাই ঝোপ-জঙ্গলে ভরে হয়ে আছে। তার মা সেখানে ভাড়া থেকে ওই প্লটে একটি বাগানবাড়ি নির্মাণ করছিলেন। বাড়ির একতলার কাজ প্রায় শেষ। কাজ দেখাশুনার জন্য তার মা সেখানে একাই ভাড়া থাকতেন।
সাউদ বিন ইফতেখার জহির জানান, গত ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার তার মাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বোন মোবাইল ফোনে মেসেজ করেন। কিন্তু তার মা মেসেজ না দেখায় পরদিন বুধবার ফোন করেন। ফোন বন্ধ থাকায় ঢাকার বড় বোন সাদিয়া আফরিন ও মামা শেখ শমসের গাফফার মায়ের পানিশাইলের বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা ও আলমারি খোলা দেখতে পান।
তিনি আরও জানান, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মাকে কোথাও না পেয়ে ওই রাতেই তার বোন কাশিমপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। গত শুক্রবার পুলিশ আনারুলকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে দুপুরে মায়ের লাশ প্রকল্প এলাকার একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিট পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. জাকির হাসান জানান, ঝোপের ভেতর থেকে গত শুক্রবার অধ্যাপক সাঈদা গাফফারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় হত্যা মামলা করেন।
এর আগে আনারুলকে গত শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনদিনের রিমান্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।
জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল জানায়, মঙ্গলবার বিকালে গাছকাটা শেষ হলে সন্ধ্যায় ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক সাঈদা। পথেই তিনি তার ব্যাগ থেকে আনারুলকে কিছু টাকা দেন। এ সময়ে ব্যাগে আরও টাকা দেখতে পান তিনি। একটি নির্জন স্থানে পৌঁছলে জোরপূর্বক তার ব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। টাকা নিতে বাধা দিলে তিনি অধ্যাপক সাঈদার গায়ের চাদর দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেন। পরে অধ্যাপক সাঈদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকা-পয়সার খোঁজ করে না পেয়ে পালিয়ে যান। বুধবার সকালে তিনি নিজবাড়ি একই জেলার সাদুল্লাহপুরের জাউলিয়া গ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করেন। শুক্রবার পুলিশ তার খোঁজে ওই গ্রামে যায়। টের পেয়ে সে একটি মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টার সময় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে অধ্যাপক সাঈদার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার ৬৫০ টাকা এবং একটি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গায়ের চাদর দিয়েই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় অধ্যাপক সাঈদাকে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসন প্রকল্পের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ঝোপঝাড়।
সেখানে নির্মাণাধীন বাড়ির প্লট থেকে পাঁচটি গাছ বিক্রি করেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাঈদা গাফফার। গাছ কাটার চুক্তি নিয়েছিল ঘাতক আনারুল ইসলাম (২৫)।
হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় গাছকাটা শেষ হলে নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পানিশাইলের ভাড়া বাসায় ফেরার পথে অধ্যাপক সাঈদা পথে ব্যাগ থেকে আনারুলকে কিছু টাকা দেন।
এ সময় ঘাতক আনারুল ব্যাগে একটি টাকার বান্ডেল দেখতে পায়। একপর্যায়ে জোরপূর্বক তার ব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আনারুল। টাকা নিতে বাধা দিলে অধ্যাপক সাঈদার গায়ে থাকা শীতের চাদর দিয়েই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আনারুল।
মৃত্যু নিশ্চিত করে অধ্যাপক সাঈদার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা, একটি বাটন ও একটি এন্ড্রয়েট মোবাইল ফোন এবং বাসার চাবি নিয়ে লাশটি একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয় আনারুল।
পরে এন্ড্রয়েড মোবাইলটি ঘটনাস্থলেই মাটির নিচে পুঁতে রাখে। সেখান থেকে অধ্যাপক সাঈদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকা-পয়সার খোঁজ করে ঘাতক আনারুল। কোনো টাকা-পয়সা না পেয়ে পালিয়ে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যায়।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিয়াজ মাখদুমের আদালতে মামলার একমাত্র অভিযুক্ত আনারুল এভাবেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এর আগে গত শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক মেহিদী পাভেল তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আনারুলের। পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী সাউদ বিন ইফতেখার জহির জানান, তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হিসেবে ২০১৬ সালে অবসর নেন। বাবা জহিরুল হকও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারা তিন বোন এক ভাই। দুই বোন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। এক বোন ও তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি পুরান ঢাকায়।
তিনি আরও জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে’ তাদের পাঁচ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এলাকাটিতে এখনো বসতি গড়ে ওঠেনি। তাই ঝোপ-জঙ্গলে ভরে হয়ে আছে। তার মা সেখানে ভাড়া থেকে ওই প্লটে একটি বাগানবাড়ি নির্মাণ করছিলেন। বাড়ির একতলার কাজ প্রায় শেষ। কাজ দেখাশুনার জন্য তার মা সেখানে একাই ভাড়া থাকতেন।
সাউদ বিন ইফতেখার জহির জানান, গত ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার তার মাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বোন মোবাইল ফোনে মেসেজ করেন। কিন্তু তার মা মেসেজ না দেখায় পরদিন বুধবার ফোন করেন। ফোন বন্ধ থাকায় ঢাকার বড় বোন সাদিয়া আফরিন ও মামা শেখ শমসের গাফফার মায়ের পানিশাইলের বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা ও আলমারি খোলা দেখতে পান।
তিনি আরও জানান, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মাকে কোথাও না পেয়ে ওই রাতেই তার বোন কাশিমপুর থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। গত শুক্রবার পুলিশ আনারুলকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে দুপুরে মায়ের লাশ প্রকল্প এলাকার একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিট পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. জাকির হাসান জানান, ঝোপের ভেতর থেকে গত শুক্রবার অধ্যাপক সাঈদা গাফফারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় হত্যা মামলা করেন।
এর আগে আনারুলকে গত শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনদিনের রিমান্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।
জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল জানায়, মঙ্গলবার বিকালে গাছকাটা শেষ হলে সন্ধ্যায় ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক সাঈদা। পথেই তিনি তার ব্যাগ থেকে আনারুলকে কিছু টাকা দেন। এ সময়ে ব্যাগে আরও টাকা দেখতে পান তিনি। একটি নির্জন স্থানে পৌঁছলে জোরপূর্বক তার ব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। টাকা নিতে বাধা দিলে তিনি অধ্যাপক সাঈদার গায়ের চাদর দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেন। পরে অধ্যাপক সাঈদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকা-পয়সার খোঁজ করে না পেয়ে পালিয়ে যান। বুধবার সকালে তিনি নিজবাড়ি একই জেলার সাদুল্লাহপুরের জাউলিয়া গ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করেন। শুক্রবার পুলিশ তার খোঁজে ওই গ্রামে যায়। টের পেয়ে সে একটি মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টার সময় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে অধ্যাপক সাঈদার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার ৬৫০ টাকা এবং একটি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।