যমুনার পানি কমছে, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
২৫ জুন ২০২২, ১৬:১২:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসহ জেলার সব নদনদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলেও তিন ধরে কমতে শুরু করছে।
এদিকে পানিবন্দি পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে শিশুখাদ্য নিয়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। অপরদিকে গোখাদ্যের সংকটে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষগুলো। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর গোপালপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও কালিহাতী উপজেলার শতাধিক গ্রামের বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া জেলার ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসলও তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিন জেলার ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের গাবসারা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে যায়, যমুনার পানি গত সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। পানির স্রোতের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া তলিয়ে গেছে রান্না করার মাটির চুলা, গবাদিপশুর রাখার স্থান, টয়লেট, টিওবয়েলসহ চরাঞ্চলের নানা ধরনের ফসল ও সবজি। পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে অন্যত্র। আবার অনেকেই ঘরেই মাঁচায় রান্না করাসহ কষ্টে দিনপার করছেন।
গাবসারার বেলটিয়া গ্রামের আলম মণ্ডলের স্ত্রী বিমলা বেগম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হচ্ছে। এতে হাত ও পায়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নৌকায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। পানি ওঠায় স্বামীর আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কষ্ট হলেও পানির মধ্যেই বসবাস করছি।
কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঘরের চারপাশে থৈ-থৈ পানি। চরাঞ্চলে শিশুখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ খবর নেননি। দেয়নি খাদ্য সহায়তা। অনেকেই পরিদর্শন করে কিন্তু সহযোগিতা করে না।
পুংলীপাড়ার হ্যাপি আকন্দ বলেন, চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আবার অনেকের ঘরের চারপাশে পানি। কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য অনেকে ঘরে মাঁচায় ও নৌকার ভেতরে গাদাগাদি করে থাকছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো অনেক কষ্টে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা বলেন, সাত দিন ধরে চরাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গত দুদিন আগে স্থানীয় প্রশাসন পরিদর্শন করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান জানান, উপজেলায় চার হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যমুনার পানি কমছে, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসহ জেলার সব নদনদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলেও তিন ধরে কমতে শুরু করছে।
এদিকে পানিবন্দি পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে শিশুখাদ্য নিয়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। অপরদিকে গোখাদ্যের সংকটে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষগুলো। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর গোপালপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও কালিহাতী উপজেলার শতাধিক গ্রামের বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া জেলার ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসলও তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিন জেলার ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের গাবসারা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে যায়, যমুনার পানি গত সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। পানির স্রোতের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া তলিয়ে গেছে রান্না করার মাটির চুলা, গবাদিপশুর রাখার স্থান, টয়লেট, টিওবয়েলসহ চরাঞ্চলের নানা ধরনের ফসল ও সবজি। পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে অন্যত্র। আবার অনেকেই ঘরেই মাঁচায় রান্না করাসহ কষ্টে দিনপার করছেন।
গাবসারার বেলটিয়া গ্রামের আলম মণ্ডলের স্ত্রী বিমলা বেগম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হচ্ছে। এতে হাত ও পায়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি ওঠায় নৌকায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। পানি ওঠায় স্বামীর আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কষ্ট হলেও পানির মধ্যেই বসবাস করছি।
কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঘরের চারপাশে থৈ-থৈ পানি। চরাঞ্চলে শিশুখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ খবর নেননি। দেয়নি খাদ্য সহায়তা। অনেকেই পরিদর্শন করে কিন্তু সহযোগিতা করে না।
পুংলীপাড়ার হ্যাপি আকন্দ বলেন, চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আবার অনেকের ঘরের চারপাশে পানি। কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য অনেকে ঘরে মাঁচায় ও নৌকার ভেতরে গাদাগাদি করে থাকছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো অনেক কষ্টে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা বলেন, সাত দিন ধরে চরাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গত দুদিন আগে স্থানীয় প্রশাসন পরিদর্শন করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান জানান, উপজেলায় চার হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।