কুড়িগ্রামে বন্যায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

 কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি  
৩০ জুন ২০২২, ০৯:১৫ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

উজানের বৃষ্টি ও ঢলে আবারো কুড়িগ্রামে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে ধরলা পানি। ফলে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার অন্তত ৬০টি চর গ্রাম ও নদীসংলগ্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই উঁচু ভিটা, রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। 

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। গ্রামীণ সড়কগুলোর উপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের উজানে বৃষ্টিপাত কমেলে পানি হ্রাস পাবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

তবে কুড়িগ্রামের রাজারহাটস্থ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মাঝারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম জানান, পৌর এলাকার টাপু ভেলাকোপা ও নামা ভেলাকোপা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু জানান, এই ইউনিয়নের মেকলি, পূর্ব ও পশ্চিম ধনিরাম, বড়ভিটা ও বড়লই গ্রামের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ১৫ হাজার মানুষ। 

সদর উপজেলার যাত্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বন্যায় মানুষের বেহাল অবস্থা। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে পোড়ার চর, বানিয়াপাড়া, পারবতীপুর, ঝুনকার চর, রলাকাটাসহ ১৮টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার পরিবার আর নদীতে ভিটেমাটি হারিয়েছে ৮২টি পরিবার। সরকারে সহায়তা ১১ টন চাল দেওয়া হয়েছে এক হাজার একশ লোককে। সহায়তার বাইরে ছিল ৫ হাজার ৪০০ পরিবার। এ অবস্থায় আবার বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অসহায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের সরকার পাড়া, মাঝের চর, চর সবুজপাড়া নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। চর সবুজপাড়া এলাকার আবেদ আলী বলেন, প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি এখনো মেরামত করতে পারিনি। এরমধ্যেই আবারও ধরলার পানি বাড়ির আঙ্গিনায় হানা দিয়েছে। খুব সমস্যায় আছি। গত ১৫দিন থেকে হাতে কাজ নেই। সামনে ঈদ কীভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলবো জানি না।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের জহুরুল ইসলাম জানান, এই চরের প্রত্যেকটি বাড়িতে ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছিল। সেই পানি নেমে যাওয়ার পর আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এমনিতেই প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নৌকায় বসবাস করেছি। পানি নেমে যাওয়ার তিন-চার দিনের মাথায় আবার পানি। এ সময় হাতে কাজ নেই। গত বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। বউ, বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে এ ইউনিয়নের মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। প্রথম দফা বন্যায় ১০দিন স্থায়ী ছিল। সেই ধকল কাটাতে না কাটতে আবার দ্বিতীয় দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এখানকার বানভাসি মানুষ। প্রতিদিন শত মানুষ ভিড় করছে সহায়তার জন্য কিন্তু সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। গত বন্যায় মাত্র ১৪ টন জিআর এর চাল বরাদ্দ মেলে; যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অন্যদের ভাগ্যে ত্রাণ জোটেনি।

তিনি আরও বলেন, আবার নতুন করে বন্যায় দক্ষিণ নওয়াবশ, কদমতলা, শিতাইঝাড়, নওয়াবশ, গোবিন্দপুরসহ ২, ৩, ৪ ও ৬নং ওয়ার্ডের প্রায় সব গ্রামে পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান, নতুন করে বন্যা দেখা দেওয়ায় ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতাসহ নানা রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য নতুন করে ৬০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া শুকনো খাবার ক্রয় করে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন