টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশি নিরাপত্তা চান স্থানীয়রা
এস.এম শহীদ মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
০৬ আগস্ট ২০২২, ০১:২০:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণের ঘটনা এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ঘটনার পর থেকে গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর লেখা-আলোচনায় পূর্বের অনুরূপ চিত্র উঠে আসছে।
ঘটনার কারণ ব্যবচ্ছেদও বাদ পড়ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় উদ্যোগের কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। এ সময়েই মধুপুরে প্রস্তাবিত হাইওয়ে পুলিশ থানার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধুপুর হাইওয়ে পুলিশ থানার নামে জায়গা নির্ধারিত হয়েছে। মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের আনারস চত্তর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের দিকে ২কি.মি দূরে মালাউড়ী মৌজার দক্ষিণ প্রান্তে ভোলাসাহার বাঁক (বার বার দুর্ঘটনা ঘটার কারণে এলাকাবাসীর দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ মোড়ের এমন নাম) খ্যাত রাস্তার পশ্চিম পাশে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত ওই থানার সাইনবোর্ড ঝুলছে।
এ স্থান থেকে গত বুধবার শেষ রাতে রক্তিপাড়া জামে মসজিদের কাছের ঘটনার দূরত্ব প্রায় এক কি.মি.। সরেজমিনের গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য।
স্বদেশ চন্দ্র ঘোষ নামের একজন জানান, থানা হবে। এজন্য সরকারিভাবে জমি এ্যাকুয়ার হয়ে গেছে। শুনেছি অতি দ্রুত কাজ শুরু হবে।
আরিফ নামের স্থানীয় জনৈক তরুণ বলেন, ৭ থেকে ১০/১২ লাখ টাকা শতাংশ মূল্যে দুই একরের উপরে জমি কিনে সীমানা করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ থানার জন্য।
স্থানীয়দের অনেকের ধারণা, হাইওয়ে পুলিশের টহল জোরদার থাকলে এ রোডে বার বার ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটত না। তারা দ্রুত থানা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
মধুপুর পৌর শহরের বাসিন্দা পরিবহন মালিক জনৈক শাহাদৎ হোসেন খান জানান, টাঙ্গাইলের এলঙ্গো থেকে মধুপুর হয়ে জামালপুর শেরপুর ও মধুপুর হয়ে ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে চলাচল করা যানবাহন তথা যাত্রীবাহী বাসের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশসেবা খুব জরুরী।
ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে চলন্ত বাসে এ আঞ্চলিক মহসড়কে দেশের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এসব রোডে জেলা পুলিশি সেবায় সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে দুর্বৃত্তরা নিরাপদ জোন ভেবে ডাকাতি, চলন্ত বাসে গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণ, রূপা ধর্ষণ ও হত্যা এবং সর্বশেষ ৩ আগস্টে ঈগল পরিবহনে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে। নিরাপদ জোন ভাববার এমন কারণকে মৌন সমর্থন জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই পুলিশ সদস্য।
মধুপুর থানার ওসি (তদন্ত) মুরাদ হোসেন জানান, উল্লিখিত আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে টহল দেয়া পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে রাতে চলাচল করা বাসের ভিতর ঘটে যাওয়া ঘটনার সময় টহলরত পুলিশের নজরে আসা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈগল সার্ভিসের বাসের ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমরা রক্তিপাড়া অকুস্থলে এসে ভিকটিমদের উদ্ধার, তাদের চিকিৎসা,খাবারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই। সব শেষে বাড়িতে ফেরার জন্য বাস ভাড়ার ব্যবস্থাও করি। এ আঞ্চলিক মহসড়কে পুলিশী তৎপরতার ঘাটতি নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আঞ্চলিক এ মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদারের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর জোনের। এ জোনের আওতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। এলেঙ্গার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে ভাড়া বাড়িতে পুলিশের হাইওয়ে থানা ও মধুপুর হাইওয়ের পুলিশ ফাঁড়ির নামে যৌথ তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঢাকা মেট্রো পলিটন ও গাজীপুর মেট্রো পলিটন সীমানার পর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর জোন দায়িত্বে আছে। তবে মধুপুরের দিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেনা। জেলা পুলিশ টহল দিয়ে থাকে বলে জানান নাজমুস সাকিব।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের মধুপুর থানার জন্য জমি কেনা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ নির্দেশনা সাপেক্ষে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কবে শুরু হবে সে তথ্য নিশ্চিত জানাতে না পারলেও তিনি জানান, খুব দ্রুত এ নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশি নিরাপত্তা চান স্থানীয়রা
টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণের ঘটনা এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ঘটনার পর থেকে গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর লেখা-আলোচনায় পূর্বের অনুরূপ চিত্র উঠে আসছে।
ঘটনার কারণ ব্যবচ্ছেদও বাদ পড়ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় উদ্যোগের কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। এ সময়েই মধুপুরে প্রস্তাবিত হাইওয়ে পুলিশ থানার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধুপুর হাইওয়ে পুলিশ থানার নামে জায়গা নির্ধারিত হয়েছে। মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের আনারস চত্তর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের দিকে ২কি.মি দূরে মালাউড়ী মৌজার দক্ষিণ প্রান্তে ভোলাসাহার বাঁক (বার বার দুর্ঘটনা ঘটার কারণে এলাকাবাসীর দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ মোড়ের এমন নাম) খ্যাত রাস্তার পশ্চিম পাশে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত ওই থানার সাইনবোর্ড ঝুলছে।
এ স্থান থেকে গত বুধবার শেষ রাতে রক্তিপাড়া জামে মসজিদের কাছের ঘটনার দূরত্ব প্রায় এক কি.মি.। সরেজমিনের গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য।
স্বদেশ চন্দ্র ঘোষ নামের একজন জানান, থানা হবে। এজন্য সরকারিভাবে জমি এ্যাকুয়ার হয়ে গেছে। শুনেছি অতি দ্রুত কাজ শুরু হবে।
আরিফ নামের স্থানীয় জনৈক তরুণ বলেন, ৭ থেকে ১০/১২ লাখ টাকা শতাংশ মূল্যে দুই একরের উপরে জমি কিনে সীমানা করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ থানার জন্য।
স্থানীয়দের অনেকের ধারণা, হাইওয়ে পুলিশের টহল জোরদার থাকলে এ রোডে বার বার ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটত না। তারা দ্রুত থানা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
মধুপুর পৌর শহরের বাসিন্দা পরিবহন মালিক জনৈক শাহাদৎ হোসেন খান জানান, টাঙ্গাইলের এলঙ্গো থেকে মধুপুর হয়ে জামালপুর শেরপুর ও মধুপুর হয়ে ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে চলাচল করা যানবাহন তথা যাত্রীবাহী বাসের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশসেবা খুব জরুরী।
ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে চলন্ত বাসে এ আঞ্চলিক মহসড়কে দেশের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এসব রোডে জেলা পুলিশি সেবায় সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে দুর্বৃত্তরা নিরাপদ জোন ভেবে ডাকাতি, চলন্ত বাসে গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণ, রূপা ধর্ষণ ও হত্যা এবং সর্বশেষ ৩ আগস্টে ঈগল পরিবহনে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে। নিরাপদ জোন ভাববার এমন কারণকে মৌন সমর্থন জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই পুলিশ সদস্য।
মধুপুর থানার ওসি (তদন্ত) মুরাদ হোসেন জানান, উল্লিখিত আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে টহল দেয়া পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে রাতে চলাচল করা বাসের ভিতর ঘটে যাওয়া ঘটনার সময় টহলরত পুলিশের নজরে আসা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈগল সার্ভিসের বাসের ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমরা রক্তিপাড়া অকুস্থলে এসে ভিকটিমদের উদ্ধার, তাদের চিকিৎসা,খাবারসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই। সব শেষে বাড়িতে ফেরার জন্য বাস ভাড়ার ব্যবস্থাও করি। এ আঞ্চলিক মহসড়কে পুলিশী তৎপরতার ঘাটতি নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আঞ্চলিক এ মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদারের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর জোনের। এ জোনের আওতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। এলেঙ্গার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে ভাড়া বাড়িতে পুলিশের হাইওয়ে থানা ও মধুপুর হাইওয়ের পুলিশ ফাঁড়ির নামে যৌথ তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঢাকা মেট্রো পলিটন ও গাজীপুর মেট্রো পলিটন সীমানার পর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর জোন দায়িত্বে আছে। তবে মধুপুরের দিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেনা। জেলা পুলিশ টহল দিয়ে থাকে বলে জানান নাজমুস সাকিব।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের মধুপুর থানার জন্য জমি কেনা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ নির্দেশনা সাপেক্ষে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কবে শুরু হবে সে তথ্য নিশ্চিত জানাতে না পারলেও তিনি জানান, খুব দ্রুত এ নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে না।