বাবা-ছেলেকে অফিসে ডেকে নিয়ে পেটালেন নারী কাউন্সিলর

 যুগান্তর প্রতিবেদন, সাভার 
০৬ আগস্ট ২০২২, ১০:৫৮ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ
সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন মুক্তা
সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন মুক্তা। ফাইল ছবি

ঢাকার সাভারের ছায়াবিথী মহল্লার প্রিন্টিং ব্যবসায়ী বাবা-ছেলেকে কাউন্সিলর অফিসে ডেকে নিয়ে স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেছেন সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন মুক্তা ও তার ভাতিজা। 

শনিবার সকালে সাভারের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে ডেকে এনে তাদের মারধর করা হয়। স্থানীয়রা দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. নুরুজ্জামান সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

আহত হলেন- মো. নুরুজ্জামান (৫৬) ও তার ছেলে ইসমাইল হোসেন রবিন (৩১)। তারা দুজনেই প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সাভার বাজার রোডে রবিন আর্ট এবং একতা সাইন অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেস নামে তাদের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন- সাদ্দাম হোসেন (৩৪), রিদ্দাম (২৮), হিদ্দাম হোসেন (২৩), সোনামিয়া (৩৫) ও কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন মুক্তা (৩৮)। এরা সবাই নারী কাউন্সিলরের ভাতিজা। 

এর আগে গত বুধবার তুচ্ছ কারণে রবিউল নামে এক লোককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে রিদ্দাম, হিদ্দাম হোসেন ও সোনামিয়া। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা হয়।   

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর মুক্তা পাশ করার পর থেকেই এলাকার বিভিন্ন মানুষের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে থেকেই তার একাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। তিনি এলাকার উঠতি বয়সী যুবকদের দিয়ে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ অসহায় মানুষকে বিপদে ফেলে তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে আসছেন বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

আহত ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মুক্তা ও তার ভাতিজারা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে তারা আমাকে কাউন্সিলরের বাড়ির দোতলায় ডেকে নিয়ে যান। এ সময় তার ভাতিজা সাদ্দাম হোসেন, রিদ্দাম, হিদ্দাম হোসেন, সোনামিয়া ও মুক্তা মিলে আমাকে ও আমার ছেলেকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা আমার মাথায় স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেন। স্টাম্পের আঘাতে আমি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ি। 

স্থানীয়রা বলেন, কাউন্সিলরের অফিস থেকে চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।  

হাসপাতালে নুরুজ্জামান বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে আমি মুক্তা কাউন্সিলরের আপন ভাই মোশারফের পোস্টার ছাপিয়েছিলাম। মোশারফের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন একসঙ্গে বন্ধুর মতো চলাচল করায় তার নির্বাচনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করি। তখন মুক্তা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলে- ‘আমার পাশ করতে তোদের ভোট লাগবে না। দুই কোটি টাকা খরচ করে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেছি এবং নির্বাচনে পাশও করব।' নির্বাচনে জেতার পর থেকেই মুক্তা বিভিন্ন সময় আমার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। এর আগেও আমার ওপর লোকজন দিয়ে হামলা করে হত্যার চেষ্টা চালায়। আমাকে বলে- ‘তোর কোটি টাকার বাড়ি ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যাবি, না হয় তোদের মেরে ফেলব। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।' 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ছেলে রবিন বলেন, আমি ভোরে নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করতে গেলে কাউন্সিলরের ভাতিজা সাদ্দাম, হিদ্দাম ও রিদ্দাম আমাকে ধরে মারতে মারতে মুক্তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে মুক্তা আমাকে ঘুসি মারলে সোনামিয়াসহ তার ভাতিজারা আমাকে মারধর করে। একপর্যায়ে আমার মোবাইল দিয়ে বাবাকে ফোন করে এনে তার সামনেই আমাকে মারধর করে। বাবা তাদের মারতে নিষেধ করলে কাউন্সিলর ও তার ভাতিজারা বাবাকেও মারধর করে। 

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় আমরা তার প্রতিপক্ষ আপন ভাইয়ের পোস্টার ছাপিয়েছিলাম এটাই আমাদের অপরাধ। আমরা ব্যবসা করি। সবার পোস্টার ছাপানোর অধিকারই আমাদের আছে। কিন্তু কাউন্সিলর সেই ক্ষোভ থেকে আমাদের এলাকা ছাড়া করার জন্য বিভিন্ন সময় হামলা ও মারধর করে আসছেন। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সানজিদা শারমিন মুক্তা বলেন, সকালে গ্যারেজের পাশে ঘুরাফেরা করছিল এক যুবক। পরে তাকে রিদ্দাম ও হিদ্দাম আমার অফিসে নিয়ে আসে। তার বাবাকেও ডেকে আনা হয়। একপর্যায়ে আমাদের ধস্তাধস্তির মধ্যে কীভাবে নুরুজ্জামানের মাথায় আঘাত লাগে সেটা বুঝতে পারিনি। 

সাভার মডেল থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম জিকু বলেন, মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন