মিয়ানমার বাহিনীর মাইন আতঙ্কে সীমান্তবাসী
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর মাইন বিস্ফোরণ আতঙ্কে সীমান্তবাসী। মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রোববার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় মাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়।
তবে সোমবার বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে কোনো ধরনের গোলা বর্ষণ এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। এরপরও উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সীমান্তের অধিবাসীরা।
অপরদিকে সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী, হেডম্যানপাড়া, ফাত্তাঝিড়ি এবং ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শুন্যরেখায় কাঁটাতার ঘেঁষা সীমান্ত এলাকাগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে মাটির নিচে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার বাহিনী।
রোববার সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারের পার্শ্ববর্তী কোনাপাড়া এলাকায় শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঝিরিতে মাছ ধরতে যান। এ সময় রোহিঙ্গারা সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষা পার্শ্ববর্তী এলাকায় চোরাই পণ্য আনতে গেলে মাটির নিচে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই রোহিঙ্গা কিশোর ওমর ফারুকের (১৭) মৃত্যু হয়।
এ সময় আবদুর সাহাবুল্লাহ নামে আরও একজন রোহিঙ্গা মারাত্মক আহত হয়। হতাহতরা তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্য। খবর পেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, রোববার মাইন বিস্ফোরণের ঘটনাটি তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ঘটেছে। নিহত কিশোরকে দাফন করা হয়েছে শূন্যরেখায় নির্ধারিত কবরস্থানে। তবে আহত যুবক কোথায় চিকিৎসাধীন রয়েছে সেটি জানি না। ধারণা করা হচ্ছে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাইশফাঁড়ি পাড়া প্রধান কার্বারি ক্যহ্লাউ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাইশফাঁড়ি পাড়াতে পাহাড়ি-বাঙালি ৬৫ পরিবার রয়েছে। পাড়ার অধিবাসীরা সীমান্ত এলাকাগুলোতে ধান-সবজি চাষাবাদ করেছেন। মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা জুমচাষ করেছে কাঁটাতার ঘেঁষা পাহাড়েও। সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় বিজিবি ও প্রশাসনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ক্ষেত-খামারে সপ্তাহে এক দুবার হলেও যেতে পারছেন। কিন্তু সীমান্তজুড়ে মাটির নিচে মিয়ানমার বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে সীমান্ত এলাকায়। গত মাসের ১৬ সেপ্টেম্বর সীমান্তে চোরাইপথে গরু আনতে গিয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের এক বাংলাদেশি যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়। তার আগে রোহিঙ্গা এক যুবকও মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। রোববার মাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আবদুর সাহাবুল্লাহ নামে আরও একজন রোহিঙ্গা যুবক। দুর্ঘটনা রোধে সীমান্তে জুমচাষি পাহাড়ি এবং ক্ষেত-খামারি বাঙালি অধিবাসীদের সীমান্তে যাতায়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে আনাগোনা কমাতে কঠোর বিধিনিষেধও তৈরি করা হয়েছে।
মিয়ানমার বাহিনীর মাইন আতঙ্কে সীমান্তবাসী
বান্দরবান প্রতিনিধি
০৩ অক্টোবর ২০২২, ২২:৪৬:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তেমিয়ানমার বাহিনীর মাইন বিস্ফোরণ আতঙ্কে সীমান্তবাসী। মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রোববার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় মাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়।
তবে সোমবার বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে কোনো ধরনের গোলা বর্ষণ এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। এরপরও উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সীমান্তের অধিবাসীরা।
অপরদিকে সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী, হেডম্যানপাড়া, ফাত্তাঝিড়ি এবং ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শুন্যরেখায় কাঁটাতার ঘেঁষা সীমান্ত এলাকাগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে মাটির নিচে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার বাহিনী।
রোববার সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারের পার্শ্ববর্তী কোনাপাড়া এলাকায় শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঝিরিতে মাছ ধরতে যান। এ সময় রোহিঙ্গারা সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষা পার্শ্ববর্তী এলাকায় চোরাই পণ্য আনতে গেলে মাটির নিচে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই রোহিঙ্গা কিশোর ওমর ফারুকের (১৭) মৃত্যু হয়।
এ সময় আবদুর সাহাবুল্লাহ নামে আরও একজন রোহিঙ্গা মারাত্মক আহত হয়। হতাহতরা তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্য। খবর পেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, রোববার মাইন বিস্ফোরণের ঘটনাটি তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ঘটেছে। নিহত কিশোরকে দাফন করা হয়েছে শূন্যরেখায় নির্ধারিত কবরস্থানে। তবে আহত যুবক কোথায় চিকিৎসাধীন রয়েছে সেটি জানি না। ধারণা করা হচ্ছে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাইশফাঁড়ি পাড়া প্রধান কার্বারি ক্যহ্লাউ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাইশফাঁড়ি পাড়াতে পাহাড়ি-বাঙালি ৬৫ পরিবার রয়েছে। পাড়ার অধিবাসীরা সীমান্ত এলাকাগুলোতে ধান-সবজি চাষাবাদ করেছেন। মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা জুমচাষ করেছে কাঁটাতার ঘেঁষা পাহাড়েও। সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় বিজিবি ও প্রশাসনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ক্ষেত-খামারে সপ্তাহে এক দুবার হলেও যেতে পারছেন। কিন্তু সীমান্তজুড়ে মাটির নিচে মিয়ানমার বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে সীমান্ত এলাকায়। গত মাসের ১৬ সেপ্টেম্বর সীমান্তে চোরাইপথে গরু আনতে গিয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের এক বাংলাদেশি যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়। তার আগে রোহিঙ্গা এক যুবকও মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। রোববার মাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আবদুর সাহাবুল্লাহ নামে আরও একজন রোহিঙ্গা যুবক। দুর্ঘটনা রোধে সীমান্তে জুমচাষি পাহাড়ি এবং ক্ষেত-খামারি বাঙালি অধিবাসীদের সীমান্তে যাতায়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে আনাগোনা কমাতে কঠোর বিধিনিষেধও তৈরি করা হয়েছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023