হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী পিন্টুর মৃত্যুদণ্ড, বান্ধবী রত্নার যাবজ্জীবন

 ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৩৩ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহা হত্যা মামলায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু দেবনাথকে মৃত্যুদণ্ড ও তার বান্ধবী রত্নার রানী চক্রবর্তীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালত একই সঙ্গে দুইজনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক উম্মে সরাবান তহুরা এ রায় দেন।

একই মামলায় আদালত আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুনকে খালাস প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি মাকসুদা আহম্মেদ জানান, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ৯ জুলাইয়ের মধ্যে কোন এক সময় স্বপনকে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালে ১৬ জুলাই সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করার পর পিন্টু দেবনাথ, রত্মা রানী চক্রবর্তী ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মোল্লা মামুনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

তিনি জানান, পুলিশের তদন্ত ও সাক্ষী প্রমাণে পিন্টু দেবনাথকে মৃত্যুদণ্ড ও রত্না রানীকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। অপর আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে রত্না ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

রত্না আদালতকে জানান, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর বাজার কাজীবাড়ির প্রবাসী আজহারুল ইসলামের চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় রত্না রানী চক্রবর্তীর ফ্ল্যাট বাসায় স্বপনকে পেছন থেকে শিল দিয়ে আঘাত করেন রত্না ও পিন্টু। পরে অচেতন অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে মরদেহ সাত টুকরো করেন। ব্যাগে ভরে স্বপনের দেহের অংশগুলো পিন্টু ঠাণ্ডা মাথায় ভবনের পাশে খালি স্থানে রাখেন। পরে সুযোগ বুঝে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন পিন্টু।

নিহত স্বপন কুমার সাহা নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ কাছারি গলি এলাকার মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে।

স্বপনের বড় ভাই অজিত কুমার সাহা জানান, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন খুচরো কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৯ জুলাই ঘাতক বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টুর ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ বাড়ে। পরে ১৫ জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগী বাপান ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।

আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবির তৎকালীন এসআই মফিজুল ইসলাম।

যে কারণে পিন্টুকে হত্যা: পিন্টুকে ভারতে বাড়ি কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখায় স্বপন। এরপর ভারতে নিয়ে একটি ফ্ল্যাটও পিন্টুর টাকায় স্বপন তার ভাগ্নির নামে কিনে দেয়। তখন পিন্টুকে স্বপন বলে ছিল ভারতে নাগরিকত্ব করিয়ে তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু তা না করে পিন্টুকে ঘুরাতে থাকে স্বপন। একই সঙ্গে প্রবীর ঘোষের সঙ্গে মিলে পিন্টুকে নানাভাবে হয়রানি করতে পরামর্শ করে স্বপন।

সর্বশেষ বড় ভাই আল মামুনকে প্রবীর ঘোষের বাসায় ডেকে নেয় স্বপন। এরপর স্বপন ও প্রবীর ঘোষ মিলে পিন্টুকে নারী দিয়ে ফাঁসাতে আল মামুনের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনার কথা পরের দিনই পিন্টুকে ডেকে নিয়ে বলে দেয় মামুন। একই সঙ্গে প্রবীরের ব্যাপারে পিন্টুকে মামুন প্রশ্ন করেছিল, প্রবীর তোর বন্ধু না শত্রু? পিন্টু নির্দ্বিধায় প্রবীরকে বন্ধু বলে স্বীকার করলে মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে চড় মারে ও গালি দিয়ে বলে প্রবীর তোর বন্ধু না। এরপর মোল্লা মামুন ফোন করে প্রবীরকে।

মোবাইলে লাউড স্পিকারে পিন্টুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই প্রবীর বলেছিল, ওরে মাইয়া র্যা ব দিয়া ধরাইয়া দেন দাদা। ওর টাকা পয়সা বাইড়া গেছে, অর্ডারও বাইড়া গেছে। ওর দোকানডা আমার লাগব। প্রিয় বন্ধুর মুখে এমন কথা শোনার পরই ক্ষোভ জন্মে পিন্টুর মধ্যে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন