পুলিশ পাহারায় সেই ব্যবসায়ীর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি
jugantor
পুলিশ পাহারায় সেই ব্যবসায়ীর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি

  গাজীপুর প্রতিনিধি  

১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৩০:১০  |  অনলাইন সংস্করণ

গাজীপুরে পুলিশের নির্যাতনে মৃত সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের লাশ পুলিশ পাহারায় তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার স্বজনরা লাশ গ্রহণ করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার নিজ গ্রাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুরে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিহতের শ্যালক রাকিবুল ইসলাম ঢাকার শ্যামলী এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, নিহত রবিউল ইসলাম সম্পর্কে তার দুলাভাই। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত বুধবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। স্বজনরা অপর একটি মাইক্রোতে করে গ্রামে যান। হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। তবে পুলিশ গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত যায়নি। লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এ সময় তিনি যুগান্তরকে আরও বলেন, রবিউলের পরিবার থেকে কেউ অভিযোগ দিতে চাচ্ছে না। কেউ আর কোনো ভেজালে যেতে চাচ্ছে না। এখন তারা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে (রবিউলের পরিবার)। এখন তো আর রবিউলকে ফিরে পাওয়া যাবে না। এখন এইটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে তার ফ্যামিলিকেও দৌড়াতে হবে। এইটা আলটিমেটলি আমাদের ফ্যামিলিরই লস, আমি আসলে ওইভাবেই কথা বললাম। আপনারা একটু দেখেন প্রসেসিংর মাধ্যমে সরকারিভাবে কেসটা ক্লোজ করে দিতে পারেন কিনা, তাহলেই আমাদের জন্য ভালো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার পরিবারের সদস্য বলেন, ঢাকা মেডিকেলে সারাক্ষণ পুলিশ তাদের নজরে রেখেছে। রাতে পুলিশ সদস্যরা রবিউলের লাশসহ গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকা শহর থেকে এগিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা ছিল কিনা সেটা দেখিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া পুলিশের ক্ষতিসাধন করায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, লাশটি ঢাকার শাহবাগ থানার নিয়ন্ত্রণে ময়নাতদন্ত হয়েছে। তারা কিভাবে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছে সেটি জানা নেই, তবে গাজীপুরের কোনো পুলিশ সেখানে যায়নি।

ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বুধবার দিবাগত রাত ১১টায় বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ট্রাক চালককে আসামি করা হয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নেওয়ার জন্য ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আমার বা আমার পরিবারের কাহারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। আমরা কাহারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা মোকদ্দমা করি নাই। ভবিষ্যতেও কোনো মামলা মোকদ্দমা করিব না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, মামলা গ্রহণের সময় আমি থানায় ছিলাম না। তবে আমি যতদূর জানি তার সাক্ষর এনআইডির সঙ্গে মিল রয়েছে।

উল্লেখ্য, অনলাইনে জুয়া খেলা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে তুলে নেয় বাসন থানা পুলিশ। গত শনিবার রাতে তাকে তুলে নেওয়ার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী নূপুর বেগমকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে। তবে রবিউল ইসলামের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এ ভাষ্য মেনে নেয়নি।

পুলিশের নির্যাতনে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে বুধবার সকালে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এলাকাবাসী দুটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পুলিশের ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।

পুলিশ পাহারায় সেই ব্যবসায়ীর লাশ পাঠানো হয় গ্রামের বাড়ি

 গাজীপুর প্রতিনিধি 
১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩০ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

গাজীপুরে পুলিশের নির্যাতনে মৃত সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের লাশ পুলিশ পাহারায় তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার স্বজনরা লাশ গ্রহণ করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার নিজ গ্রাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুরে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিহতের শ্যালক রাকিবুল ইসলাম ঢাকার শ্যামলী এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, নিহত রবিউল ইসলাম সম্পর্কে তার দুলাভাই। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত বুধবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। স্বজনরা অপর একটি মাইক্রোতে করে গ্রামে যান। হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। তবে পুলিশ গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত যায়নি। লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এ সময় তিনি যুগান্তরকে আরও বলেন, রবিউলের পরিবার থেকে কেউ অভিযোগ দিতে চাচ্ছে না। কেউ আর কোনো ভেজালে যেতে চাচ্ছে না। এখন তারা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে (রবিউলের পরিবার)। এখন তো আর রবিউলকে ফিরে পাওয়া যাবে না। এখন এইটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে তার ফ্যামিলিকেও দৌড়াতে হবে। এইটা আলটিমেটলি আমাদের ফ্যামিলিরই লস, আমি আসলে ওইভাবেই কথা বললাম। আপনারা একটু দেখেন প্রসেসিংর মাধ্যমে সরকারিভাবে কেসটা ক্লোজ করে দিতে পারেন কিনা, তাহলেই আমাদের জন্য ভালো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার পরিবারের সদস্য বলেন, ঢাকা মেডিকেলে সারাক্ষণ পুলিশ তাদের নজরে রেখেছে। রাতে পুলিশ সদস্যরা রবিউলের লাশসহ গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকা শহর থেকে এগিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা ছিল কিনা সেটা দেখিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান বলেন, নিহতের পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া পুলিশের ক্ষতিসাধন করায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, লাশটি ঢাকার শাহবাগ থানার নিয়ন্ত্রণে ময়নাতদন্ত হয়েছে। তারা কিভাবে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছে সেটি জানা নেই, তবে গাজীপুরের কোনো পুলিশ সেখানে যায়নি।

ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বুধবার দিবাগত রাত ১১টায় বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ট্রাক চালককে আসামি করা হয়েছে।

নিহতের ছোট ভাই বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নেওয়ার জন্য ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আমার বা আমার পরিবারের কাহারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। আমরা কাহারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা মোকদ্দমা করি নাই। ভবিষ্যতেও কোনো মামলা মোকদ্দমা করিব না। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, মামলা গ্রহণের সময় আমি থানায় ছিলাম না। তবে আমি যতদূর জানি তার সাক্ষর এনআইডির সঙ্গে মিল রয়েছে।

উল্লেখ্য, অনলাইনে জুয়া খেলা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে তুলে নেয় বাসন থানা পুলিশ। গত শনিবার রাতে তাকে তুলে নেওয়ার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী নূপুর বেগমকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরে। তবে রবিউল ইসলামের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এ ভাষ্য মেনে নেয়নি।

পুলিশের নির্যাতনে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে বুধবার সকালে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় এলাকাবাসী দুটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পুলিশের ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন