প্রধান শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাকে মারধর
বরগুনা প্রতিনিধি
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৪:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এক শিক্ষিকাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষিকাকে একপর্যায়ে মারধর ও গলার ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
৮৩নং কাজিরাবাদ পঞ্চায়েত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, স্কুলের সহকারী শিক্ষিকাকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন আবু হানিফ। একদিন স্কুলে ওই শিক্ষিকাকে একা পেয়ে তার হাত ধরে ঝাপ্টাঝাপ্টি করেন হানিফ। পরে একপর্যায়ে তার গায়ের ওড়না দিয়ে তার গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কোনোমতে শিক্ষিকা চিৎকার দিয়ে ছুটে পালিয়ে যান এবং এলাকার মানুষ থানায় জানায়। পরে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় এক মুদি দোকানদার হানিফ মৃধা জানান, ঘটনা সত্য। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ আসলেই একজন কু-চরিত্রের লোক। এর আগে যে স্কুলে তিনি ছিলেন সেখানেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই লম্পটের বিচার চাই।
স্থানীয় জাকির নামে এক ব্যক্তি জানান, শিক্ষিকা তার বৃদ্ধ মা ও তার ছোট একটি সন্তান নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্বামী থাকেন ঢাকায়।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষকা যুগান্তরকে জানান, আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন। আমি আমার বৃদ্ধ মা ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকি। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ডিস্টার্ব করে আসছেন। হঠাৎ একদিন স্কুলে অন্য শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকায় আমার হাত ধরে এবং আমাকে জোর করে ঝাপ্টিয়ে ধরেন। একপর্যায়ে আমার ওড়না দিয়ে আমারই গালায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময়ে আমার ছোট মেয়ে দেখে আমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাকেও আছাড় মারে। আমি চিৎকার দিই পরে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং পরে বরগুনা সদর হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করানো হয়। এখনো আমার গলায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত টিও) মিজানুর রহমান খানকে জানালেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। কারণ তিনি প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের কাছ থেকে ঘুস খেয়েছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে শিক্ষক নামের কলঙ্ক এই আবু হানিফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযুক্তকারী প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে জানান, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আর কিছুই নয়।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাইমারি) মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত জেলা প্রাইমারি শিক্ষা স্যারের কাছে রয়েছে। যেহেতু কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে, সেখানে আমার করার কিছুই নেই। তা ছাড়া খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং উভয়কে শান্ত হতে বলেছি।
বেতাগী উপজেলা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আমি খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে আমাদের পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে শুনেছি কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। তবে সেই মামলার তদন্ত আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আমাদের কাছে কোনো তদন্ত এলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রধান শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাকে মারধর
বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এক শিক্ষিকাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষিকাকে একপর্যায়ে মারধর ও গলার ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
৮৩নং কাজিরাবাদ পঞ্চায়েত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, স্কুলের সহকারী শিক্ষিকাকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন আবু হানিফ। একদিন স্কুলে ওই শিক্ষিকাকে একা পেয়ে তার হাত ধরে ঝাপ্টাঝাপ্টি করেন হানিফ। পরে একপর্যায়ে তার গায়ের ওড়না দিয়ে তার গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কোনোমতে শিক্ষিকা চিৎকার দিয়ে ছুটে পালিয়ে যান এবং এলাকার মানুষ থানায় জানায়। পরে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় এক মুদি দোকানদার হানিফ মৃধা জানান, ঘটনা সত্য। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ আসলেই একজন কু-চরিত্রের লোক। এর আগে যে স্কুলে তিনি ছিলেন সেখানেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই লম্পটের বিচার চাই।
স্থানীয় জাকির নামে এক ব্যক্তি জানান, শিক্ষিকা তার বৃদ্ধ মা ও তার ছোট একটি সন্তান নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্বামী থাকেন ঢাকায়।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষকা যুগান্তরকে জানান, আমার স্বামী ঢাকায় থাকেন। আমি আমার বৃদ্ধ মা ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি ভাড়া বাড়িতে থাকি। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ডিস্টার্ব করে আসছেন। হঠাৎ একদিন স্কুলে অন্য শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকায় আমার হাত ধরে এবং আমাকে জোর করে ঝাপ্টিয়ে ধরেন। একপর্যায়ে আমার ওড়না দিয়ে আমারই গালায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময়ে আমার ছোট মেয়ে দেখে আমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাকেও আছাড় মারে। আমি চিৎকার দিই পরে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং পরে বরগুনা সদর হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করানো হয়। এখনো আমার গলায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত টিও) মিজানুর রহমান খানকে জানালেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। কারণ তিনি প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের কাছ থেকে ঘুস খেয়েছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে শিক্ষক নামের কলঙ্ক এই আবু হানিফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযুক্তকারী প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে জানান, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আর কিছুই নয়।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাইমারি) মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত জেলা প্রাইমারি শিক্ষা স্যারের কাছে রয়েছে। যেহেতু কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে, সেখানে আমার করার কিছুই নেই। তা ছাড়া খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং উভয়কে শান্ত হতে বলেছি।
বেতাগী উপজেলা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আমি খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে আমাদের পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে শুনেছি কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। তবে সেই মামলার তদন্ত আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আমাদের কাছে কোনো তদন্ত এলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।