মেয়র বললেন তিনি এলাকায়, ওসি বললেন পলাতক!
রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৪৭:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদ দিয়ে ৩ শিশুকে বেঁধে এলাকা ঘুরিয়ে মারধর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসাছাত্র শিশু তাউসিফের বাবা রমজান বাদী হয়ে গোপালদী পৌরসভার মেয়র আবদুল হালিম শিকদারসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আড়াইহাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার প্রধান আসামি মেয়র আবদুল হালিম শিকদার নিজেই বলেছেন তিনি এলাকায় ছিলেন। তবে আড়াইহাজার থানার ওসি বললেন- মেয়র পলাতক রয়েছেন!
তবে এ মামলায় পুলিশ হতদরিদ্র ২ নরসুন্দর (নাপিত) উৎপল শীল ও দীপক শীলকে গ্রেফতার করলেও ১নং আসামি পৌর মেয়র হালিম শিকদারকে স্পর্শও করেনি। উল্টো অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদার মঙ্গলবার দিনভর এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘুরে নিজের বক্তব্য পেশ করলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার। এ সময় তদন্ত টিমের সঙ্গে আড়াইহাজার থানা পুলিশের একটি টিমও ছিল।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ৯টায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মেয়র হালিম শিকদার মোবাইলে যুগান্তরকে নিজেই জানিয়েছেন, তিনি দিনভর এলাকায় ছিলেন এবং তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেছেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
জানা গেছে, সোমবার নিজের মালিকানাধীন সাইজিং মিলের মেশিনের নাট বল্টু চুরির অভিযোগে মাদ্রাসার ৩ শিশু শিক্ষার্থীর হাত বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে মাথার চুল কেটে দেন গোপালদী পৌরসভার মেয়র এমএ হালিম সিকদার। ২ ঘণ্টা ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পেটানোর পর তাদের রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় ঘুরানো হয় এবং স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে এসে শত শত মানুষের সামনেই উৎপল শীল ও দীপক শীলের দোকানে এনে চুল কেটে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশে স্থানীয় সরকার শাখার উপসচিব আনোয়ার হোসাইনকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উপসচিব আনোয়ার হোসাইন যুগান্তরকে জানান, আমি দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদার, ঘটনার শিকার শিশুদের পরিবার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার বক্তব্য রেকর্ড করেছি এবং ঘটনাস্থলগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই আমার তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেব।
এদিকে আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের শিকার শিশু তাউসিফের বাবা মামলার বাদী রমজান উল্লেখ করেন, সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি লোকমুখে শুনতে পান যে গোপালদী পৌরসভার মেয়র হালিম শিকদারের পাওয়ারলুম মেশিনের যন্ত্রাংশ চুরির সময় আমার ছেলে তাউসিফসহ আরও দুই শিশু বায়োজিদ ও সিয়ামকে রামচন্দ্রদী বাজারে দীপকের সেলুনে আটকে নির্যাতন করছে। খবর পেয়ে আমি ও অপর দুই শিশুর অভিভাবকরা ঘটনাস্থল দীপকের সেলুনে গিয়ে দেখতে পাই তিন শিশুরই মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা এবং তিনজনের হাত রশি দিয়ে বাঁধা। তাদের মারধর করা হয়েছে। বাজারের অন্যদের সহায়তায় তিন শিশুকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম মঙ্গলবার দিনভর এলাকায় ছিল। তাদের সঙ্গে অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদারও ছিলেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার না করে গ্রেফতার করা হলো দরিদ্র দুই নাপিতকে।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে হালিম শিকদারের টিকি স্পর্শ করতে ভয় পায় পুলিশ, সেখানে মেয়র হালিম শিকদারের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি নাপিতদের চুল কেটে দিতে নির্দেশ দিলে ওই দুই দরিদ্র নাপিতের কী করার ছিল।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দিনভর হালিম শিকদার এলাকায় থাকার পরেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আজিজুল হক দাবি করেছেন মেয়র হালিম শিকদার পলাতক আছেন। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিমের সঙ্গে হালিম শিকদার সশরীরে কথা বললেন, ঘটনাস্থলে গেলেন কিভাবে- এমন প্রশ্ন করতেই ফোনের লাইন কেটে দেন ওসি আজিজুল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মেয়র বললেন তিনি এলাকায়, ওসি বললেন পলাতক!
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদ দিয়ে ৩ শিশুকে বেঁধে এলাকা ঘুরিয়ে মারধর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসাছাত্র শিশু তাউসিফের বাবা রমজান বাদী হয়ে গোপালদী পৌরসভার মেয়র আবদুল হালিম শিকদারসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আড়াইহাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার প্রধান আসামি মেয়র আবদুল হালিম শিকদার নিজেই বলেছেন তিনি এলাকায় ছিলেন। তবে আড়াইহাজার থানার ওসি বললেন- মেয়র পলাতক রয়েছেন!
তবে এ মামলায় পুলিশ হতদরিদ্র ২ নরসুন্দর (নাপিত) উৎপল শীল ও দীপক শীলকে গ্রেফতার করলেও ১নং আসামি পৌর মেয়র হালিম শিকদারকে স্পর্শও করেনি। উল্টো অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদার মঙ্গলবার দিনভর এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘুরে নিজের বক্তব্য পেশ করলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার। এ সময় তদন্ত টিমের সঙ্গে আড়াইহাজার থানা পুলিশের একটি টিমও ছিল।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ৯টায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মেয়র হালিম শিকদার মোবাইলে যুগান্তরকে নিজেই জানিয়েছেন, তিনি দিনভর এলাকায় ছিলেন এবং তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেছেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
জানা গেছে, সোমবার নিজের মালিকানাধীন সাইজিং মিলের মেশিনের নাট বল্টু চুরির অভিযোগে মাদ্রাসার ৩ শিশু শিক্ষার্থীর হাত বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে মাথার চুল কেটে দেন গোপালদী পৌরসভার মেয়র এমএ হালিম সিকদার। ২ ঘণ্টা ওই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পেটানোর পর তাদের রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় ঘুরানো হয় এবং স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে এসে শত শত মানুষের সামনেই উৎপল শীল ও দীপক শীলের দোকানে এনে চুল কেটে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশে স্থানীয় সরকার শাখার উপসচিব আনোয়ার হোসাইনকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উপসচিব আনোয়ার হোসাইন যুগান্তরকে জানান, আমি দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদার, ঘটনার শিকার শিশুদের পরিবার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার বক্তব্য রেকর্ড করেছি এবং ঘটনাস্থলগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই আমার তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেব।
এদিকে আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের শিকার শিশু তাউসিফের বাবা মামলার বাদী রমজান উল্লেখ করেন, সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি লোকমুখে শুনতে পান যে গোপালদী পৌরসভার মেয়র হালিম শিকদারের পাওয়ারলুম মেশিনের যন্ত্রাংশ চুরির সময় আমার ছেলে তাউসিফসহ আরও দুই শিশু বায়োজিদ ও সিয়ামকে রামচন্দ্রদী বাজারে দীপকের সেলুনে আটকে নির্যাতন করছে। খবর পেয়ে আমি ও অপর দুই শিশুর অভিভাবকরা ঘটনাস্থল দীপকের সেলুনে গিয়ে দেখতে পাই তিন শিশুরই মাথার চুল এবড়োখেবড়ো করে কাটা এবং তিনজনের হাত রশি দিয়ে বাঁধা। তাদের মারধর করা হয়েছে। বাজারের অন্যদের সহায়তায় তিন শিশুকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম মঙ্গলবার দিনভর এলাকায় ছিল। তাদের সঙ্গে অভিযুক্ত মেয়র হালিম শিকদারও ছিলেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার না করে গ্রেফতার করা হলো দরিদ্র দুই নাপিতকে।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে হালিম শিকদারের টিকি স্পর্শ করতে ভয় পায় পুলিশ, সেখানে মেয়র হালিম শিকদারের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি নাপিতদের চুল কেটে দিতে নির্দেশ দিলে ওই দুই দরিদ্র নাপিতের কী করার ছিল।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দিনভর হালিম শিকদার এলাকায় থাকার পরেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আজিজুল হক দাবি করেছেন মেয়র হালিম শিকদার পলাতক আছেন। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিমের সঙ্গে হালিম শিকদার সশরীরে কথা বললেন, ঘটনাস্থলে গেলেন কিভাবে- এমন প্রশ্ন করতেই ফোনের লাইন কেটে দেন ওসি আজিজুল।