Logo
Logo
×

সারাদেশ

যে কারণে ক্লাসে মন দিতে পারছে না চকরাজাপুর হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা

Icon

আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৮ পিএম

যে কারণে ক্লাসে মন দিতে পারছে না চকরাজাপুর হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা

একদিকে পদ্মার ভাঙন, অপর দিকে ফাল্গুনের শুরুতে উড়ে আসা চরের বালুতে অস্বস্তিকর পরিবেশে ক্লাস করছে চকরাজাপুর হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা। বালু ছাড়া যে কোনো মুহূর্তে স্কুলটি পদ্মা নদীর গর্ভে চলে যাওয়ার ভয়ে তারা কেউই ক্লাসে মন দিতে পারছে না। স্কুলের মাঠ ও চারটি টিনের ঘর পদ্মায় চলে গেছে।

স্কুলটি পদ্মা পাড়ে নির্মিত হওয়ায় জেরে উঠা বালুর স্তূপ থেকে এই ফাল্গুনের বাতাসে উড়ে আসছে বালু। ফলে স্কুলে ক্লাস করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। আর পদ্মার ভাঙন থেকে মাত্র ৫ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলটি। যে কোনো মুহূর্তে স্কুলটি গিলে খাবে পদ্মা।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণা হাওয়ায় বালু উড়ে আসছে স্কুল কক্ষে। সেই বালু পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে থাকতে পারছে না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে নিয়মিত ক্লাসের পড়াশুনা।

এ বিষয়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া খাতুন বলেন, দুই দিন থেকে পদ্মার মধ্যে জেগে ওঠা চরের বালু বাতাসে উড়তে শুরু করেছে। এই বালু উড়ে এসে চোখে মুখে পড়ছে। জানালা দরজা বন্ধ করেও বালু রোধ করা যাচ্ছে না। ক্লাসে ঠিকভাবে বসে ক্লাস করতে পারছি না।

এদিকে বেলা ১২টার দিকে রাস্তায় চার ছাত্রী বই হাতে করে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল, এ সময় তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয়। তারা জানায়, উড়ে আসা বালু চোখে মুখে পড়ায় স্কুলে থাকতে পাচ্ছিলাম না। তাই স্যারকে বলে বাড়ি যাচ্ছি।

এ বিষয়ে চকরাজাপুর হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে চকরাজাপুর হাইস্কুল। পদ্মার ভাঙন থেকে ৫ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলটি। তবে স্কুলের মাঠ ও চারটি টিনের ঘর পদ্মায় চলে গেছে। যে কোনো সময় পাকা ভবন পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি জানান, স্কুলটি ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয়েছে। ভাঙনের কারণে ১৯৯৮ সালে, ২০১২ সালে ও ২০১৮ সালে স্থানান্তর করা হয়। এবারো অসময়ে পদ্মার ভাঙনের কারণে স্থানান্তর করতে হবে।

তিনি আরও জানান, পদ্মার চরে বড় বড় বালুর স্তূপ হয়ে আছে। এই বালু উড়ে ক্লাস ও অফিস কক্ষে আসছে। ঠিকমত ক্লাসে ও অফিসে বসে থাকতে পারছি না। কিছু শিক্ষার্থী থাকতে না পেরে ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিফিন নিয়ে বালুর কারণে খেতে পারছে না। উড়ে আসা বালুর কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বেকায়দায় রয়েছি।

চকরাজাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, এই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩৭ জন। পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের মাঠ পদ্মায় চলে গেছে। চার কক্ষের টিনের ঘর সরিয়ে নিয়েছি। স্কুলের ৩ কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন ও টিনের আরও ৪ কক্ষ ঘর পদ্মার ভাঙন থেকে ৫ মিটার দূরে অবস্থান করছে। বিষয়টি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তারপর বালু উড়তে শুরু করেছে, এতে বড় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম মনোয়ার বাবলু দেওয়ান বলেন, অসময়ে ভাঙনের কারণে চকরাজাপুর, কালিদাসখালী, লক্ষ্মীনগর মৌজার চিহ্ন হারিয়ে গেছে। বর্তমানে এগুলোর স্থান বলতে কিছু নেই। সম্পূর্ণটা নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে স্কুল ভবনটি স্থানান্তর না করলে অসময়ের ভাঙনে যে কোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে।

এছাড়া অসময়ে ভাঙনে চকরাজাপুর চরের শতাধিক বাড়িঘর ও শত শত বিঘা জমিতে রোপণ করা আমবাগান, কুলবাগান, পেয়ারাবাগান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসলি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম