বাবা হুজুরের জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লির ঢল
jugantor
বাবা হুজুরের জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লির ঢল

  হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি  

২৮ মার্চ ২০২৩, ২৩:০০:০৭  |  অনলাইন সংস্করণ

আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘বাবা হুজুর’ খ্যাত সিনিয়র উস্তাদ মুহতারাম আল্লামা মুমতাজুল করিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে তার কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বাবা হুজুরের পুত্র মাওলানা মাহমুদুল হাসান মমতাজি।

জানাজায় অংশ নেন- হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া, সহকারী পরিচালক মুফতি জসিমুদ্দীন, শিক্ষা সচিব আল্লামা কবির আহমদ ও সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা মো. পোরকান প্রমুখ।

পরে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে মকবারায়ে জামেয়ায় তার লাশ দাফন করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই জানাজাকে কেন্দ্র করে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে মাদ্রাসা সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকা। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে মানুষ এই জানাজায় অংশ নেন। এর আগে ৩টা ৪০ মিনিটে তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে তিনি রাজধানীর ঢাকার আল করিম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। আল্লামা মুমতাজুল করিম এর মৃত্যুর খবরে সোমবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে শেষবারের মত এক নজর দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী।

এছাড়া দীর্ঘ ৩০ বছর সংসার জীবন শেষে বাবা হুজুরের প্রিয়তমা স্ত্রী ১৯৯৫ সাল ৯ মে (হজের দিন) ইন্তেকাল করেছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মৃত্যুকালে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য ভক্ত এবং গুণীজন রেখে গিয়েছেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফ আলী নিজামপুরী জানান, হুজুর অত্যন্ত সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অপরিসীম দরদ, ছাত্র গড়ার প্রতি তার মেহনত থেকে ছাত্ররা তাকে ‘বাবা হুজুর’ বলে সম্বোধন করতে থাকে। তিনিও দেশব্যাপী ‘বাবা হুজুর’ নামে পরিচিতি পান। টানা ৩৫ বছর (২০১৯ পর্যন্ত) তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।

অন্যদিকে তার ইন্তেকালের খবরে জামিয়ার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া এক বিবৃতিতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের রূহের মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য দোয়া করেন। একই সঙ্গে তিনি (মহাপরিচালক) মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, স্বজন এবং ভক্ত ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি তাদের ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন।

প্রসঙ্গত মাওলানা মুমতাজুল কারিম বাবা হুজুর ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর থানার ডুলিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশে পড়াশুনা শেষ করে পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদ্রাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসায়, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদ্রাসায়, ঢাকা আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদ্রাসায় ও চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

বাবা হুজুরের জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লির ঢল

 হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
২৮ মার্চ ২০২৩, ১১:০০ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘বাবা হুজুর’ খ্যাত সিনিয়র উস্তাদ মুহতারাম আল্লামা মুমতাজুল করিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে তার কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বাবা হুজুরের পুত্র মাওলানা মাহমুদুল হাসান মমতাজি।

জানাজায় অংশ নেন- হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া, সহকারী পরিচালক মুফতি জসিমুদ্দীন, শিক্ষা সচিব আল্লামা কবির আহমদ ও সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা মো. পোরকান প্রমুখ।

পরে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে মকবারায়ে জামেয়ায় তার লাশ দাফন করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই জানাজাকে কেন্দ্র করে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে মাদ্রাসা সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকা। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে মানুষ এই জানাজায় অংশ নেন। এর আগে ৩টা ৪০ মিনিটে তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে তিনি রাজধানীর ঢাকার আল করিম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। আল্লামা মুমতাজুল করিম এর মৃত্যুর খবরে সোমবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে শেষবারের মত এক নজর দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী।

এছাড়া দীর্ঘ ৩০ বছর সংসার জীবন শেষে বাবা হুজুরের প্রিয়তমা স্ত্রী ১৯৯৫ সাল ৯ মে (হজের দিন) ইন্তেকাল করেছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মৃত্যুকালে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য ভক্ত এবং গুণীজন রেখে গিয়েছেন।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফ আলী নিজামপুরী জানান, হুজুর অত্যন্ত সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অপরিসীম দরদ, ছাত্র গড়ার প্রতি তার মেহনত থেকে ছাত্ররা তাকে ‘বাবা হুজুর’ বলে সম্বোধন করতে থাকে। তিনিও দেশব্যাপী ‘বাবা হুজুর’ নামে পরিচিতি পান। টানা ৩৫ বছর (২০১৯ পর্যন্ত) তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।

অন্যদিকে তার ইন্তেকালের খবরে জামিয়ার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া এক বিবৃতিতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুমের রূহের মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য দোয়া করেন। একই সঙ্গে তিনি (মহাপরিচালক) মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, স্বজন এবং ভক্ত ও অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি তাদের ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন।

প্রসঙ্গত মাওলানা মুমতাজুল কারিম বাবা হুজুর ১৯৪২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার সদর থানার ডুলিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশে পড়াশুনা শেষ করে পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদ্রাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসায়, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদ্রাসায়, ঢাকা আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদ্রাসায় ও চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও খবর
 
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন