Logo
Logo
×

সারাদেশ

সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রশ্নে ইসকন-সনাতন ধর্মের নেতাদের মধ্যে বিতণ্ডা

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম

সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রশ্নে ইসকন-সনাতন ধর্মের নেতাদের মধ্যে বিতণ্ডা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে রংপুর জেলা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় মিলনায়তনে রংপুরের জেলা পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সনাতনী ধর্মীয় নেতা উত্তম কুমার সাহা, সুব্রত সরকার মকুল, পূজা উদযাপন পরিষদ জেলার সাধারণ সম্পাদক বাবু রাম জীবন, কেরামতিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা বায়েজীদ আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহবায়ক ইমতিয়াজ উদ্দিন ইমতিসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা-মহানগরের প্রতিনিধিরা।

সভায় সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রশ্নে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়েছে ইসকন ও পূজা উদযাপন পরিষদ আর হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ নেতাদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে বক্তব্য রাখেন। এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে পালটা বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদ আর হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতারা। তারা ইসকনের ওই অভিযোগ অস্বীকার করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার রংপুর পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন তার কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সমন্বয়ক এবং মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।

সভায় ইসকন-সমর্থক দুই নেতা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করে বলেন, এখনো সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে। ইসকন কোনো মৌলবাদী সংগঠন নয় বলে দাবি করেন তারা।

এ ঘটনা নিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতারা ইসকন নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। এ নিয়ে সভায় হইচই উত্তেজনা দেখা দেয়।

পরে পুলিশ সুপার উভয়পক্ষকে শান্ত করেন। তিনি এ সময় বলেন, সব সম্প্রদায়ের যুবক-তরুণদের ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। কোনো ধর্মই সহিংসতাকে সমর্থন করে না। এখন বাংলাদেশে যে নবজাগরণ সেই লক্ষ্যে সব সম্প্রদায়কে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনো উসকানিতে কোনো ধরনের সহিংসতাকে দেশ-রাষ্ট্র ও আইন সমর্থন করে না। তাই তিনি এ ব্যাপারে বিশেষ করে অভিভাবকদের এবং ধর্মীয় নেতাদের আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার আহবান জানান।

পুলিশ সুপার আরও জানান, আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি কুচক্রী মহল সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়াচ্ছে। কারো উসকানিতে প্ররোচিত হয়ে আমরা যেন সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ি সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ যেমন সবার, তেমনি দেশের আইনও সবার জন্য সমান।

সভায় সনাতনী ধর্মীয় নেতারা বলেন, গ্রেফতার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকন থেকে অনেক আগেই বহিষ্কৃত হয়েছেন; কিন্তু তারা কিভাবে রংপুরে এসে সমাবেশ করল তা আমাদের জানা নেই। চট্টগ্রামে আইনজীবীকে যে বা যারা হত্যা করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে নিরীহ হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচার হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষজন যে সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বসবাস করি, তা সার বিশ্বের কাছে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। তবে একটি মহল আমাদের এই সম্প্রীতি ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করছে।

রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাম জীবন বলেন, রংপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইসকনকে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মনে করেন না বলে জানান তিনি।

রংপুর মহানগর ছাত্র সমন্বয়ক ইমতিয়াজ উদ্দিন ইমতি অভিযোগ করে বলেন, সংখ্যালঘুরা ভারতপ্রীতি বন্ধ না করলে সমস্যা থাকবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভালো। একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়াদাওয়া করি। কিন্তু একটি মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খয়রাত হোসেন ও জামায়াত নেতা আব্দুস সালাম বলেন, রংপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার ইসকনকে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিন্তু তারা সফল হবে না।

রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ আহম্মেদ বলেন, দেশে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলে অমুসলিম ভাইয়েরা আরও বেশি স্বাধীনতা পাবেন।

এদিকে সভা শেষে পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে ইসকন ও হিন্দু নেতাদের মধ্যে আরেক দফা বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম