Logo
Logo
×

সারাদেশ

২০০ কোটি টাকা ডাকাতি করতে বাড়ির মালিককে জিম্মি

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

২০০ কোটি টাকা ডাকাতি করতে বাড়ির মালিককে জিম্মি

চট্টগ্রামে এবার ২০০ কোটি টাকা ডাকাতি করতে দিনদুপুরে বাড়ির মালিককে জিম্মি করে গৃহকর্মীবেশী চার ডাকাত। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ওআর নিজাম রোডের আল-হিদায়াহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশের ভবনে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে পুরো ভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের নেতৃত্বে শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অভিযান। পাঁচ মিনিটের মধ্যে জিম্মি দশা থেকে বাড়ির মালিককে উদ্ধার করার পাশাপাশি দুই ডাকাতকে আটক করা হয়। এ সময় অপর দুই ডাকাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ লোকমান। তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আবুল খায়ের গ্রুপের কর্ণধার আবুল খায়েরের মেয়ের জামাতা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ষষ্ঠতলা ভবনের দ্বিতীয়তলায় থাকতেন মোহাম্মদ লোকমান। সকাল ১১টায় ওই বাড়ির মালিকের গৃহকর্মীসহ ৪ ডাকাত তার বাসায় প্রবেশ করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লোকমানকে বাথরুমে নিয়ে জিম্মি করে। এ সময় তারা লোকমানকে টাকা বের করে দিতে বলে, অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ডাকাতরা। সময় গড়ানোর একপর্যায়ে তাদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে আঘাত করে। ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন ও প্রতিবেশীরা টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

দুপুর ২টার দিকে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাসদস্যদের যৌথ একটি দল ভবনটিতে ঢোকে। সংক্ষিপ্ত এক অভিযানে এ সময় তারা বাড়ির মালিক লোকমানকে জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারের পাশাপাশি মো. বায়েজিদ শেখ (১৯) নামে এক ডাকাতকে আটক করে। এছাড়া পালিয়ে যাওয়ার সময় মো. আকাশ (২৫) নামে আরও এক ডাকাতকে আশেপাশের লোকজন পুলিশের হাতে তুলে দেন। উদ্ধারের পর লোকমানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, পলাতক দুজনের মধ্যে একজনের নাম সাব্বির ও অপরজনের নাম রিয়াদ। এরমধ্যে সাব্বির ওই ভবনে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এছাড়া রিয়াদও পূর্বে ওই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তারাই অন্য দুই পেশাদার ডাকাতকে নিয়ে ভবন মালিক লোকমানকে জিম্মি করেছে।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি সেক্টরে কর্মরত থাকাকালীন এই কর্মকর্তা বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। তার বাসায় অন্তত ২০০ কোটি টাকা ছিল বলে ডাকাতদের কাছে তথ্য ছিল। তাছাড়া গৃহকর্মী হওয়ার কারণে দুই ডাকাত লোকমানের অর্থ-সম্পদের বিষয়ে অবগত ছিল। বাসায় লোকমান একা থাকতেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই মাসের শেষের দিকে মোহাম্মদ লোকমানকে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

দুপুর পৌনে ৩টায় ভবন থেকে বেরিয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, দুপুর ১২টায় পুলিশ খবর পেয়ে পুরো ভবন ঘিরে ফেলে। এরপর র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে যোগ দেয়। ভবনটি লোকমান নামের এক ব্যক্তির। তাকে ডাকাতরা বাথরুমে বন্দি করে রেখেছিল। পাঁচ মিনিটের অপারেশনে আমরা তাকে উদ্ধার করি। তিনি কিছুটা আহত হয়েছেন। তাকে আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, তাকে রক্ষা করার জন্য আমরা একটি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছি। এ ঘটনায় দুজন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছি।

সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাথরুমের দরজা ভেঙে জিম্মি দশা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুই ডাকাতের কাছ থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছার আগেই ডাকাতিতে অংশ নেয়া দুই ডাকাত পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, বাড়ির মালিকের গৃহকর্মী ক্রিমিনাল দলের সদস্য। তার কাছে হয়তো তথ্য ছিল তার মালিকের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। সেই টাকা ডাকাতি করতেই বাড়ির মালিক লোকমানকে হয়তো জিম্মি করেছিল। তবে যৌথ অভিযানে সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

এর আগে ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর খুলশী এলাকায় যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটে একটি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন।

রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতদের কাছে তথ্য ছিল গিয়াস উদ্দিনের ফ্ল্যাটে ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা করে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ২০ জনের একটি দল সেই ফ্ল্যাটে যায়। টাকা আনতে নিয়ে যান ২০টি বস্তা ও ২টি মাইক্রোবাস।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম