পহেলা বৈশাখে পরেছিল নতুন জামা, ধর্ষণের পর হত্যা করল শিশুকে

বড়াইগ্রাম ও চাটমোহর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
-15-04-2025-(3)-67fe902c9848a.jpg)
পহেলা বৈশাখে নতুন জামা পরেছিল আর মুখে মেখেছিল নানা প্রসাধনী। এরপর প্রবাসে থাকা বাবাকে ভিডিও কলে নিজের সাজগোজ দেখিয়েছিল জুঁই (৭)। তাকে দেখে খুশি হয়েছিলেন বাবা। বাবা-মেয়ের খুঁনসুটির পর কথা শেষ করে বিকালে বাড়ির পাশেই দাদির (দাদির বোন) বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বের হয় সে। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ ছিল না তার।
মঙ্গলবার সকালে একটি ভুট্টাখেতে জুঁইয়ের বিবস্ত্র লাশ পাওয়া যায়। জুঁইকে ধর্ষণের পর পরণের প্যান্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
জুঁই নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জাহিরুল ইসলামের মেয়ে। সে গাড়ফা আজেদা নুরানি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী ছিল।
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার, চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম ও বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শিশুটির মা মোমেনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে জানান, সোমবার বিকালে জুঁই দাড়ির বাড়িতে বেড়াতে যায়। দাদির হাতে রান্না করা সেমাই খাবে এবং রাতে সেখানেই থাকবে বলেছিল কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে জুঁই ওখানে যায়নি। এরপর চারদিকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে তার দাদি বাড়ির অদূরে চাটমোহর উপজেলার রামপুর বিলের ভুট্টার জমিতে জুঁইয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ি থেকে মাত্র একশ গজ দূরে রামপুর বিলের একটি ভুট্টাখেতে জুঁই খাতুনের বিবস্ত্র লাশ পড়ে আছে। মুখে পোড়া ক্ষত কালো চিহ্ন। পরনের প্যান্ট গলায় পেঁচানো।
যে মেয়ে নতুন জামা ও সাজুগুজু করে দিনভর হৈ-হুল্লোড়ে মেতেছিল, যে মুখ দেখিয়েছিল বাবাকে, সেই জুঁইয়ের অ্যাসিডে পোড়ানো ক্ষতবিক্ষত মুখ দেখে পুরো এলাকার মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গেছে। শিশুটিকে হত্যার এমন বীভৎসতায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকাবহ পরিবেশ।
সাবেক ইউপি সদস্য আন্তাদুল ইসলাম জানান, যেখানে শিশুটির লাশ পাওয়া গেছে, সেখানে ভুট্টার গাছসহ সবকিছু স্বাভাবিক। এতে শিশুটিকে অন্য কোথাও হত্যা করে এ জমিতে লাশ ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, শিশুটিকে বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলায়। লাশ উদ্ধার হয়েছে চাটমোহরের সীমানায়। এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তার বলেন, প্রাথমিকভাবে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং মুখ অ্যাসিডে পোড়ানো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে।