Logo
Logo
×

সারাদেশ

মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভ্যান লাগিয়ে সাড়া ফেলেছেন রাজবাড়ীর মন্টু

Icon

হেলাল মাহমুদ, রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভ্যান লাগিয়ে সাড়া ফেলেছেন রাজবাড়ীর মন্টু

রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভ্যানের বডি লাগিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন রাজবাড়ীর মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। ব্যাটারিচালিত ভ্যানের খরচ কমাতে এই কাজ করেছেন তিনি। তার তৈরি করা গাড়িটির নাম দিয়েছেন- মন্টু মোটর ভ্যানগাড়ি।

মন্টু মিয়ার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ধুঞ্চি গ্রামে। মন্টু মিয়া পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও বিভিন্ন জিনিস বানানোর স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই; কিন্তু অর্থ কষ্টে থমকে যায় তার সব ইচ্ছা। পাঁচ বছরের চিন্তা শেষে বানিয়েছেন ব্যতিক্রমী এই যানবাহনটি। প্রতিদিন এই যানবাহনটি দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।

জানা যায়, বিগত ৫ বছর ধরে স্বপ্ন দেখে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভ্যানের বড়ি লাগিয়ে জিনিসপত্র বহন করবেন; কিন্তু অর্থকষ্টে থেমে যায় মন্টুর মিয়ার স্বপ্ন। এরপরও তিনি হাল না ছেড়ে একটি সাইকেল মেকারের দোকান থেকে কিস্তি উঠিয়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে লটারিতে পাওয়া ৮০ সিসির একটি মোটরসাইকেল কিনে নেন। এরপর নিজের বুদ্ধি আর পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন মোটরসাইকেলের সঙ্গে ভ্যানগাড়ি। এতে তার খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। গাড়িটি তৈরি করার পর এই গাড়ি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। 

রিকশাচালক জমির আলী বলেন, নদীতে গোসল করতে যাওয়ার পথে এই গাড়িটি দেখে দাঁড়ালাম। রাজবাড়ীতে এমন ভ্যানগাড়ি এই প্রথম দেখলাম। মোটরসাইকেলের পেছনের চাক্কা খুলে আর ভ্যানের সামনের চাক্কা খুলে ফিটিং করে গাড়িটি বানানো হয়েছে। মন্টু শেখের মাথায় অনেক বুদ্ধি। আজব এক জিনিস সৃষ্টি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন।

মন্টু মিয়ার মা ময়না বেগম বলেন, আমার ছেলে কাঠমিস্ত্রির কাজ করত। তার পাশাপাশি রিকশা-ভ্যানও চালায়। আর যখন কাজ থাকে না তখন সে যে কি করে বোঝা কষ্টকর। সে পুরাতন রিকশা কিনে এনে সব খুলে আবার অন্যরকম করে রিকশা বানায়। এই ভ্যান আর মোটরসাইকেল কিনে সেটা খুলে এমন গাড়ি তৈরি করেছে। এখন এই গাড়ি দেখতে প্রতিদিন বাড়িতে ভিড় জমে যায়।

মন্টু মিয়ার স্ত্রী জুলেখা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খেতে হয়। আমার স্বামী কাজ করে যা তৈরি করেছে তা অবাক করার বিষয়। মোটরসাইকেল কেটে ভ্যান কেটে একটা গাড়ি তৈরি করেছে। গাড়িটি দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে গাড়ির যন্ত্রপাতি মোটরসাইকেল আর ভ্যান কেটে অবাক করা গাড়ি বানাইছে। 

মন্টু মিয়া বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রি। এছাড়াও যখন সময় পাই তখন ভ্যান, রিকশা চালাই। ভ্যানের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে চার্জ দিলে চার্জ হয় না, অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না তখন বসে থাকতে হয়।  তাই আমার খুব শখ ছিল মোটরসাইকেল চালানো।  টাকার অভাবে মোটরসাইকেল কিনতে পারি নাই। একজনকে বলেছিলাম কম দামে কেউ মোটরসাইকেল বিক্রি করলে জানাতে। পরে একজন লোক লটারিতে পাওয়া ৮০ সিসি মোটরসাইকেল বিক্রি করবে শুনে কিস্তি তুলে সেটা ১৬ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এই গাড়ি তৈরি করেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমি ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করি। বাঁশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল টানি। ১ লিটার তেল লাগে না দৈনিক। আগে অনেক অসুবিধায় পড়তে হতো। ভ্যানে চার্জ থাকত না, ব্যাটারি দুর্বল হয়ে যেত। এখন কোনো চিন্তাই করতে হয় না। অনেকে এই গাড়িটি দেখে আমাকে বানিয়ে দিতে বলেছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) প্লাবন আলী বলেন, মন্টু মিয়ার অনেক মেধা। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু তৈরি করে। এবার মোটরসাইকেলের পেছনের চাক্কা খুলে আর একটি ভ্যানের সামনের চাক্কা খুলে একটি গাড়ি তৈরি করেছে। সে একজন কাঠমিস্ত্রি। মিস্ত্রি কাজের পাশাপাশি সে ভ্যান-রিকশা চালায়। তবে এমন গাড়ি আমিও প্রথম দেখছি। 

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউল্লাহ বলেন, মোটরসাইকেল দুই চাক্কার হয়, কিন্তু গাড়িটি যখন মডিফাই করবে অর্থাৎ দুই চাক্কা থেকে তিন চাক্কাতে পরিণত করবে তখন বিআরটিএতে আবেদন করতে হয়। আর তিনি যেভাবে গাড়িটি তৈরি করেছেন এটি কন্ট্রোল করা কঠিন। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে জানান।

রাজবাড়ী পুলিশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম