অটোচালককে মারধরের পর থুতু চাটালেন সাবেক ছাত্রদল নেতা

যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম

আহত অন্তর মিয়া হাসপাতালে ভর্তি। ইনসেটে অভিযুক্ত নবীন যুবদল নেতা
মানিকগঞ্জে সাবেক ছাত্রদল নেতাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি করায় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে আহতসহ তাকে প্রকাশ্যে থুতু ফেলে তা চাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের শিকার সিএনজিচালক মো. অন্তর মিয়া (৩৩) স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাবেক ছাত্রদল নেতা নবীনের ব্যক্তিগত অফিসে ঘটনাটি ঘটে।
আহত অন্তর মিয়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালা গ্রামের মৃত বাবু মিয়ার ছেলে। তিনি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জ-সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কে সিএনজিচালক।
অভিযুক্ত নবীন যুবদল নেতা পরিচয় দিলেও তার যুবদলের কোনো পদ নেই বলে দাবি করেছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তুহিনুর রহমান তুহিন। নবীন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পটপরিবর্তনের পর থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহণের একাংশ (সিএনজি স্ট্যান্ড) নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। তার নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে পরিবহণ থেকে চাঁদা আদায়, পরিবহণের সিরিয়াল বাণিজ্য এবং পরিবহণ সংগঠনের নামে জিপি আদায়। তার এ কাজের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী বাহিনী।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিএনজিচালক অন্তরকে চাপ দিয়ে আসছিল নবীনকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। এরই জের ধরে ১৮ মে তাকে ফোন দিয়ে পরদিন সকাল ১০টার ভেতর চাঁদার টাকা নিয়ে তার ব্যক্তিগত অফিসে আসতে বলেন। পরদিন সময় মতো চাঁদার টাকা নিয়ে উপস্থিত না হওয়াতে তাকে পুনরায় ফোন দিয়ে গালমন্দ করা হয় এবং সিএনজি মালিককে সঙ্গে নিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন। দুপুর দেড়টার সময় সিএনজি মালিকসহ চালক অন্তর নবীনের অফিসে উপস্থিত হন। ঠিক সময়ে অনুপস্থিত এবং চাঁদার টাকা না দেওয়ায় নবীন এবং তার অনুসারীরা চালক অন্তরকে বেধড়ক মারধর করেন এবং একপর্যায়ে থুতু ফেলে চালক অন্তরকে দিয়ে তা চাটান। এরপর পানি দিয়ে গিলে খাওয়ান।
ভুক্তভোগী সিএনজিচালক অন্তর মিয়া বলেন, মাঝে-মধ্যেই আমার কাছে চাঁদার টাকা দাবি করে। আমি নিম্নআয়ের মানুষ, ভাড়ায় গাড়ি চালাই। আমার পক্ষে এত টাকা একসাথে দেওয়া সম্ভব না। ঘটনার দিন আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে লোকজনের সামনে হাত বেঁধে রড দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয়। আড়াই ঘণ্টা পর আমাকে নবীনের অফিস থেকে ছাড়লে আমার মালিক হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি মালিক ওমর ফারুক (৪০) বলেন, আমার ড্রাইভারকে দুই ঘণ্টা ধরে বেধড়ক মারধর করেছে। তাদের হাত-পা ধরে মাফ চাইছি, বলেছি প্রয়োজনে আর আমি ব্যবসা করব না তাকে ছেড়ে দেন। আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে লোহার রড দেয়া বেধড়ক পিটুনিসহ উপস্থিত সবার সামনে অন্যের মুখের থুতু চেটে খাওয়ানো হয়।
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে মো. নবীন বলেন, পরিবহণের সিরিয়াল নিয়ে অন্য চালকদের সঙ্গে তার (অন্তর) দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়েছিল মাত্র। অন্যান্য শ্রমিকদের উপস্থিতিতে বিষয়টা মিটমাট হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো কিছু হয়ে থাকলে তার জন্য তিনি দায়ী নন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদীন কায়সার বলেন, দল থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে- পরিবহণ কিংবা অন্য কোনো জায়গায়ও দলের কোনো নেতাকর্মী যদি অনৈতিক কাজ করে তাহলে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এসএম আমান উল্লাহ বলেন, এ ধরনের ঘটনা নিয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।