যৌতুক নয়, খেজুর দিয়ে ব্যতিক্রমী বিয়ে আলোড়ন তুলেছে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

যৌতুক নয়, ছিল খেজুর। হইচই নয়, ছিল কেবল দোয়া। গান-বাজনা নয়, বিয়ে পড়ানো হলো মসজিদের পবিত্র পরিবেশে। ঠাকুরগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা শিয়ালখাদা গ্রামে সোমবার সন্ধ্যায় এমনই এক ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন বিয়ে আলোড়ন তুলেছে এলাকায়।
এই বিয়েতে ছিল না সাজসজ্জার বাহুল্য, ছিল না গায়ে হলুদ, ছিল না বড় কোনো মঞ্চ। ছিল কেবল আন্তরিকতা, সরলতা আর একটা উদাহরণ গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছা।
পাত্র আশরাফুল ইসলাম দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার গাঙ্গোর গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। পাত্রী শিয়ালখাদা গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের মেয়ে মাহফুজা আক্তার।
বিয়েটি হয় শিয়ালখাদা কেন্দ্রীয় মসজিদে। কাজী ছিলেন সাতোর ইউনিয়নের অভিজ্ঞ কাজী আবুল বাশার। মোহরানা ধার্য হয় ৪০ হাজার টাকা। পাত্র আশরাফুলের পক্ষ থেকে প্রতীকী উপহার হিসেবে কিছু উন্নত জাতের খেজুরও দেওয়া হয়।
বিয়েতে দুই পক্ষের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়সহ মোট ৯০–১০০ জন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর অতিথিদের জন্য ছিল মিষ্টি বিতরণ ও মোনাজাত।
আশরাফুল ইসলাম (৩২) বলেন, বিয়েকে একটা সামাজিক উৎসবের বাইরে এনে আমি চেয়েছি এটাকে বরকতের একটি অনুষ্ঠান বানাতে। যৌতুক, সাজসজ্জা—এসব আমার পছন্দ নয়। বরং আমি চাইছিলাম আমার বিয়ে যেন অন্যদের জন্য একটি বার্তা হয়। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, সেটা হয়েছে।
বিয়ে পড়ানো কাজী আবুল বাশার জানান, আমি ৩০ বছর ধরে বিয়ে পড়াই। কিন্তু এমন শান্তিপূর্ণ ও সাদামাটা বিয়ে খুব কমই দেখি। আশরাফুল সাহেব নিজের ইচ্ছাতেই খেজুর উপহার দেন। ইসলামী আদর্শে যে বিয়ে কীভাবে হয়, এটা তার একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন শিয়ালখাদার সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম, তিনি বলেন, আজকালকার দিনে যেখানে বিয়ে মানেই লাখ লাখ টাকা খরচ; সেখানে আশরাফুল ভাইয়ের মতো একজন যদি এমন বিয়ে করতে পারেন, তবে এটা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—চাইলেই সাদামাটা বিয়ে করা যায়।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা সাহিদা খাতুন বলেন, যৌতুক ছাড়াই বিয়ে—এই বার্তাটা আমাদের সমাজে খুব প্রয়োজন। এমন বিয়ে যেন আরও হয়। আমি এই বিয়েতে এসে কাঁদছিলাম—ভালো লাগায়, আবেগে।