কোটি টাকার গাড়ি নিজেদের দাবি করে ফেরত চাইলেন আনারকন্যা ডরিন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে একটি বহুতল ভবনের পার্কিংয়ে পাওয়া ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আনার কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সেই গাড়িটি ফেরত চেয়েছেন তিনি।
ডরিন বলেন, ‘কুষ্টিয়াতে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের যেই গাড়ির
সন্ধান মিলেছে, সেই গাড়িটি আমার বাবার। এ গাড়িতে করে আমি ও আমার বাবা চলাফেরা করেছি।
গাড়িটি আমাদের। আমাদের গাড়ি আমাদেরকে ফেরত দেওয়া হোক। বাবার গাড়ি আমরা ফেরত চাই।’
এর আগে সোমবার রাতে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ৮ তলা
বিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামে ভবনের গ্যারেজে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি
পাওয়া যায়। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কালো কালারের গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ
১২-৬০৬০’।
কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই স্বপন বলেন, ‘গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে
আসি। গাড়ি থেকে কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে।’
ওই বাসার কেয়ার টেকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি নামে
একটা সিগারেট কোম্পানি তিনটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন এবং খাওয়া-দাওয়া
করেন। তারাই গাড়িটা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। জেনুইন লিফ কোম্পানির বেলাল স্যার জিএম
আর জাহিদ স্যার সিইও। প্রায় তিন মাস আগে গাড়িটি এখানে এনে রাখা হয়। জাহিদ ও বেলাল স্যারের
হেফাজতে গাড়িটি ছিল।গাড়িটা বাহিরে বের করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হয়।
চালক শান্ত গাড়িটা স্টার্ট দেন।’
গাড়িচালক শান্ত বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নেই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির
গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা
দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বেলাল ও জাহিদ
স্যারের হুকুমে আমি স্ট্যার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে তা আমি জানি না। বেলাল স্যার
আর জাহিদ স্যার সব কিছু জানেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনুইন লিফ কোম্পানি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নতুন
প্রসেসিং কারখানা করছে। কোম্পানিটির মালিক আব্দুস সবুর লিটন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে।
নরসিংদী জেলায় ‘তারা ট্যোবাকো’ নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী
নওফেল চৌধুরীর সঙ্গে ‘বিজয় ট্যোবাকো’ নাম দিয়ে একসঙ্গে ব্যবসা করতেন ওই লিটন।
৫ আগস্টের আগে দৌলতপুর উপজেলায় তারা ও বিজয় ট্যোবাকোর নামে তামাক ক্রয়
করতেন লিটন। বিএনপির দুই নেতার ছত্রছায়ায় লিটন নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন ভেড়ামারায়।
গাড়িটি আওয়ামী লীগের কোনো নেতার মাধ্যমে লিটনের কোম্পানির লোকজন এখানে নিয়ে এসেছে বলে
ধারণা করা হচ্ছে।
লিটনের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন জাহিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এছাড়া
বেলাল হোসেন নামের এক জিএম আছে। তাদের হেফাজতে গাড়িটি ছিল বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
আব্দুস সবুর লিটন ও নওফেলের নেতৃত্বে কুষ্টিয়ায় নকল গোল্ডলিফ ও বেনসন সিগারেট তৈরি
করে এ চক্রটি। তারা দীর্ঘদিন ধরেই কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারায় গোপন
কারখানায় নকল সিগারেট তৈরি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, আমরা প্রথমে শুনতে পাই, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর
সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে।
পরে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। সংসদ
সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করেছে। গাড়ির কাগজপত্র দেখে বুঝা যায় যে গাড়ির মালিক ঝিনাইদহ-৪
আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক সামছুল ইসলাম, জেনুইন লিফ
টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত
করে দেখা হচ্ছে। এখন ছুটি চলছে। অফিস খুললে বিআরটিএ থেকে গাড়ির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হবে।
এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে গাড়িটির মালিক আনার নাকি অন্য কেউ।’