নোটিশ করেই দায় সেরেছে বিএডিসি
লাখাইয়ে আ.লীগ নেতার দখলে সেচ প্রকল্প

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে অধিকাংশ সেচ প্রকল্পই ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দখলে। তারা এসব প্রকল্প নিয়ে চার্জ উত্তোলনে কৃষকদের ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছেন। নির্ধারিত চার্জের ৩-৪ গুণ বেশি চার্জ আদায় করেছেন। এসব টাকা কেউ কেউ আবার আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার পশ্চিম রুহিতনশী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল বারেক, জাকির হোসেন ও আলী আহমদ জানান, সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার মহিবুর রহমান প্রতি ৩৩ শতাংশে ১৯ কেজি করে ধান নেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নিচ্ছেন ১ মন করে। আবার কারও কাছ থেকে বেশিও নিয়েছেন। বিএনডিসি সরেজমিন তদন্ত করেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
একই গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন মিয়া বলেন, প্রকল্পের ম্যানেজার মহিবুর রহমান একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দলের প্রভাব খাঠিয়ে অন্তত ১৫-১৬ বছর ধরে সেচ প্রকল্পটি নিজের দখলে রেখেছেন। তিনি একেক জনের কাছ থেকে প্রতি ৩৩ শতাংশে ১ থেকে ৩ মন পর্যন্ত ধান নেন। অথচ নেওয়ার কথা ১৯ কেজি। আমি অভিযোগ দিয়েছি। এরপর বিএডিসি তদন্ত করেছে। নোটিশ করেছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি দাবি করেন, এসব টাকা দিয়ে তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য ব্যবহার করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
একই এলাকার বাসিন্দা আশীষ দাশ গুপ্ত বলেন, মাঝে মাঝেই মহিবুর রহমানসহ কয়েকজন এলাকায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন। পুলিশ তাদের ধরছে না। তাই তারা নিরাপদেই সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সেচ প্রকল্প থেকে তারা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সেসব টাকা নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারেন; যা এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নয়াহাটি সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার মহিবুর রহমান বলেন, কোনো কৃষক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়নি। আমি জন্মের পর থেকেই সেচ প্রকল্প চালিয়ে আসছি। কারও কাছ থেকেই বেশি নিইনি। আমার উপযুক্তটাই দেয় না। অনেকের কাছে এখনও সেচ চার্জ পাওনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আগে বিএনপি ছিলাম। অরিজিনাল বিএনপি। ১০ বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। কোনো পদ নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
বিএডিসি’র সহকারি প্রকৌশলী ও উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব এএম রাকিবুল হক বলেন, বিষয়টি আমরা একবার তদন্ত করেছি। আরও তদন্ত প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই তাকে অতিরিক্ত নেওয়া ধান ফেরত দেয়ার জন্য তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে আগামী বছর থেকে তাকে আর দরপত্রে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। কোনো অসৎ ব্যক্তিকে আমরা সেচ প্রকল্প দিতে চাই না।
অভিযোগে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করার জন্য লাখাই উপজেলার নয়াহাটি সেচ প্রকল্পটি নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পশ্চিম রুহিনশী গ্রামের বাসিন্দা মহিবুর রহমান।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর তাকে উক্ত প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয় উপজেলা সেচ কমিটি। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি প্রতি ৩৩ শতাংশ জমি থেকে সেচ বাবদ ১৯ কেজি করে ধান সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু দেখা গেলো ধান কর্তন শেষে তিনি প্রতি কেদার জমি থেকে সেচ চার্জ বাবদ সর্ব নিম্ন (উঁচু জমি থেকে) ১ মন এবং তুলনামূলক নিচু জমিতে সেচ দেওয়া বাবদ কৃষকের কাছে থেকে ৩ মন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করেন। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর পক্ষে একই গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন মিয়া উপজেলা সেচ কমিটির কাছে একটি অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত করে কমিটি সত্যতাও পায়।
কমিটির সদস্য সচিব বিএডিসি’র সহকারী প্রকৌশলী এ.এম. রাকিবুল হক কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা সেচ চার্জ ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি দেন। কিন্তু তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি প্রকল্প ম্যানেজার মহিবুর রহমান। উপরন্তু তিনি যাদের কাছে ধান পাওনা রয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা তোলা শুরু করেছেন।