Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুরবানির চামড়া খালে-বিলে ফেলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Icon

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১০:১২ পিএম

কুরবানির চামড়া খালে-বিলে ফেলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জবাই করা কুরবানির পশুর (গরু, মহিষ ও ছাগল) চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ফেলে দেওয়া হয়েছে খালে-বিলে। সময়ের ব্যবধানে পচনধরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব গলিত চামড়া শাখা খাল হয়ে হালদা নদীতে পড়ে। এতে নদীর পানি দূষিত হয়।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

মিঠা পানির রুই জাতীয় (রুই, কাতল মৃগেল ও কালিবাউস) মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে পড়ছে। এতে করে হালদা নদীর পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। যার ফলে হালদা নদীর মা-মাছসহ জীববৈচিত্র্য ওপর মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ছোট বেলছড়ি নামক দুর্গম এলাকার হাসুকপাড়া পাহাড় থেকে মিঠা পানির রুই জাতীয় (রুই, কাতল মৃগেল ও কালিবাউস) মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী উৎপত্তি। এটি মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মধ্যদিয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে।

জোয়ার-ভাটার নদী হালদা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার দীর্ঘ ৪৫-৫০ কিলোমিটারে ছোট-বড় ১৯টি খাল সংযুক্ত রয়েছে। এসব খালে জবাই করা কুরবানির পশুর (গরু, মহিষ ও ছাগল) চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মাটিতে না পুঁতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছুড়ে ফেলা হয়েছে পশুর নাড়িভুঁড়িসহ নানা বর্জ্য। ফলে সময়ের ব্যবধানে ছুড়ে ফেলা এসব পশুর চামড়া ও নাড়িভুঁড়িসহ নানা বর্জ্য পচে গলে শাখা খাল হয়ে পানির সঙ্গে মিশে পতিত হচ্ছে হালদা নদীতে।

স্থানীয়রা বিষয়টি ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে অবগত করলে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে ইউএনও রোসাংগিরী ইউপি চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ইউএনওর নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যানকে ৫-৬ জন শ্রমিক সাড়ে ৩ ঘণ্টা কাজ করার পর প্রায় কয়েক শতাধিক পশুর গলিত চামড়া মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে পশুর পচনধরা গলিত চামড়া হালদা নদীতে পতিত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের একটি দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বিষয়টির সত্যতা পান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর ওই রিসার্চ অফিসার।

মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি মঙ্গলবার নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে একটি মামলা করেছেন বলে জানান।

অন্যদিকে বিষয়টি জানতে পেরে পশুর পচনধরা চামড়া, নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা হালদা নদী থেকে অপসারণের লক্ষ্যে দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে রাউজান উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী। তিনি ৫-৬ জন শ্রমিক দিয়ে নদীর বিভিন্নস্থানে ভাসমান চামড়া, নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা নৌকায় করে তুলে এনে মাটি চাপা দিতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, পশুর চামড়া বা কুরবানির বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। পশুর চামড়া, রক্ত ও নাড়িভুঁড়ি এবং বর্জ্য ইত্যাদি পানিতে পচে অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে, দ্রবীভূত অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, ফলে মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী শ্বাসকষ্টে মারা যায়। এই দূষণকে বলা হয় ইউট্রোফিকেশন, যা নদীর ইকোসিস্টেমের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম